রোববার   ০২ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ১৭ ১৪৩২   ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৫

আলোচনার দরজা খোলা রাখছে বিএনপি

তরুণ কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২৫  

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উপেক্ষা করে বাস্তবায়নের উদ্যোগে বিএনপি ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তারা আলোচনার পথ বন্ধ করতে চায় না। দলটির অবস্থান, আলোচনার মাধ্যমেই এ সনদ বাস্তবায়নের সমাধান হওয়া উচিত। তারা আশা করছে, সরকার যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে এবং প্রয়োজনে পুনরায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। সরকার থেকে ডাক এলে বিএনপি এতে সাড়া দেবে এবং তাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে জানাবে।

 

বিএনপি চায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তবে জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি রাজনৈতিক দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। এ ইস্যুতে জামায়াত কর্মসূচি শুরু করলেও বিএনপি আপাতত কোনো পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে না। তারা মনে করে, এখনই উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থান নিলে ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে অর্জিত অগ্রগতি নষ্ট হতে পারে।

 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,

 

 “মতভেদ থাকলেও আমরা মূল সনদে স্বাক্ষর করেছি। জনগণ যদি আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে, আমরা তখন বিষয়গুলো পার্লামেন্টে নিয়ে গিয়ে দেশের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনব।”

 

দলটি মনে করে, সার্বিক বাস্তবতা বিবেচনায় সরকার জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজন করবে। বিএনপির মিডিয়া সেলের সাম্প্রতিক এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, একই দিনে দুই ভোট আয়োজন যৌক্তিক, সাশ্রয়ী ও বাস্তবসম্মত। এতে সরকারের প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে এবং অতিরিক্ত প্রস্তুতিরও প্রয়োজন নেই।

 

বিএনপির আশঙ্কা, গণভোট আগে হলে জাতীয় নির্বাচন পেছাতে পারে, যা গণআন্দোলনের গতি ব্যাহত করতে পারে। তাদের মতে, কিছু পক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচাল করতে চায়, তাই একসঙ্গে দুই ভোটই সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত পথ।

 

গত ১৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ থেকেই যায়। গত মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বাস্তবায়ন সুপারিশ পেশ করেন। এতে বলা হয়, সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। সংসদ নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

 

তবে বিএনপির অভিযোগ, তারা যেসব বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিল, তা সুপারিশে রাখা হয়নি। দলটির মতে, এটি জনগণ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। তবুও তারা সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করছে না, যাতে তাদের সংস্কারবিরোধী হিসেবে উপস্থাপন করা না যায়।

 

বিএনপি মনে করে, সংস্কার বাস্তবায়নে তারাই সবচেয়ে বড় অংশীজন। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের যে দাবি তারা জানিয়ে আসছে, তা ৩১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে—যা ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়ন করবে বলে তাদের অঙ্গীকার।

 

গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,

“যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো উপেক্ষা করে নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব সুপারিশ জাতিকে ঐক্যের বদলে বিভক্ত করবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার বা কমিশনের ব্যাখ্যা না আসায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তার মতে, যদি বিএনপির অভিযোগ সঠিক হয়, তবে ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি; আর যদি ভুল হয়, তাও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,

 “যেসব সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে, তার ভিত্তিতে নোট অব ডিসেন্টসহ প্রণীত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ। আর জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।”
 

এই বিভাগের আরো খবর