শনিবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ২৪ ১৪৩২   ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২২

১০ম গ্রেডে বেতনের দাবিতে শহীদ মিনারে হাজারো প্রাথমিক শিক্ষক

তরুণ কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর ২০২৫  

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন দেশের হাজারো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। শনিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।

 

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার অলহরী দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা শবনম বলেন, “আমি একজন গ্রাজুয়েট শিক্ষক হয়েও পাই ১৩তম গ্রেডের বেতন, অথচ উপজেলা অফিস সহকারী পান ১২তম গ্রেডে। এতে আমাদের মর্যাদাও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। রিকশাওয়ালার চেয়ে কম আয়, মাছ কেনা বা ঈদের আনন্দ উপভোগ—সবকিছুই কঠিন হয়ে গেছে।”

 

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার শিক্ষক মো. ইয়াছিন মিয়া বলেন, “সরকারি গাড়িচালক পান ১২তম গ্রেডে বেতন, আর আমরা শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে। অথচ দেশের সবাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাত ধরেই শিক্ষিত হয়েছেন। আমাদের এই অবমূল্যায়ন মেনে নেওয়া যায় না।”

 

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে চারটি সংগঠন এই আন্দোলন পরিচালনা করছে—

১. বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন),
২. বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি,
৩. বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি),
৪. সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ।

 

সংগঠনগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, তাদের প্রধান তিন দাবি—

১️. সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ,
২️. ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান,
৩️. শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির বাস্তবায়ন।

 

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, “আমরা বারবার আলোচনায় গেছি, কিন্তু কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি। এবার রাজপথেই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে।”

 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত। গত এপ্রিল মাসে সরকার প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম থেকে ১২তম গ্রেডে উন্নীত করলেও, এ সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।

 

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, “অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, নার্স, কৃষি কর্মকর্তা, এমনকি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক ডিগ্রিতেই ১০ম গ্রেডে আছেন। অথচ আমরা স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ নিয়েও ১৩তম গ্রেডে আছি—এটা চরম বৈষম্য।”

 

অন্যদিকে, আরেকটি সংগঠন ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ সরকারকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দিয়ে আলাদা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দাবি পূরণ না হলে তারা ২৩–২৬ নভেম্বর কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
 

 

এই বিভাগের আরো খবর