শুক্রবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৩   অগ্রাহায়ণ ১৬ ১৪৩০   ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৬৭

শাল্লায় ভুয়া প্রকল্পের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ

শাল্লা(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২৩  

সুনামগঞ্জের শাল্লায় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

এমনকি ভুয়া প্রকল্পের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে শাল্লা এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। তবে ঠিকাদারের অভিযোগ প্রকল্পের কাজ না করা সত্তে¡ও উপ-সহকারি প্রকৌশলী উনার ব্যাংক একাউন্টে ভুয়া প্রকল্পের বিলের টাকা পরিশোধ করেছেন। এমনকি ভয়ভীতি দেখিয়ে আবার সেই টাকা প্রকৌশলী নিজেই ঠিকাদারের কাছ থেকে চেকের মাধ্যমে অন্য ব্যাংক একাউন্টে এই টাকা ট্রান্সফার করেন। শুধু তাই নয়, গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামোসহ, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে ঠিকাদারেরা অনিয়ম করেন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায়। এক প্রকল্পের টাকা অন্য প্রকল্পে সরিয়ে আবার প্রকল্প ছাড়পত্রকে নয়ছয় করে চলছে এসব কাজ। সচেতন মহলের দাবী এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান দীর্ঘ সাত বছর ধরে একই কর্মস্থলে থাকায় ভুয়া প্রকল্পে টাকা আত্মসাৎ ও নানা অনিয়ম দুর্র্নীতি করে আসছেন। 

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে শাল্লা এলজিইডির বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্পে শতভাগ কাজ দেখিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ২৬ নং সিরিয়ালে উল্লেখ করা হয়েছে শাল্লা উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসে আর্সেনিক পরীক্ষার সামগ্রী সরবরাহ বাবদ দুই লাখ টাকা। সেখানেও শতভাগ কাজ দেখানো হয়েছে। অথচ জনস্বাস্থ্য অফিসের কর্মকর্তা বলছেন ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে উনার অফিসের আর্সেনিক পরীক্ষার সরবরাহ বাবদ দুই লাখ টাকার কোনো বরাদ্দ পাননি। এটাও ভুয়া প্রকল্প দেখানো হয়েছে। জনস্বাস্থ্য অফিসের প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম জানান, আমাদেরতো কোনো স্বাক্ষর লাগেনি তাই যে যেভাবে পারে প্রকল্প তৈরি করে টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রকল্প তালিকায় আরো দেখা গেছে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের দরিদ্র পরিবারের মাঝে রিং¯øাব বিতরণ বাবদ ৮ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ তালিকার ১৮নং সিরিয়ালে শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন দরিদ্র পরিবারের রিং¯øাব বিতরণ বাবদ দুই লাখ টাকার আরেকটি ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টাকা উত্তোলণ করা হয়েছে। শুধু এখানেই থেমে নয়, একই অর্থ বছরে দিয়া এন্টারপ্রাইজের নামে ২০২২সালের ২৮ জুন একটি প্রকল্প দেখিয়ে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮২৩ টাকা ঠিকাদারের ব্যাংক একাউন্টে পরিশোধ করা হয়েছে। পরে ৫জুলাই এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে (সিএ ৫৯০৯৯৩০৫৬১৭) নং চেকের পাতায় ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আরেকটি ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার রতন চন্দ্র তালুকদার বলেন দিয়া এন্টারপ্রাইজের নামে যে প্রকল্পটি দেখিয়ে বিলের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে সেটি ভুয়া প্রকল্প। এই প্রকল্পে কোনো কাজ করেননি তিনি। তিনি আরো জানান, এই কাজের বিষয়ে কিছুই জানেনা। ২০২২ সালের ২৮ জুন শাল্লা এলজিইডির উপসহকারি প্রকৌশলী নুরুজ্জামান মোবাইল ফোনে কল করে উনাকে ডেকে নেন। পরে এই প্রকৌশলী রতন তালুকদারের একাউন্টে কিছু বিলের টাকা পরিশোধ করেছেন বলে জানান। কিসের টাকা জানতে চাইলে তিনি জানান অফিসের কাজ করা হবে। তাই সেই টাকা তুলে দেওয়ার জন্য উনাকে চাপ প্রয়োগ করেন। উনি কিছুতেই রাজি না হলে অনেক ভয়ভীতি দেখান এই উপ-সহকারি প্রকৌশলী। পরে প্রকৌশলীর ভয়ে একই বছরের ৫ জুলাই ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকার স্বাক্ষরিত একটি চেক দেন তিনি। পরে এই চেকের মাধ্যমে শাল্লা সোনালী ব্যাংক শাখায় ০১০২১৯৬৬নং একাউন্টে ভুয়া প্রকল্পের টাকা ট্রান্সফার করেন প্রকৌশলীর এক বিশ^স্থ লোক। 

এই বিষয়ে শাল্লা এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামানের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ঠিকাদার কাজ করেছে বলেই বিল পেয়েছে। তবে অন্য একাউন্টে ট্রান্সফারের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানিনা যাচাই করে সংবাদ লিখার পরামর্শ দেন তিনি। এবিষয়ে তৎকালীন দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী মো. হানিফ মিয়া জানান, আমি ২০২২ সালের মার্চ মাসে বদলী হয়েছি। আমি থাকাবস্থায় এখানে কোনো ভুয়া বিল দেয়া হয়নি। পরে কি হয়েছে সেবিষয়ে আমি বলতে পারবো না। এগুলোর বিষয়ে নুরুজ্জামান সাহেব জানেন।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেবের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এগুলোর বিষয়ে আমার জানা নেই। তালিকা দেখে প্রকল্পের বিষয়ে বলতে হবে।

সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম জানান, ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বিল দেয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।

এই বিভাগের আরো খবর