শনিবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ২৪ ১৪৩২   ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৯

খাবারে পোকা নিয়ে পোস্ট, শিক্ষার্থীর উপর চড়াও ছাত্রীসংস্থার নেত্রী

ফারিহা জামান নাবিলা, জবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর ২০২৫  

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক মাত্র ছাত্রী হল নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের ক্যান্টিনের খাবারে পোকা পাওয়া গেলে তা নিয়ে প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীর উপর চড়াও হন বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম আবর্তনে শিক্ষার্থী ও ছাত্রী সংস্থার নেত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু।

৩ নভেম্বর রাতে ক্যান্টিনের বরবটি-আলু ভাজিতে পোকা পাওয়া গেলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন এক শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে তার ওপর চড়াও হন ছাত্রী সংস্থার নেত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু।

‎বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী উম্মে মাবুদা তার ফেসবুকে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) পোকা সংক্রান্ত একটা লেখা শেয়ার করলে তা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং হলে থাকা অনেক শিক্ষার্থীকে তার সাথে সহমত প্রকাশ করতে দেখা যায়।  

‎উম্মে মাবুদা তার পোস্টে উল্লেখ করেন,  খাবারে পোকা বিষয়টা নতুন নয়, তবে জুনিয়র একজন শিক্ষার্থী তাকে পোকার বিষয় জানালে এবং পরদিন মিড থাকায় সে পোস্ট দিতে না পারায় পরদিন মাবুদাকে জানালে তিনি প্রমাণ সাপেক্ষে  শেয়ার করেন। তবে তাৎক্ষণিক তিনি ছাত্রী সংস্থার নেত্রী ইমুর হুমকির মুখে পড়েন। 

‎ছাত্রী সংস্থার এই নেত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু তার মন্তব্য নিয়ে হল প্রভোস্ট এর কাছে জবাবদিহি করতে বল্লে তাতে সম্মতি প্রকাশ করেন মাবুদা। তবে ইন্টার্ণশীপে থাকায় নির্ধারিত সময়ে সাক্ষাৎ না করতে পারায় বার বার চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন এবং সর্বশেষ ৬ নভেম্বর সকালে মাবুদা’র রুমে আসেন ওই নেত্রী। ‎প্রভোস্টের সাথে কথা বলতে গিয়ে মাবুদা প্রথমে নিজে খাবার কথা বল্লেও পরে তিনি প্রমাণ সহ তার জুনিয়রের কথা জানান। তাতেই আরও বিরক্ত হন ছাত্রী সংস্থার নেত্রী ও খাবারের দায়িত্ব থাকা ফাতেমা।

‎তিনি বলেন, “এমন পোস্ট কেন করলি? আর ভোটের কথা কেন উল্লেখ করছিস? এখনি গিয়ে ক্ষমা চেয়ে এবং তোর আগের পোস্ট ভুল ছিল বলে পোস্ট দিবি। বাজে পোস্ট করে আমার জকসুর ভোট নষ্ট করার কথা ভাবতেছিস নাকি?”

‎উল্লেখ্য, ওই নেত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলে ছাত্রী সংস্থার প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করবেন বলে জানান।

‎এ দিকে অভিযোগের কথা সত্য বলে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু বলেন, “হ্যাঁ,  হলের খাবারে প্রায় ই পোকা পাওয়া যায়। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরও এমন হয়েছে। তবে সেদিন পোস্টদাতা শিক্ষার্থী ভোটের কথা উল্লেখ করে এবং দুই জায়গায় দুই কথা বলেছিল তাই বিরক্ত হয়েছি। তবে ওই শিক্ষার্থীও আমাকে থ্রেট করে।”

 হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভয়ে তারা মুখ খুলেন না। হল প্রভোস্টের সাথে সম্পর্ক ও দায়িত্বে থাকার কারণে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু। কোন শিক্ষার্থী অভিযোগ দিলে তিনি ক্যানটিনে নিয়ে বাবুর্চিদের পক্ষে হয়ে অশোভন আচরণ করেন শিক্ষার্থীদের সাথে। ফলে চাইলেও কেউ মুখ খুলতে পারে না।

