মঙ্গলবার   ২১ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ৬ ১৪৩২   ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৬৫

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতায় স্থবির পৌরসেবা, বকেয়া বেতন ১২৫০

বিশেষ প্রতিনিধি : 

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২৫  

বাংলাদেশের ৩৩০টি পৌরসভার প্রায় ১২ হাজার নিয়মিত ও ১ হাজার ১০০ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে চরম মানবেতর অবস্থায় দিন যাপন করছেন। এই বকেয়া বেতন-ভাতার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।

বিগত ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রেরণ করলেও, অদ্যাবধি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এর ফলে দেশের বহু পৌরসভায় ২ থেকে ৬৫ মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অবসরকালীন পাওনা না পেয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

পৌর কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি এ কে এম নূরুজ্জামান বলেন,“পৌরসভার কর্মচারীরা দিনরাত নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন—সড়ক পরিষ্কার, ড্রেন পরিষ্কার, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদ প্রদান, বেওয়ারিশ লাশ দাফন, কোরবানির বর্জ্য অপসারণ, রাস্তায় মরা প্রাণী সরানোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অথচ মাস শেষে তাদের বেতন নেই, চাকরি শেষে পেনশন নেই—এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও অমানবিক।”

বর্তমানে জনপ্রতিনিধিবিহীন পৌরসভাগুলোর প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনেও পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। অনেক পৌরসভায় প্রশাসকগণ নিজস্ব তহবিল থেকে সীমিত পরিমাণে বকেয়া পরিশোধের চেষ্টা করছেন, যার জন্য ফেডারেশনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।

তবে সমস্যা শুধু বেতন বকেয়া নয়, গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি পরিপত্র জারি করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বদলি ও বিভাগীয় মামলা পরিচালনার ক্ষমতা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালকদের হাতে ন্যস্ত করে। এর ফলে অনেক জেলায় অফিস সহায়ক, বিদ্যুৎ মিস্ত্রি, রোড রোলার চালকসহ নানা পদে কর্মরত কর্মচারীদের নির্বিচারে বদলি করা হচ্ছে, যেটি বর্তমানে বেতনহীন কর্মীদের জন্য আরেকটি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে, একদিকে যেখানে বেতন-ভাতা পরিশোধে পৌরসভাগুলো অক্ষম, সেখানে নতুন জনবল নিয়োগ এবং কর্মকর্তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, যা কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করছে।

পৌর কর্মচারী ফেডারেশন বলছে, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে লিখিতভাবে দাবি জানিয়ে আসছি, আন্দোলনের পথে না গিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাইছি। অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন রাস্তা অবরোধ করে দাবি আদায় করছে, অথচ আমরা শান্তিপূর্ণ থাকার পরও উপেক্ষিত হচ্ছি।”

ফেডারেশন আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়,“পৌর কর্মচারীদের আন্দোলনের জন্য রাস্তায় নামার দরকার নেই। যদি কর্মচারীরা শুধু ঘরে বসে থাকেন, তাহলে নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে যাবে ময়লা অপসারণ হবে না, পানি সরবরাহ বন্ধ হবে, বিদ্যুৎ লাইন অচল হবে, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ সব কার্যক্রম অচল হয়ে পড়বে। তখন যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে।

তারা অবিলম্বে অর্থ মন্ত্রণালয়কে বকেয়া বেতন পরিশোধে জরুরি বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানান এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এই বিভাগের আরো খবর