বৃহস্পতিবার   ২৩ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ৮ ১৪৩২   ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলতে কে কী বুঝছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৫  

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট বিএনপি। দলটি মনে করছে, একটি  ‘বিশেষ’  দলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের সমর্থিত ব্যক্তিদের পদায়ন, নিয়োগ ও রদবদলে ভূমিকা রেখেছেন ওই উপদেষ্টারা। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ওইসব উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেওয়া না হলে, সরকারকে নিরপেক্ষ করতে না পারলে আগামী নির্বাচনে তাদের জন্য জটিল পরিস্থিতি তৈরি করবে।

 

মূলত এ কারণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।


গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতীয় সংসদ অনুষ্ঠানকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য এই মুহূর্ত থেকে যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) আদলে নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশের নিয়োগের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যেসব পদে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে বা যাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে, সেই ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে এসেছি।’

 

বিএনপির পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ সামনে আনার পর থেকে তা নিয়ে রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও। তিনি বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি, অন্তর্বর্তী সরকারকেই তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকায় চেয়েছে।

 

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, বিএনপি নেতারা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার যেন তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা পালন করে, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। আমরা তাদের বলেছি, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা এমনকি এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন– এখন থেকে প্রশাসন বা অন্য কোনো জায়গায় বড় বড় বদলির ব্যাপারটা প্রধান উপদেষ্টা নিজে দেখবেন।


তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় শুধু দৈনন্দিন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে এবং নীতিনির্ধারণী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকে, যাতে তার কার্যাবলি নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রভাব না ফেলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মূলত একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষভাবে কাজ করে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সাধারণত উপদেষ্টা পরিষদ অনেকটা ছোট আকারে হয়।


গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এক অনুষ্ঠানে বলেন, একটি সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে একটি ভালো পরিবর্তন চাই। কিছু লোকের কার্যকলাপের মাধ্যমে তা বিঘ্নিত হতে পারে। এ জন্য বলি, পুরোপুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেজাজে (মুড) চলে যান। যাদের নিয়ে বিতর্ক আছে সরকারের ভেতরে-বাইরে, যাদের নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করার সুযোগ আছে, তাদের রেখে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা যাবে না। 

 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কথা বলেছে জামায়াতে ইসলামীও। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে এখনও সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষায় আছে।

উচ্চ আদালতের রায়ে কোনো ব্যত্যয় না হলে অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটিতে দুরভিসন্ধি দেখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টা কিন্তু জুলাই সনদের আওতাধীন। সে বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় গঠিত হবে। সেখানে নোট অব ডিসেন্টের (ভিন্নমত) বিষয়টা আছে।

ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার জুলাই সনদে আসবে, গণভোটের পরই এ বিষয়ে আসলে চূড়ান্ত হওয়া সম্ভব। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যাওয়ার কোনো ধরনের সুযোগ নেই। ফলে এই কথা যদি কেউ বলে থাকে, তাদের কোনো ধরনের দুরভিসন্ধি রয়েছে।’

 

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গতকাল সমকালকে বলেন, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে তারা এই সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যেতে বলেছেন। বিশেষ করে প্রশাসনে নিয়োগ, রদবদল, পদায়নে যাতে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি না হয়, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়, সে জন্যই তারা এ ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন। 

 

এই বিভাগের আরো খবর