রোববার   ১৬ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩২   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৬

প্রশাসনে বইছে ভোটের হাওয়া

তরুন কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২৫  

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণামতে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোট সামনে রেখে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে শুরু করেছে। নির্বাচনের এই প্রস্তুতিমূলক সময়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ছাড়াও সরকারের কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনে চলছে ব্যাপক কর্মতৎপরতা। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ–বদলির কার্যক্রম প্রায় শেষ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

 

ডিসি নিয়োগে সতর্কতা, তবুও বিতর্ক

 

কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে যারা মাঠ প্রশাসনে পদায়ন পাচ্ছেন, তারাই আসন্ন নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবেন ডিসিরা, ফলে সঠিক নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাঁদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

নিয়োগে সতর্কতা বজায় রাখার দাবি করলেও বিতর্ক এড়াতে পারেনি সরকার। অভিযোগ উঠেছে—নিযুক্ত কয়েকজন ডিসি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন বা গত সরকারের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে থেকে সুবিধাভোগী ছিলেন। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ব্যাপক যাচাই-বাছাই করেই এবার ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

 

নিয়োগ বাতিল ও বদলির ঘটনা

 

৮ ও ৯ নভেম্বর মোট ২৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন। কিন্তু মাত্র চার দিনের মাথায় দুজনের নিয়োগ বাতিল করা হয়। বরগুনার নবনিযুক্ত ডিসি সন্দ্বীপ কুমার সিংহের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা থাকায় তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হয়। একইভাবে মেহেরপুরে নিয়োগ পাওয়া উপসচিব মিজ লুৎফুন নাহারের নিয়োগও বাতিল করা হয়েছে।

 

এ ছাড়া কিছু জেলায় নিয়োগের কয়েক দিনের মধ্যেই ডিসিদের পুনরায় বদলি করা হয়েছে, যা কর্মকর্তাদের মতে অতিরিক্ত সতর্কতার ফল।

 

১৩ নভেম্বর আরও ২৩ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রায় সব জেলার ডিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

 

বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ

 

নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে চার বিভাগে বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী, বরিশাল ও ময়মনসিংহে নতুন কমিশনার নিয়োগের পাশাপাশি ময়মনসিংহের কমিশনারকে বদলি করে খুলনায় পাঠানো হয়েছে।

 

অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) আপাতত প্রত্যাহার বা বদলির কোনো পরিকল্পনা নেই।

 

বিশ্লেষকদের মতামত

 

সাবেক সচিব ও প্রশাসন বিশ্লেষক এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, নির্বাচন পরিচালনায় ডিসি ও ইউএনওদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাঁদের সততা, নিষ্ঠা এবং সুষ্ঠু তদারকি নিশ্চিত করতে পারলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।

 

তিনি আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নজর দিতে হবে এবং নিরপেক্ষ প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগের বিষয়ে ইউএনওদের সতর্ক থাকতে হবে।

 

২০ ডিসি প্রত্যাহার

 

গত ১৩ নভেম্বর মাঠে দায়িত্ব পালনরত ২০ ডিসিকে প্রত্যাহার করেছে জনপ্রশাসন। তাঁদের সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে পদায়ন করা হয়েছে। সচরাচর উপসচিবরা ডিসি হিসেবে মাঠে দায়িত্ব পালনের পর যুগ্ম সচিব হন, কিন্তু এবার নির্বাচনের আগে তাঁদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।

 

ডিসিদের মধ্যে আতঙ্ক ও সতর্কতা

 

২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী বহু ডিসির বিরুদ্ধে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, কেউ কেউ এখনো ওএসডি। ফলে নতুন ডিসিদের মধ্যে ভবিষ্যত ভেবে আতঙ্ক কাজ করছে। নিয়োগ ও বদলির ঘনঘন পরিবর্তন তাঁদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

 

এসপি-ওসি পর্যায়ে আসছে বড় পরিবর্তন

 

নির্বাচনকেন্দ্রিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ সুপার (এসপি) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদেও রদবদল প্রক্রিয়া চালু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। লটারির মাধ্যমে তাঁদের বদলি–পদায়নের ধারণা হলেও, আপত্তির কারণে তা এখন অনিশ্চিত।

 

৬৪ জেলার এসপিদের কর্মদক্ষতা যাচাই চলছে, যাতে যোগ্যদের রাখা হবে আর অযোগ্যদের প্রত্যাহার করা হবে। ভোটের আগে বিসিএস ২৫ ব্যাচের অনেক এসপিকে বদলি করে ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের এ নির্বাচনে রাখা হবে না।

 

এই বিভাগের আরো খবর