মঙ্গলবার   ১৪ মে ২০২৪   বৈশাখ ৩০ ১৪৩১   ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৯১৫

রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় দুঃখ প্রকাশ

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯  

 

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নামের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেছেন, যে ভুল হয়েছে, তার দায় অস্বীকারের সুযোগ নেই। ত্রুটি-বিচ্যুতি বেশি হলে তালিকা প্রত্যাহার করা হবে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং আমি’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতকৃত রাজাকারদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকা আগেই তৈরি করে রেখে গেছে। সেখানে কোনো ইল মোটিভ থাকতে পারে, উদ্দেশ্যমূলক হতে পারে। যেভাবে আছে, সেভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা এটা এডিট করি নাই, দাড়ি-কমা, সেমিকোলন চেঞ্জ করি নাই।’

রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসায় ক্ষমা চাইবেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখ প্রকাশ করার অর্থ যদি আপনি না বোঝেন। আমি কি এটা করেছি? আপনি যদি চ্যালেঞ্জ করেন, এসে দেখে যান।  আমরা অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলছি, এই তালিকা আমরা তৈরি করি নাই। জাতির দাবি ছিল, তাই প্রকাশ করেছি। আমি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তৈরি করি নাই। দুঃখ প্রকাশ করা ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে তো কোনো পার্থক্য নাই। নিঃসন্দেহে এটা ক্ষমার চোখে দেখবেন। দুঃখ প্রকাশ করার অর্থ কী? আমি এই কাজ না করেও দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। এর পরেও যদি পছন্দ না হলে আদালতে যেতে পারেন। আমার নাম (রাজাকারের তালিকায়) এলে যেভাবে কষ্ট পেতাম, ঠিক ওইভাবে ওনারা কষ্ট পেয়েছেন। সে জন্য আমি ব্যথিত, আমিও কষ্ট পেয়েছি।’

রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে আশ্বাস দিয়ে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি তিনবার বলেছি, সেটা, আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। আবারও বলছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। কারণ, কাউকে অন্যায়ভাবে দোষের জায়গায় নেওয়াটা কারো জন্যই শোভনীয় নয়। তাদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয়ও নেই, শত্রুতাও নেই, ইচ্ছাকৃতভাবেও করি নাই। আমরা যে তালিকা পেয়েছি, সেটা প্রকাশ করেছি। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আপনাদের কারো সংশয় থাকলে অরিজিনাল ডকুমেন্ট দেখেন তাদের নাম আছে কিনা।’

‘কারা একাত্তর সালে (রাজাকারের তালিকা) তৈরি করেছে, এটা খুঁজে বের করতে পারলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব,’ বলেও আশ্বাস দেন মন্ত্রী।

তালিকা যাচাই করে দেখবেন কি না বা প্রত্যাহার করে নেবেন কি না জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার সংখ্যা যদি ১০০ হয়, তাহলে প্রত্যাহারের প্রশ্ন আসবে। যদি ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়, তাহলে প্রত্যাহার করে নেব। তারপর যাচাই করে আবার দেব। আমাদের দেখতে হবে অভিযোগের মাত্রা কেমন? আমরা পুনরায় ছাপালে দুঃখ প্রকাশ করে ছাপাব যে আগে ভুল হয়েছিল।’

এর আগে গত রোববার দুপুরে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নামের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রথম পর্বে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই তালিকা পাওয়া যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (molwa.gov.bd)। ওই তালিকা প্রকাশের পর রাজশাহী, বরিশাল, বগুড়া ও বরগুনাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযোগ আসে যে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, হিন্দু মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সহযোগীদের নাম উঠেছে।

তালিকা প্রকাশ করার কথা জানিয়ে রোববার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যাঁরা রাজাকার হিসেবে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়ে পাকিস্তানি আর্মির সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন, তাঁদের তালিকা এটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই তালিকা সংরক্ষিত ছিল, সেখান থেকে আমরা সংগ্রহ করেছি। আজ থেকে এটি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।’ এ তালিকার রাজাকাররা কে কোন দলে আছেন, এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।

এর বাইরেও রাজাকারদের নাম প্রকাশ করা হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ওই সময় যে পুরোনো ১৯ জেলা ছিল, সেসব জেলা সদরে আমরা চিঠি দিয়েছি। সেখানে কোনো রেকর্ড অথবা গেজেট যদি থাকে, সেগুলোও পাঠাতে বলা হয়েছে। সেগুলো যাচাই করে আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে আমরা প্রকাশ করব।’

একসঙ্গে কেন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হলো না—জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এর আগেই ওই জেলাগুলোকে তাগাদা দিয়েছিলাম। কিন্তু সাড়া পাইনি।’

এই তালিকা অনুযায়ী রাজাকারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এটা সামাজিক সচেতনতা ও জনগণকে অবহিত করার জন্য। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ এখন নেই। যদি গেজেট প্রকাশ করা হয়, তাহলে মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবে এবং পার্লামেন্টে পাস করাতে হবে।’

এর আগে গত ৮ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে জানাতেই স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজাকারদের নাম প্রকাশের এমন উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। বিসিএস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের ভূমিকা নিয়ে লেখা সংযুক্ত করা হবে।’

এরপর গত ৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সংবাদ সম্মেলন করে যথাযথভাবে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করার জন্য দাবি জানানো হয়।

এই বিভাগের আরো খবর