সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৮ ১৪৩২   ০২ রজব ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১২

জনবল সংকট ও নিরাপত্তাহীনতায় ধুঁকছে বগুড়ার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল

ওয়াফিক শিপলু

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫  

বগুড়া সদরের নিশিন্দারা এলাকায় অবস্থিত ২০ শয্যাবিশিষ্ট বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে চরম জনবল সংকট ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। চারপাশে জঙ্গলঘেরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে নিয়মিত বহিরাগতদের মাদকসেবনের কারণে একদিকে চিকিৎসা পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে রোগী ও সেবাদানকারীরা পড়ছেন মারাত্মক ঝুঁকিতে।

হাসপাতালের মূল ফটকে কোনো নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় দিনের বড় একটি সময় এবং সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বহিরাগতরা অবাধে প্রবেশ করে মাদকসেবন করছে। কর্তব্যরত কর্মীরা বাধা দিতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে আতঙ্ক নিয়েই দায়িত্ব পালন করছেন চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীরা। নারী চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি।দুই প্রান্তে ইনডোর–আউটডোর বক্ষব্যাধি ক্লিনিক (আউটডোর) ও হাসপাতাল (ইনডোর) দুই স্থানে অবস্থিত হওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। শহরের দক্ষিণে ঠনঠনিয়ায় অবস্থিত ক্লিনিকে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সেখানে ভর্তি অনুমতিপত্র নেওয়ার পর রোগীকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে উপশহরের নিশিন্দারায় হাসপাতালে যেতে হয়। আবার রিপোর্ট দেখানো কিংবা ছাড়পত্র নিতেও রোগীদের একই দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়।স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিধি অনুযায়ী একটি হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর একই স্থানে থাকার কথা থাকলেও বগুড়ায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যতিক্রমী এই ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। এতে বিশেষ করে যক্ষা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।৬৪ বছরে বাড়েনি জনবল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৬০ সালে নিশিন্দারা এলাকায় ৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে ১৯৬১ সালে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। ৬৪ বছর পার হলেও হাসপাতালটির জনবল কাঠামোয় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি। বর্তমানে এখানে যক্ষা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৫ জন রোগী ভর্তি হন।হাসপাতালে মোট ২১টি অনুমোদিত পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১১ জন। দু’জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কোনো স্থায়ী চিকিৎসক নেই। একজন মেডিকেল অফিসার ডা. আশরেফা আক্তার ডিপুটেশনে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ওয়ার্ড বয়, বাবুর্চি ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর একাধিক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।অব্যবহৃত এমডিআর ভবন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে প্রায় ১৩ বছর আগে নির্মিত এমডিআর (ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি) ভবনটি এখনো হস্তান্তর না হওয়ায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনটির চারপাশে জঙ্গল ও আগাছা জন্মেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবনটি চালু হলে জটিল যক্ষা রোগীদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো।আতঙ্কে সেবাদানকারীরা হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জনবল সংকটের পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতা এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। বহিরাগতরা নিয়মিত মাদকসেবন করে এবং বাধা দিলে হুমকি দেয়। এতে কর্মরতদের মধ্যে সব সময় ভয় কাজ করে।মেডিকেল অফিসার ডা. আশরেফা আক্তার বলেন, প্রশাসনিক নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না হলে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। বিশেষ করে রাতের বেলায় নারী নার্সদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

এলাকাবাসী ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের দাবি, অবিলম্বে হাসপাতালে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ, শূন্য পদ পূরণ, ইনডোর ও আউটডোর এক স্থানে স্থানান্তর এবং এমডিআর ভবন চালুর মাধ্যমে বগুড়ার বক্ষব্যাধি হাসপাতালকে কার্যকর স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে রূপান্তর করা হোক।

এই বিভাগের আরো খবর