সোমবার   ০৩ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ১৮ ১৪৩২   ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৩

হাসিনার শাসনামলে গুমের শিকার আশিক, ধানের শীষ প্রচারে

তরুণ কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২ নভেম্বর ২০২৫  

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে দুই দফা গুমের শিকার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র মফিজুর রহমান আশিক এখনো আন্দোলনের মাঠে সক্রিয়।

 

বর্তমানে তিনি ডান হাতের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া, মেরুদণ্ডে তীব্র ব্যথা ও হাঁটুর আঘাত নিয়েও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন এবং ধানের শীষের প্রচারণায় চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসনের জনপদে জনপদে ছুটে বেড়াচ্ছেন।

 

চিকিৎসকদের মতে, আশিকের ডান হাতের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে, মেরুদণ্ডে আঘাত রয়েছে এবং ডান হাঁটুর নিচে গুরুতর চোট পাওয়া গেছে। শারীরিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও তিনি রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা বাস্তবায়নে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে নিরলসভাবে কাজ করছেন।

 

আশিকের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি মাঠে নেমে ৩১ দফা প্রচার ও ধানের শীষের পক্ষে কাজ করে বাঁশখালীর রাজনীতিতে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছেন। স্থানীয় জনগণও তরুণ নেতৃত্বের এই আগমনকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে।

 

দুই দফা গুম ও নির্মম নির্যাতন

 

২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, নয়াপল্টন, মিরপুর ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় সক্রিয় ভূমিকার কারণে ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর মিরপুর মুসলিম বাজার এলাকা থেকে কালো মাইক্রোবাসে করে আশিককে তুলে নেয় সরকারের বিশেষ বাহিনী।

 

অজ্ঞাত স্থানে চোখ বেঁধে টানা দুই মাস তাকে গুম করে রাখা হয়। সেই সময় তাকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া, উল্টো করে ঝুলিয়ে মারধর, ডান হাতের লিগামেন্ট ছিঁড়ে ফেলা ও কোমরে আঘাত করার মতো নৃশংস নির্যাতন চালানো হয়। এতে তার মেরুদণ্ডে স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি হয়। এরপরও তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকেন।

 

দ্বিতীয়বার, ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর, সিটিটিসি (CTTC) তাকে আবারও গুম করে। জানা যায়, তিনি সিটিটিসি কর্তৃক ‘জঙ্গি নাটক মঞ্চায়ন’-এর ভিডিও ও স্থিরচিত্র বিদেশি গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার কাছে সরবরাহ করেছিলেন। পরে দুই দিন গুম রেখে রাষ্ট্রদ্রোহ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার দেখানো হয়। নয় মাস কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পান।

 

নির্যাতনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আশিক। তিনি বলেন, “বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে আমি ২০১৩ ও ২০২২ সালে দুইবার গুমের শিকার হয়েছি। ‘আয়নাঘর’-এর মতো ভয়ংকর স্থানে বন্দী ছিলাম। আমার হাতের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে, কোমর ও হাঁটু ভেঙে দিয়েছিল, ঝুলিয়ে পেটানোর কারণে মেরুদণ্ডে গুরুতর ক্ষত হয়েছে। বিএনপি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো পাশে না থাকলে হয়তো আজ আমি বাঁশখালীর মানুষের জন্য কাজ করতে পারতাম না।”

 

তিনি আরও বলেন,“গত ১৭ বছরে ১/১১ থেকে শেখ হাসিনার পতন পর্যন্ত আমি আন্দোলন–সংগ্রামে সক্রিয় থেকেছি। তারেক রহমান ক্লিন ইমেজের ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেবেন—এই বিশ্বাসে আমি চট্টগ্রাম–১৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আশাবাদী।”

 

 

 

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ভূমিকা

 

আশিক জানান, জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি মানবাধিকার কর্মী ও ছাত্র সমন্বয়কদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন।“১৬ জুলাই রাতে আন্দোলন স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে আমি এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে দিয়ে ১৭ জুলাই গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ঘোষণার পরামর্শ দিই। এরপর আসিফ মাহমুদ ও হান্নান মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই এবং বিভিন্নভাবে সহায়তা করি,” বলেন আশিক।

 

তিনি আরও জানান, “আমি ১৮ জুলাই নিজেও আহত হই। ২ আগস্ট ছাত্র সমন্বয়করা মুক্তি পাওয়ার পর এক দফা ঘোষণার পরামর্শ দিই এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের নাম নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আমি ও ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাংবাদিক মসজিদুল আনসারী ছাত্র সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদকে ড. ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিই।”

 

 

 

স্থানীয় নেতাদের অভিমত:

 

ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক নির্বাহী সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন,

 “গুমফেরত আশিক ভাই গত ১৭ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঢাকায় আন্দোলন করেছেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আমরা তাকে তার জন্মভূমি বাঁশখালীর মানুষের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার অনুরোধ করলে তিনি রাজি হন। এখন তিনি ৩১ দফা লিফলেট বিতরণ ও ধানের শীষের প্রচারণা চালিয়ে বাঁশখালীর সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছেন। বাঁশখালীর মানুষ তাকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়।”

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. আশেক উল্লাহ বলেন, “তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে বাঁশখালীতে আশিক ভাইয়ের বিকল্প নেই। ত্যাগ, সংগ্রাম ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে তাঁর ভূমিকা তাঁকে তরুণ প্রজন্মের আইকনে পরিণত করেছে।”

 

ত্যাগ বনাম দমননীতির প্রতীকী লড়াই

 

ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়কার শারীরিক নির্যাতনের ক্ষত নিয়েও এখনো রাজনীতির মাঠে সক্রিয় রয়েছেন মফিজুর রহমান আশিক। তাঁর সাহস, ত্যাগ ও নির্যাতনের গল্প এখন বাঁশখালীর তরুণ প্রজন্মসহ সর্বস্তরের জনগণের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।

 

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি যদি বিএনপির মনোনয়ন পান, তাহলে চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসনে লড়াই হবে ত্যাগ বনাম দমননীতির প্রতীকী প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

এই বিভাগের আরো খবর