শুক্রবার   ০৩ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ১৭ ১৪৩২   ১০ রবিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৫

চারপাশের নোংরা পরিবেশ, হাসপাতালগুলোই বাড়িয়ে দিয়েছে ডেঙ্গুঝুঁকি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫  

চলতি বছরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রেহাই মিলছে না রাজধানীবাসীর। প্রায় প্রতি মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক দিনে ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে, যা চলতি বছরে দিনের হিসাবে সর্বোচ্চ। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ এতটাই বেড়েছে যে ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

 

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই তিন হাসপাতালের ভেতরে পড়ে আছে ডাবের খোসা। সেগুলোতে জমে থাকা পানি এবং আবর্জনার স্তূপগুলোতে উৎপন্ন হচ্ছে এডিস মশা। এমনকি বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে মশার ঝাঁক রোগীদের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে বহুগুণে

 

 

গতকাল সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই তিন হাসপাতালের ভেতরে পড়ে আছে ডাবের খোসা। সেগুলোতে জমে থাকা পানি এবং আবর্জনার স্তূপগুলোতে উৎপন্ন হচ্ছে এডিস মশা। এমনকি বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে মশার ঝাঁক রোগীদের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে বহুগুণে। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাধারণত হাসপাতালগুলোতে মানুষ সুস্থ হওয়ার আশায় চিকিৎসা নিতে আসে। কিন্তু সেই হাসপাতাল ঘিরে যদি মশার ঝাঁক উড়ে বেড়ায়, তাহলে সুস্থ হওয়ার বদলে নতুন সংক্রমণের ভয় নিয়েই দিন কাটাতে হয়। একদিকে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা ডেঙ্গুর চিকিৎসায় লড়াই চালালেও হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ যদি ডেঙ্গুকে আরও ছড়িয়ে দেয়, তাহলে সেই লড়াই কতটা সফল হবে— এই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

মুগদায় রোগীর চাপ, বাইরে হাঁটু পানি

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একসময় ডেঙ্গু চিকিৎসায় সুনাম কুড়িয়েছিল। তবে, এখন রোগীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে হাসপাতালের গেটে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানি জমে আছে। সেই সঙ্গে ডাব বিক্রেতাদের ফেলে রাখা ডাবের খোসা, পলিথিন ও নানা ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

রাস্তার পাশে বছরের পর বছর পানি জমে থাকে। এর মধ্যে ডাবের খোসা আর ময়লা-আবর্জনা পচে প্রচুর মশা জন্মায়। কিছুদিন পরপরই চিকিৎসক ও নার্সরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে আমরা সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি কখন নিজেরাও আক্রান্ত হয়ে যাইমুগদা হাসপাতালের নার্স (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)

স্থানীয়রা বলছেন, বছরজুড়েই এমন জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। ফলে হাসপাতালের সামনে দাঁড়ালেই মশার ঝাঁক ঘিরে ধরে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা মো. আরাফাত হোসেন নামের এক রোগী বলেন, ‘তিন দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ভেবেছিলাম জ্বর কমেছে। কিন্তু হঠাৎ আবার জ্বর ফিরে আসায় ভয় লাগছে। হাসপাতালের ভেতরেও তো মশা দেখা যায়। এভাবে সুস্থ মানুষও নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে।’

রোগীর স্বজন মারুফ মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিকেল হলেই হাসপাতালের ভেতরে মশার ঝাঁক ঘুরে বেড়ায়। বাইরে হাঁটু পানি, চারপাশে নোংরা পরিবেশ। এমন অবস্থায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব কীভাবে?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স বলেন, রাস্তার পাশে বছরের পর বছর পানি জমে থাকে। এর মধ্যে ডাবের খোসা আর ময়লা-আবর্জনা পচে প্রচুর মশা জন্মায়। কিছুদিন পরপরই চিকিৎসক ও নার্সরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে আমরা সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি কখন নিজেরাও আক্রান্ত হয়ে যাই।’

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের করিডোরেই চিকিৎসা

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে করিডোর ও মেঝেতে শুয়ে থাকা অনেক ডেঙ্গু রোগী। প্রতিদিনই নতুন রোগী ভর্তি হওয়ায় জায়গার অভাবে তাদের এভাবে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তবে, ভেতরের এই দৃশ্য থেকেও হাসপাতালের বাইরের অবস্থা আরও বেশি উদ্বেগজনক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের গেটের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় ডাবের খোসাসহ ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। এছাড়া, হাসপাতালের ভেতরের ড্রেনগুলোতে জমে থাকা কালো পানির দুর্গন্ধে সেখানে দাঁড়ানো কঠিন। বিকেল হলেই এই আবর্জনার কারণে মশার উপদ্রব বহুগুণে বেড়ে যায়।

