শনিবার   ০১ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ১৭ ১৪৩২   ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১০

জুলাই সনদে স্বাক্ষরের দ্বারপ্রান্তে এনসিপি, গণভোটে ইতিবাচক মনোভাব

তরুণ কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২৫  

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাম্প্রতিক সুপারিশকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি মনে করে, সুপারিশে ‘সরকার’ শব্দটি ব্যবহৃত হলেও সনদের আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করা উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে। এনসিপি নেতারা বলছেন, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ কার্যকর না রাখা এবং ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোটের মাধ্যমে গণভোটের বিধান রাখাকে তারা ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাদের মতে, এটি জনগণের সরাসরি মতামত প্রতিফলনের সুযোগ তৈরি করবে।

 

জানা গেছে, এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে আগামী দুই-এক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এনসিপি নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা হলে তা দলীয় প্রভাবমুক্ত থাকবে এবং জনগণের মতামতই প্রাধান্য পাবে। তবে তারা স্পষ্ট করে বলছেন, আদেশ জারির ক্ষমতা প্রধান উপদেষ্টার হাতে থাকা উচিত।

 

দলটির এক শীর্ষ নেতা বলেন,

 “আমরা আশা করছি, জুলাই জাতীয় সনদের আদেশ প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেই জারি হবে। এতে প্রক্রিয়াটি আরও গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হবে।”

 

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন,

“নোট অব ডিসেন্ট কার্যকর না রাখা এবং গণভোটে ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের বিধান রাখাটা আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। স্বাক্ষরের বিষয়টি নিয়ে আমরা আরও পর্যালোচনা করছি, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব।”

 

দলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন,

 “জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কিছু ভাষাগত অস্পষ্টতা রয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা শেষে দু-এক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সুপারিশে ‘সরকার’ উল্লেখ থাকলেও আদেশ জারি করতে হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে।”

 

দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, জুলাই সনদের সাংবিধানিক আদেশ বা নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে। মঙ্গলবার রাজশাহীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন,

 

 “সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত স্বাক্ষর কেবল আনুষ্ঠানিকতা। আমরা সংস্কার চাই এবং স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত আছি। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হলে আমরা স্বাক্ষর করব।”

 

তিনি আরও বলেন,

 “নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর যেমন জনগণকে প্রতারণা করা হয়েছিল, জুলাই সনদের ক্ষেত্রে তেমন কিছু আমরা হতে দিতে চাই না।”

এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এনসিপি সাংগঠনিক প্রস্তুতি জোরদার করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমন্বয় সভা, পুনর্গঠন এবং সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। এরই মধ্যে রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সংগঠন গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দলটি।

 

দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন,

 “জুলাই সনদের বিষয়টি দ্রুত সুরাহা হোক, সেটাই আমরা চাই। আদেশের বিষয়টি স্পষ্ট হলে শিগগির স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নেব। এরপর নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোযোগ দেব। নভেম্বরের মধ্যে অন্তত ১০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে।”

 

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান,

“আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে, খুব শিগগিরই প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করা হবে।”

 

কোনো রাজনৈতিক জোটে যাওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন,

“যদি জোটে যাই, তা অবশ্যই নীতিগত জায়গা থেকে হবে। জুলাই সনদ আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এমন কোনো শক্তির সঙ্গে জোটে যাব না, যারা সংস্কারের বিপক্ষে বা ইতিহাসের দায়ভার বহন করে।”

 

দলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন,

 “এনসিপি এখনো কোনো নির্বাচনী জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদি যায়, তা হবে এমন শক্তির সঙ্গে যারা জুলাই সনদের সংস্কার বাস্তবায়ন, বিচার প্রতিষ্ঠা, শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনে কাজ করবে এবং সামগ্রিকভাবে আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরোধী অবস্থান নেবে।”
 

এই বিভাগের আরো খবর