রোববার   ১৬ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩২   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১১

ব্যাংক খাতে পরিবারতন্ত্রে লাগাম টানতে নতুন আইন করছে সরকার

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২৫  

ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা পরিবারতন্ত্র ও অস্বচ্ছ নিয়ন্ত্রণ ভাঙতে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হচ্ছে, যেখানে পরিবারের সংজ্ঞা আরও বিস্তৃত করা, একই পরিবার থেকে পরিচালকের সংখ্যা কমানো এবং পরিচালকদের একটানা পদে থাকার মেয়াদ কমানোর প্রস্তাব রয়েছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) অধ্যাদেশ–২০২৫-এর খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, পরিবারের সংজ্ঞা বড় হলে এবং পর্ষদে দীর্ঘমেয়াদি দখলদারিত্ব কমলে ব্যাংক খাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং একটি পরিবার কোনো ব্যাংকের ওপর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারবে না।

 

অতীতের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রেক্ষাপট

 

আগের সরকার আমলে এস আলম, বেক্সিমকো, সিকদারসহ বেশ কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী নিজেদের স্বজনদের পর্ষদে বসিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণে নেয়। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক অনিয়ম ও পুঁজি লোপাট হয়েছে। এমনকি অনেক ব্যাংক এখন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতেও হিমশিম খাচ্ছে।

 

পরিবারের সংজ্ঞা বাড়ানো ও পরিচালকের সংখ্যা কমানো

 

বর্তমানে পরিবার বলতে স্ত্রী–স্বামী, পিতা–মাতা, সন্তান ও ভাইবোনকে বোঝানো হয়। নতুন আইনে ভাবি, ভগ্নিপতি, শ্বশুর–শাশুড়ি, শ্যালক–শ্যালিকা ও নির্ভরশীল অন্যান্য সদস্যকেও যুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে।

 

একই পরিবার থেকে বর্তমানে তিনজন পরিচালক হতে পারলেও খসড়ায় তা কমিয়ে দুজনে আনার কথা বলা হয়েছে।

 

বিএবি (ব্যাংক মালিকদের সংগঠন) এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে এবং পরিবারের সংজ্ঞা সীমিত রাখার দাবি করছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, পরিবারতন্ত্র ভাঙতে এসব পরিবর্তন প্রয়োজন।

 

পরিচালকের মেয়াদ কমছে

 

বর্তমানে টানা ১২ বছর পরিচালক হিসেবে থাকা যায়। নতুন খসড়ায় তা কমিয়ে ৬ বছর করার কথা বলা হয়েছে। যাতে কোনো ব্যক্তি বা পরিবার দীর্ঘমেয়াদে পর্ষদ দখল করে রাখতে না পারে।

 

স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা বাড়ছে

 

খসড়ায় ১৫ সদস্যের বোর্ডে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা ৫০% রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ২০ সদস্যের বোর্ডে মাত্র ৩ জন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন—"সম্ভব হলে পুরো বোর্ডই স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়া উচিত ছিল।"

 

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমানোর উদ্যোগ

 

নতুন আইনে বলা হয়েছে, কোনো মন্ত্রী, এমপি বা জনপ্রতিনিধি ব্যাংকের পর্ষদে থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিইও বা পরিচালকদের নিয়োগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের বাড়তি ক্ষমতা

 

খসড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংককে অনিয়ম–জড়িত ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
অমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজন হলে নতুন ঋণ দেওয়া ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগও বন্ধ করে দিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

বিশেষজ্ঞদের মত

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী মনে করেন—
"পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক বাড়ানো, একই পরিবার থেকে কম লোক রাখা ও পরিচালকের মেয়াদ সীমিত করা—এসব উদ্যোগ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রাখবে।"

 

এই বিভাগের আরো খবর