মিরপুর থেকে আসা রোগী শামীমা আক্তারের এক স্বজন বলেন, চিকিৎসকেরা রোগীদের বাঁচানোর জন্য ভীষণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু হাসপাতালের পরিবেশ একেবারেই অস্বাস্থ্যকর। মশা দিন-রাত কামড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে, সুস্থ হয়েও আবার আক্রান্ত হয়ে যাব।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাসেম বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মশা মারার কার্যক্রম দেখাই যায় না। মাঝেমধ্যে স্প্রে করলেও সেটা কার্যকর হয় না। চারপাশের নালা-ড্রেন পরিষ্কার না করলে কোনো কাজ হবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, আমরা রোগীদের মশারি টানিয়ে রাখতে বলি। কিন্তু সব রোগী তা মানেন না। আর সমস্যা হলো, মশার সংখ্যা এত বেশি যে হাসপাতালের ভেতরেও সবসময় রোগীদের মশার কামড় খেতে হয়।

শিশু হাসপাতালে অভিভাবকদের আতঙ্ক

ঢাকা শিশু হাসপাতালে মূলত অসুস্থ শিশুরা ভর্তি থাকে। তাই তাদের নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ অন্যান্য রোগীর চেয়ে অনেক বেশি। শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক অভিভাবক বলেন, আমার বাচ্চা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখানে ভর্তি। ওয়ার্ডে ঢুকলেই দেখি মশা ওড়াউড়ি করছে। বাচ্চাদের শরীর তো এমনিতেই দুর্বল। যদি চিকিৎসা নিতে এসে আবার মশার কামড়ে সংক্রমণ বাড়ে, ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি।

আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৭০০ থেকে ১৮০০ রোগী ভর্তি থাকেন। এর বাইরে আউটডোরেও বিপুল সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে ভিড় ও বর্জ্য জমে সমস্যা তৈরি হলেও আমরা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাই। এক দিন পরিষ্কার করলাম, তারপর ১০ দিন করলাম না; বিষয়টি এমন নয়। প্রতিদিনই পরিষ্কার করতে হয়, কারণ প্রতিদিনই নোংরা হয়শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দিন

এদিকে, হাসপাতালের সামনে জমে থাকা নোংরা পানি ও খোলা নালা থেকে ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধে আশপাশের মানুষকে বিরক্ত হতে দেখা যায়। তারা জানান, এই এলাকায় নিয়মিত মশক নিধন বা ড্রেন পরিষ্কারের কোনো কার্যক্রম কখনও চোখে পড়েনি।

একজন চিকিৎসক বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। অথচ হাসপাতালের বাইরের পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক। মশা কমানোর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায় না। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় তাদের ঝুঁকি মাত্রা খুব বেশি।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৭০০ থেকে ১৮০০ রোগী ভর্তি থাকেন। এর বাইরে আউটডোরেও বিপুল সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে ভিড় ও বর্জ্য জমে সমস্যা তৈরি হলেও আমরা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাই। এক দিন পরিষ্কার করলাম, তারপর ১০ দিন করলাম না; বিষয়টি এমন নয়। প্রতিদিনই পরিষ্কার করতে হয়, কারণ প্রতিদিনই নোংরা হয়।’

হাসপাতালগুলোতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা সীমিত, অথচ রোগীর চাপ দিনদিন বাড়ছে। একটি হাসপাতালে গড়ে এক হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকলেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অপ্রতুল। কর্মীরা সারাদিন ওয়ার্ডের ভেতরেই ব্যস্ত থাকেন, বাইরের ড্রেনেজ বা হাসপাতালের আঙিনা পরিষ্কার করার সময় পান না। এটা দেখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। সরকারি হাসপাতালগুলো নিয়মিত ট্যাক্স দিলেও তারা এ বিষয়ে কার্যকর সহযোগিতা করে নাডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান, পরিচালক, হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

ডেঙ্গু রোগীদের মশারি না পাওয়া, বারান্দায় বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বা ফ্যান না থাকার কারণ সম্পর্কে পরিচালক বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বাজেট স্বল্পতা এবং কাজের ধীরগতির কারণে পুরোপুরি সমাধান হয়নি, তবে প্রক্রিয়া চলছে।

ডা. সেহাব উদ্দিন বলেন, ‘ডেঙ্গু আমাদের একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয়। ডেঙ্গুর পাশাপাশি আরও অন্তত ৪০-৪৫টি বড় সমস্যা আছে। আমরা মূলত সমস্যার সমুদ্রে কাজ করছি। কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে, কিছু এখনও রয়ে গেছে। তবে, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

