বুধবার   ২২ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ৭ ১৪৩২   ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৪

বিএনপির প্রার্থী যাচাই-বাছাই চলছে, বিবেচনায় যেসব বিষয়

মোঃ নাজমুল হুদা

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২৫  

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ অবস্থায় দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি নভেম্বরের শুরুতে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের লক্ষ্যে কাজ করছে। এরই মধ্যে একাধিক জরিপ ও বিভিন্ন পর্যায়ে প্রার্থীদের খোঁজখবর নিচ্ছে বিএনপির একাধিক টিম। যেসব এলাকায় কোন্দল আছে তা মেটানোর জন্যও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে।


প্রার্থী বিবেচনায় দলের দুঃসময়ে কে কতটুকু অবদান রেখেছেন, কে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন বা এলাকার মানুষ কাকে কতখানি গ্রহণ করেছে, তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। এ ছাড়া এলাকায় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যেতা ও জনপ্রিয়তাও কার কতটুকু তাও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করছেন সিনিয়র নেতারা।


বিএনপি চায়, দল যাঁকেই প্রার্থী করুক না কেন তাঁর জন্যই যেন সবাই একযোগে কাজ করে।


গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে নির্বাচন ও প্রার্থী তালিকার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন।


বৈঠকে একক প্রার্থীর জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তারেক রহমান।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি আসনেই তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই যোগ্য। তাঁরা সবাই নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন। প্রায় প্রতিটি আসনেই পাঁচ-ছয়জন থেকে শুরু করে ১০-১২ জন পর্যন্ত প্রার্থী কাজ করছেন।


বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এই মুহূর্তে যদি সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা যায়, তাহলে বিএনপির সব নেতাকর্মীও একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। তফসিল ঘোষণার এখনো দেড় মাসেরও বেশি সময় রয়েছে। যদি নির্বাচনী মাঠে থাকা কোনো নেতার মনে ক্ষোভ বা দুঃখ থাকে, তাহলে এই দেড় মাসের মধ্যে তা মেটানো সম্ভব হবে। একটি নির্বাচনী আসনের সব নেতাই দলের নির্দেশনা অনুসারে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন। কে প্রার্থী তার চেয়েও বড় কথা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করা।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। এখনো কোনো আসনে ১০-১২ জন সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। কিন্তু আমাদের তো একজনকে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য সবাইকে একসঙ্গে খাটতে হবে। সবাইকে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে হবে। দল যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে বঞ্চিতদের নানাভাবে মূল্যায়ন করার সুযোগ থাকবে। একটি দল যখন আন্দোলনে থাকে ওই আন্দোলনের মাধ্যমেই প্রার্থী বাছাই হয়ে যায়। কে কতটুকু অবদান রেখেছেন, কে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন বা এলাকার মানুষ কাকে কতখানি গ্রহণ করেছে, তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। সে কাজগুলো চলছে।’


স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা ঘোষণার ব্যাপারে আলোচনা হয়। আর সেটা সম্ভব না হলে নভেম্বরের শুরুতেই যাতে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়, সে ব্যাপারে তাগিদ জানানো হয়। বিএনপির দুঃসময়ে যেসব নেতা আন্দোলনের মাঠে ছিলেন বা যাঁরা এলাকায় জনপ্রিয় তাঁরা যাতে প্রার্থী হন সে ব্যাপারেও আলোচনা হয়। তবে এই সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা মানেই যে তাঁরা চূড়ান্ত প্রার্থী হবেন তা নিশ্চিত নয়। মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত এই প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে বলে আলোচনা হয়।


বিএনপি নেতারা বলেন, এখন যদি একক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়, তাহলে তফসিলের আগ পর্যন্ত আগামী দেড় মাসে তাঁদের জনপ্রিয়তাও যাচাই করার সুযোগ থাকবে। যদি কোনো নেতা এলাকার মানুষের জনপ্রিয়তা অর্জন করতে না পারে তাহলে সেই আসনে দলের ভিন্ন চিন্তা করারও সুযোগ থাকবে।


স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির জোটসঙ্গী বা সমমনা দলের ব্যাপারেও আলোচনা হয়। এরই মধ্যে জোট বা সমমনা দলের পক্ষ থেকে ২৪৪টি আসনের তালিকা বিভিন্নভাবে বিএনপির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপি নেতারা মনে করেন, জোটের যেসব প্রার্থী নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়, যাঁদের আসন ছাড় দিলে পাস করতে পারবেন, তাঁদেরই যেন আসন ছাড় দেওয়া হয়। বিগত দিনে যাঁরা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন তাঁদের মূল্যায়ন করার পক্ষে বিএনপি। কিন্তু মূল্যায়ন করতে গিয়ে যেন কোনোভাবে আসনটি হাতছাড়া না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার ব্যাপারেও আলোচনা হয়। তবে বিএনপি জোটের প্রার্থীদের জন্য আসন ছাড়বে বলে আলোচনা হয়।


নভেম্বরের শুরুতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের যে তালিকা বিএনপি প্রকাশ করতে যাচ্ছে সেখানে জোটের সব প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হবে কি না সে ব্যাপারে চূড়ান্ত আলোচনা হয়নি। কোনো নেতা বলেছেন প্রাথমিকভাবে শুধু বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করতে। এরপর জোটের নেতাদের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা শেষে ওই আসনগুলো ছাড় দেবে বিএনপি।


বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ‘এলাকায় সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীরাই বিএনপির মনোনয়ন পাবেন। আমাদের একই আসনে অনেক প্রার্থী থাকতে পারে। সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি জনগণের কাছে কার অবস্থান ভালো। এলাকায় কে বেশি জনপ্রিয় সেই খোঁজখবর আমরা নিচ্ছি। এ জন্য তৃণমূল থেকে শুরু করে অনেকের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সিনিয়র নেতারা যার যার দায়িত্ব পালন করছেন।’


বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ৩০০ আসনের মাধ্যমে বিএনপির সব নেতাকে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। তাই যাঁরা চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন না বা যাঁরা জোটের প্রার্থীদের জন্য আসন ছেড়ে দেবেন, তাঁদের যেন ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা হয়। সে ক্ষেত্রে সংরক্ষিত নারী আসন বা টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিত্বও দেওয়া হতে পারে। আবার সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের বসার সুযোগ রয়েছে, সেখানে বঞ্চিত নেতাদের মূল্যায়ন করা হতে পারে।


জানা যায়, যেসব জায়গায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী রয়েছেন, সেসব এলাকার নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বসছেন বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতারা। দল যাঁকেই মনোনয়ন দিক না কেন সেই প্রার্থীর পক্ষেই সব নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।   


গত রবিবার সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী শতাধিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা না করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর তা করলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। এ ছাড়া দল প্রার্থী ঘোষণা করলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন দলের মহাসচিব।

এই বিভাগের আরো খবর