শনিবার   ০১ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ১৭ ১৪৩২   ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১২

ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেটে চার্জশিট, নিরপরাধের কারাভোগ

তরুণ কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২৫  

কুমিল্লার তিতাসে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে মামলা ও চার্জশিট দাখিলের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। তদন্ত কর্মকর্তার জমা দেওয়া ওই চারটি মেডিকেল সার্টিফিকেটই জাল বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে আদালতের ভুল সিদ্ধান্তে নিরপরাধ ব্যক্তির কারাভোগের বিষয়টি এখন আলোচনায়।

 

ঘটনাটি শুরু হয় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দায়ের করা মামলাকে কেন্দ্র করে। বাদীপক্ষ অভিযোগ করে, প্রতিবেশীরা লাঠিসোটা ও লোহার রড দিয়ে মারধর করে গুরুতর আহত করেছে। আদালত বাদীর মেডিকেল সার্টিফিকেট তলব করলে তিতাস থানার এসআই আবুল কাওসার চারটি সার্টিফিকেট আদালতে দাখিল করেন। পরে এসব সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগের সত্যতা উল্লেখ করে চার্জশিট দাখিল করেন।

 

কিন্তু ঢামেক কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে জানায়, ওই চারটি মেডিকেল সার্টিফিকেট হাসপাতাল থেকে ইস্যু করা হয়নি। এমনকি যে চিকিৎসকদের নামে সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে, তাদের কেউই ঢামেকে কর্মরত নন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নিশ্চিত করা হয়েছে—এগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া।

 

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা বাদীপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ভুয়া সার্টিফিকেট আদালতে জমা দিয়েছেন। যদিও এসআই আবুল কাওসার অনৈতিক কোনো সুবিধা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাদিম মাহমুদ বলেন, “একজন তদন্ত কর্মকর্তা যদি ভুয়া প্রমাণ আদালতে দাখিল করেন, তাহলে তিনি নিজেই অপরাধী হয়ে যান। এ ঘটনায় বিভাগীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এভাবে ন্যায়বিচারকে ব্যাহত করতে না পারে।”

 

তিতাস থানার ওসি মো. খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, “ঘটনাটি আদালতের নির্দেশে পুনঃতদন্তাধীন রয়েছে। পরিদর্শক (তদন্ত) বিষয়টি দেখছেন।” পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মফিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, “আসামিপক্ষের অভিযোগের পর আদালত পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমি নিজে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে যাচাই করব।”

 

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাদী দাবি করলেও সংশ্লিষ্ট তারিখে ঢামেক হাসপাতালে তার ভর্তি হওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। এমনকি মোবাইল ফোনের অবস্থান বিশ্লেষণেও দেখা গেছে, অভিযুক্ত কয়েকজন সেদিন কুমিল্লায় উপস্থিতই ছিলেন না। সবমিলিয়ে ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেটের কারণে নিরপরাধদের শাস্তি পাওয়ার এ ঘটনা এখন পুলিশি তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে।
 

 

এই বিভাগের আরো খবর