মঙ্গলবার   ২৮ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ১৩ ১৪৩২   ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৬

ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ!

ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২৫  

ফেনী সদর উপজেলার ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয় (ইআইআইএন: ১০৬৫৮৩) এ দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সম্প্রতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইউসুফ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম, সরকারি সম্পদের অপব্যবহার এবং ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সচেতন নাগরিক মাহমুদুর রহমান এই অভিযোগ দাখিল করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ। তিনি জানান, বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডে এমন বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে যা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা ও নিরাপত্তাকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।


অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের মাঠে অবৈধভাবে পাকা রাস্তা নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রয়াত নুরুল আলমের প্রতিষ্ঠিত নুরানী ডাইং এন্ড সোয়েটার লিমিটেড থেকে মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করে এই রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের মাঠ মূলত শিক্ষার্থীদের খেলার ও অন্যান্য শিক্ষামূলক কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ, কিন্তু প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে এটি বাজারের রাস্তার মতো ব্যবহার করা হচ্ছে।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এটি একটি স্পষ্ট সরকারি সম্পদের অপব্যবহার। বিদ্যালয়ের মাঠে পাকা রাস্তা নির্মাণের ফলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ খেলার জায়গা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া এটি স্থানীয় প্রশাসন এবং শিক্ষা বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে যে, সরকারি সম্পদের ব্যবহার সঠিকভাবে হচ্ছে কি না।

এছাড়া অভিযোগে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের একটি ভবন একটি ব্যক্তিগত পরিবারের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য নির্মিত সরকারি সম্পদকে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা শিক্ষাজগতের জন্য অগ্রহণযোগ্য। অভিভাবকরা জানান, শিক্ষার্থীরা কখনও কখনও বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত জায়গা না পেয়ে সমস্যায় পড়ছে।

এই পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু শিক্ষার অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে। অভিভাবক ও স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদ সরকারি উদ্দেশ্য পূরণে ব্যবহার করা না হয়ে ব্যক্তি বিশেষের সুবিধার জন্য ব্যবহার করা কেমন ন্যায্য।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ হলো কম্পিউটার ল্যাব অপারেটরের নিয়োগের সময় ১,২০,০০০ টাকা ঘুষ গ্রহণ করা। অভিযোগে বলা হয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হয়নি এবং যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের মতে, এমন আচরণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতির প্রতি নেতিবাচক বার্তা দেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ্য ও ন্যায্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগের চর্চা না থাকলে দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষা মান ও প্রতিষ্ঠান সুনামের ক্ষতি হয়।

বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ও গেইট নির্মাণেও অর্থের যথাযথ ব্যবহার না করে দুর্নীতি করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রাচীর ও গেইট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং খামখেয়ালী কাজের কারণে এটি যথাযথ সুরক্ষা দিতে পারছে না। শিক্ষক ও অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, বিদ্যালয়ের এমন অব্যবস্থাপনা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে। তারা দাবি করেছেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে দ্রুত তদন্ত করা হোক।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো বিদ্যালয়ের নতুন চারতলা ভবন নির্মাণ। অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহার করেছেন। ফলে ভবনের স্থায়িত্ব কমে গেছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এই ভবনে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী এবং দুর্নীতি মূলক কর্মকাণ্ড ভবনের নিরাপত্তা সরাসরি হুমকির মুখে ফেলেছে। বিশেষ করে ভারী বর্ষা বা ঝড়ের সময় শিক্ষার্থীদের জীবন বিপদে পড়তে পারে। শিক্ষকদের মতে, বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি দফতরের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়নি। এতে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মাহমুদুর রহমান, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, এই অনিয়মের বিষয়টি দুদককে অবহিত করেছেন। তিনি জানান, তিনি শুধু অভিযোগ দাখিল করেই থেমে থাকবেন না। তিনি আশা করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন দ্রুত তদন্ত করবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি আরও বলেন, “আমি একজন নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব মনে করি যে, শিশুদের নিরাপত্তা এবং সরকারি সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রধান শিক্ষকের কর্মকাণ্ড তা উল্টে দিয়েছে।”

একাধিক অভিভাবক জানান, “আমরা চাই বিদ্যালয়টি যেন শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও শিক্ষণীয় পরিবেশ নিশ্চিত করে। প্রধান শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ড একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।” স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেছেন যে, দুদক দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তারা দাবি করেছেন, বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ, নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য সরকারি সম্পদের ব্যবহার নিয়ে অজানা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। 

ফেনীর শিক্ষাব্যবস্থা এবং সরকারি সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষাবিদ, অভিভাবক এবং সচেতন নাগরিকরা আশা করছেন যে, স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগ এই অভিযোগের যথাযথ তদন্ত করবে। দুদক বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তদন্তে উভয় পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হবে এবং প্রয়োজন হলে বিদ্যালয়ের সকল নথি ও আর্থিক লেনদেন পরীক্ষা করা হবে। অভিযোগের বিষয়টি যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে প্রধান শিক্ষক মোঃ ইউসুফ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে ভবিষ্যতে সরকারি সম্পদের অপব্যবহার ও দুর্নীতির ঘটনা প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আরও সুরক্ষিত হবে।

এই বিভাগের আরো খবর