মঙ্গলবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১ ১৪৩২   ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৪৪

নামাজে ইমামের ভুল হলে কী করবেন?

প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০১৯  

প্রশ্ন: ইমামের ভুল হলে সাধারণত আমরা আল্লাহু আকবার বলে ভুল ধরিয়ে দিই। আসলে লোকমা দেয়ার (ভুল ধরিয়ে দেয়ার) সঠিক পদ্ধতি কী জানতে চাই।

উত্তর: ইমামের ভুল হলে আল্লাহু আকবার নয়, বরং সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেয়া সুন্নাহ। কেননা একাধিক হাদিসে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

সাহল ইবনু সা‘দ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, আমর ইবনু আওফ গোত্রের কিছু লোকের মধ্যে সামান্য বিবাদ ছিল। তাই নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবিদের একটি জামাত নিয়ে তাদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য সেখানে গেলেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে গেল। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে এসে পৌঁছেননি। বিলাল (রা.) সালাতের আজান দিলেন, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও এসে পৌঁছেননি।

পরে বিলাল (রা.) আবু বকর (রা.)-এর কাছে এসে বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাতেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি সালাতে লোকদের ইমামতি করবেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি ইচ্ছা কর।'

তারপর বিলাল (রা.) সালাতের ইকামত বললেন, আর আবু বকর (রা.) এগিয়ে গেলেন। পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম করে প্রথম কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকজন হাততালি দিতে শুরু করল এবং তা অধিক মাত্রায় দিতে লাগলেন। আবু বকর (রা.) সালাত অবস্থায় কোনো দিকে তাকাতেন না, কিন্তু (হাততালির কারণে) তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পেছনে দাঁড়িয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হাতের ইশারায় আগের মতো সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিলেন। আবু বকর (রা.) তাঁর দু’হাত উপরে তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পেছনে ফিরে এসে কাতারে শামিল হলেন।

তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে বেড়ে লোকদের ইমামত করলেন এবং সালাত সমাপ্ত করে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, ‘হে লোক সকল! সালাত অবস্থায় তোমাদের কিছু ঘটলে তোমরা হাততালি দিতে শুরু কর। অথচ হাততালি দেওয়া নারীদের কাজ। সালাত অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন “সুবহানাল্লাহ” বলে। কেননা এটা শুনলে তার দিকে দৃষ্টিপাত না করে পারত না।

‘হে আবু বকর! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন সালাত আদায় করাতে তোমার কিসের বাধা ছিল?’ তিনি বললেন, ‘আবু কুহাফার পুত্রের জন্য শোভা পায় না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে ইমামতি করা। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১২১৮, মুসলিম, ৪২১)

এই দীর্ঘ হাদিসে “সালাত অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন “সুবহানাল্লাহ” বলে” অংশটি প্রমাণ বহন করে যে, লোকমা দেয়ার সুন্নাহ পদ্ধতি হলো সুবহানাল্লাহ বলা।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজে) দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। তখন সাহাবায়ে কেরাম সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দিয়েছেন। (সুনানে নাসায়ী ১/১৩২)

সুতরাং কোনো ভুলের ব্যাপারে ইমামকে সতর্ক করতে চাইলে আল্লাহু আকবার না বলে সুবহানাল্লাহ বলা উচিত।

উত্তর দিয়েছেন: মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব, সহকারী মুফতি, জামিয়া রহমানিয়া সওতুল হেরা, টঙ্গী, গাজীপুর।