‎পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে উম্মে মাবুদা বলেন, “আমার সাথে তার ব্যক্তিগত কোন দ্বন্দ্ব নেই, না আমি তার প্রতিদ্বন্দ্বী।  তাহলে আমি কেন তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করবো। আমার পোস্ট তো পাবলিক করা আছে চাইলে সকলে দেখতে পারে আমি কি লিখেছি। এখন যদি আচরণ এমন হয়,  তাহলে ভোটে জিতলে তাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হবে আমাদের।  অন্যায় হলে তার সমালোচনা করাটা কি অপরাধ। আবার প্রথমত তিনি খাবারের বিষয়ে মিথ্যা বলেছেন যে ওই খাবার দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত সেদিন খাবারের ইশু সামনে না এসে ভোটকে ফোকাস করলেন।”

‎তিনি আরও বলেন, “প্রভোস্ট ম্যা’ম কখনো সকাল ৮:০০ টায় হলে আসেন না, সেদিন তিনি আসলেন এবং তার নিউট্রাল থাকার কথা তিনি ভোটের ইশুকে সামনে এনে আমাকে কথা শুনালেন। এখানে মিসের কাছে তার আর আমার মধ্যে ভোট কোথা থেকে আসলো?”

‎মাবুদার করা পোস্টে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সহমত পোষণ করেন এবং ছাত্রী সংস্থার ওই নেত্রীর ব্যবহারকে “বাজে পলিটিক্স বলে” উল্লেখ করেন। একই পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সন্ধী লেখেন, “পুরো বিষয়টা খেয়াল করে দেখলাম তার ফোকাস এরিয়াটা খাবার নয়ই। উনি আছে উনার ভোট নিয়ে,আমি যদি ধরিও খাবার সেদিনের না,কিন্তু এমনও না খাবার ভালো হয়, ভালো কিছুকে নষ্ট করার জন্য বলা হইছে।। বরং পোস্টটা করা হয়েছিল এটা ভেবে যে যদি পোস্টটায় কোনো পজিটিভ চেঞ্জ আসে।। সব বিষয়ে সব জায়গায় নোংরা পলিটিক্সগুলো টেনে এনে আজকে এই অবস্থা, ভালো কিছু করতে গেলে আরো বেশি সমালোচিত হতে হয়।”

‎এ ছাড়াও ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ ডিবেটিং সোসাইটি দখল, হলে সিট বানিজ্য সহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়

‎ভোটের বিষয়ে পক্ষপাতিত্ত্বের আভাস পেয়ে ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু'র একই বিভাগের শিক্ষক ও হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা'র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জকসু সামনে রেখে এমন ঘটনা ঘটতে পারে তবে ইমু যদি তাকে ফের পোস্ট করে মাফ চাইতে বলে তাহলে ইমুকে ও ক্ষমা চাইতে হবে। ইমু আমার কাছ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানের হিসাবে এক্সট্রা সুযোগ পায় না বরং ডিবেটিং সোসাইটির হিসাবে সে সুযোগ পায়। তবে জকসু তে শিক্ষার্থীরা যাকে চাইবে সে আসবে। আমি দ্রুতই নোটিশ দিবো খারাপ কাজ করে থাকলে ইমুকে সেই মেয়ের কাছে মাফ চাইতে হবে। আর হলে বরবটি এবং কলমীশাক নিষেধ করেছিলাম, আবার কেন আনা হলো। খাবারের মান গত একমাস নিন্মমুখী। ‎ইমু হলের মেয়েদের সাথে বাজে আচরণ করে এটা এখন শুনতেছি।  এখনই কিছু লেখা পাঠিয়েছে হল থেকে।  এ বিষয়ে রোববার বসবো এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা  নিবো।”

এই বিভাগের আরো খবর