মশারির পর্যাপ্ততা আছে, সরবরাহে ঘাটতি নেই : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বছর বাজেটে চাদর, কম্বল ও মশারির জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়। নিয়মিতভাবে হাসপাতালগুলোতে এসব সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রতিটি রোগীকে আলাদাভাবে মশারি সরবরাহ করার নীতি রয়েছে।

হাসপাতালে মশারির ঘাটতি আছে— এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘মশারি না থাকার কথাটি সত্য নয়। আমরা প্রত্যেককে একটা করে মশারি দিই। তবে, বাস্তবে অনেক রোগী গরমের কারণে বা ভিড়ের মধ্যে অস্বস্তি বোধ করায় মশারি ব্যবহার করতে চান না। ফলে ওয়ার্ডে মশারির উপস্থিতি থাকলেও তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয় না।’

হাসপাতালগুলোর পরিচ্ছন্নতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা সীমিত, অথচ রোগীর চাপ দিনদিন বাড়ছে। একটি হাসপাতালে গড়ে এক হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকলেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অপ্রতুল। কর্মীরা সারাদিন ওয়ার্ডের ভেতরেই ব্যস্ত থাকেন, বাইরের ড্রেনেজ বা হাসপাতালের আঙিনা পরিষ্কার করার সময় পান না।’

সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তুলে ডা. মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালগুলো নিয়মিত ট্যাক্স দিলেও সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়ে কার্যকর সহযোগিতা করে না।’

হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ডাবের খোসার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘মাত্র তিনটি ডাবের খোসাই একটি ড্রেন বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট। শুধু ড্রেন নয়, এগুলো কমোডে পড়লেও তা ব্লক হয়ে যায়।’

‘ইউনাইটেড বা এভারকেয়ারের মতো বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ও দর্শনার্থীদের ডাব নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলোতে এমন কড়াকড়ি আরোপ করা সম্ভব নয়। কারণ, রোগীর স্বার্থ ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ ডাব নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়নি।’

চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে ২০–৩০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি হলেও মৃত্যুর ঘনত্ব রাজধানীর বড় হাসপাতালগুলোতেই বেশি। শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মারা গেছেন ৩৩ জন রোগী। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন ১৪ জনঅধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

হাসপাতালগুলোর পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ইতোমধ্যে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে— উল্লেখ করে ডা. মঈনুল আহসান বলেন, সম্প্রতি একটি বিশেষ ড্রাইভ পরিচালনা করা হয়েছে। সব হাসপাতালকে তিন দিনের মধ্যে পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময় প্রতিটি হাসপাতালকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ছবি তুলেও জমা দিতে হয়। এর মাধ্যমে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুহার বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং মশারির ব্যবহার কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, জনবল সংকট মোকাবিলা এবং হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার রাখতে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ ও সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে, সচেতনতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে রোগী ও তাদের স্বজনদেরও হাসপাতালের নিয়ম-কানুন মানতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।’

ঢাকা মেডিকেলে বেশি মৃত্যু, দ্বিতীয় কুর্মিটোলা

দেশজুড়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে ভয়ংকর এক তথ্য দিয়েছে স্বয়ং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা বলছে, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে ২০–৩০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি হলেও মৃত্যুর ঘনত্ব রাজধানীর বড় হাসপাতালগুলোতেই বেশি। শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মারা গেছেন ৩৩ জন রোগী। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন ১৪ জন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এসব হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে না পারায় মৃত্যুর হার তুলনামূলক বেশি হচ্ছে। ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার লাইন পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদ জানান, ডেঙ্গুর ডেথ রিভিউ চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১১৪টি ডেথ রিভিউ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে দেখা যাচ্ছে, বড় হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি থাকায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।

তিনি আরও জানান, ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন ৫৭ জন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন ৭৮ জন। অনেকে ভর্তি হওয়ার সময়েই গুরুতর অবস্থায় থাকেন। এছাড়া মারা যাওয়া রোগীদের প্রায় ৪০ শতাংশের অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর এ সময় বলেন, ‘আমরা যতই ব্যবস্থাপনা নেই, জনগণ সচেতন না হলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে স্বীকার করতে হবে, বড় হাসপাতালে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হলে সেবা দেওয়ায় সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে দ্রুত চিকিৎসা জটিল হয়ে পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে, তবে মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক কম। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি হচ্ছে।