বৃহস্পতিবার   ১৪ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ৩০ ১৪৩২   ১৯ সফর ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৫

ভোটের আগেই বাস্তবায়ন হতে পারে জুলাই সনদ

 অনলাইন ডেস্ক 

প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২৫  

আগামী নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন হতে পারে ‘জুলাই সনদ’। এর বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কারগুলো ভোটের আগেই কার্যকর হবে। অঙ্গীকারনামায় এই শর্ত রেখে সনদের খসড়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে-বিদ্যমান আইন, আদালতের রায়ের ওপর প্রাধান্য পাবে সনদ। সংবিধানের মতো সনদেরও ব্যাখ্যা দেওয়ার এখতিয়ার থাকবে সুপ্রিমকোর্টের। শুক্রবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এই খসড়া পাঠানো হতে পারে। এরপর সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে ঐকমত্য কমিশন। এ লক্ষ্যে ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরও ১ মাস বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করেছে সরকার। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হবে। 

এদিকে, যেসব বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা এখনই বাস্তবায়ন চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল। আর বিএনপি ও সমমনা দলগুলো চায় নির্বাচিত সরকার পরবর্তী ২ বছরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবে। বিষয়টি সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এক্ষেত্রে কয়েকটি মতামত উঠে এসেছে। এর মধ্যে আছে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন, জুলাই সনদকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে সুপ্রিমকোর্টের মতামত গ্রহণ (রেফারেন্স) এবং বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ বিকল্প কোনো ব্যবস্থা। 

জানা গেছে, জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে ২০ মার্চ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৬৭টি বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। দুই পর্বের আলোচনায় ৮২টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হয়েছে জুলাই সনদ। রাজনৈতিক দলগুলো সই করার মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পাবে জুলাই সনদ।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্বের আলোচনায় ১৬৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টিতে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে ২০টি মৌলিক বিষয়ের মধ্যে ১১টিতে সব দলের সমর্থন এবং ৯টিতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিভিন্ন দল। যেসব মৌলিক প্রস্তাবে সম্মিলিতভাবে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো হলো-১. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। ২. নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, ৩. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান, ৪. বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ, (ক) সুপ্রিমকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, (খ) উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণ। ৫. জরুরি অবস্থা ঘোষণা, ৬. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, ৭. সংবিধান সংশোধন, ৮. প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, ৯. নির্বাচন কমিশন গঠন, ১০. পুলিশ কমিশন গঠন, ১১. নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ-সম্পর্কিত প্রস্তাব। এছাড়া বাকি ৯টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ (ভিন্নমত) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো-১. সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধন, ২. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, ৩. সরকারি কর্মকমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান। ৪. সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব (সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্বাচন পদ্ধতি ইত্যাদি); ৫. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট (উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি), ৬. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, ৭. তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ৮. রাষ্ট্রের মূলনীতি, ৯. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব [অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)]। তবে এসব প্রস্তাবে কোন কোন দলের ভিন্নমত রয়েছে সনদে তার উল্লেখ থাকবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ শুরু করে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো কপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এরপর ৫ মার্চ পুলিশ সংস্কার কমিশন বাদে পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৫টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এই মতামতের ভিত্তিতেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক হয়। 

সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা আছে। জুলাই সনদের খসড়ায় বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার দুই বছরের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি একমত। তবে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) আরও কিছু দলের আপত্তি আছে। তারা মনে করে, শুধু অঙ্গীকার থাকলে হবে না; জুলাই সনদকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিএনপি তার অবস্থান থেকে কিছুটা ছাড় দিতে রাজি আছে। এ ব্যাপারে তারা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসতে রাজি। এদিকে বুধবার এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান করতে হবে। তারপর এর আলোকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। 

এনসিপির আহ্বায়ক মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, জুলাই সনদের ক্ষেত্রে সরকারকে একবিন্দুও ছাড় দেবেন না তারা। তিনি বলেন, ‘গত এক বছর ছাড় দিয়েছি। জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি। জুলাই সনদে কোনো ছাড় হবে না। এক পার্সেন্ট ছাড়ও জুলাই সনদে দেওয়া হবে না।’

এই বিভাগের আরো খবর