বুধবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩২   ০৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho

বাংলাদেশে দরিদ্র ৩ কোটি ৬০ লাখ, চার বছর ধরে দারিদ্র্য বাড়ছে

তরুন কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২৫  

বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার আবারও বাড়ছে এবং এ প্রবণতা টানা চার বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রাক্কলন মতে, ২০২৫ সালে দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশের বেশি হতে পারে, ফলে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখে।

 

মঙ্গলবার ঢাকায় প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ: দারিদ্র্য ও বৈষম্য বিশ্লেষণ—সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, চাকরি হারানো, কর্মসংস্থান সংকট, প্রবাসী আয়ের ধীর গতি এবং পর্যাপ্ত শোভন কাজ না থাকায় দারিদ্র্য বেড়েছে।


সংস্থাটি জানায়, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে দেশে ২০ লাখ কর্মসংস্থান কমেছে, আর ২০২৫ সালে আরও ৮ লাখ কাজ হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও তরুণরা।

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপেও দারিদ্র্য কমার গতি থেমে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ২০২২ সালের খানা আয়–ব্যয় জরিপে সার্বিক দারিদ্র্য হার ছিল ১৮.৭ শতাংশ।

 

বিশ্বব্যাংক জানায়, বর্তমানে মাথাপিছু মাসিক আয় ২,৭৫০ টাকা হলে নিম্ন দারিদ্র্যসীমা এবং ৩,৮৩২ টাকা হলে সার্বিক দারিদ্র্যসীমা ধরা হয়।

 

বিশ্বব্যাংকের প্রধান উদ্বেগগুলো

 

  • কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে

  • মূল্যস্ফীতির চাপে দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত হঠাৎ দরিদ্রসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে

  • সামাজিক সুরক্ষা ভর্তুকির বড় অংশ ধনী পরিবারের হাতে যাচ্ছে

  • জলবায়ু ঝুঁকিতে ২০৫০ সালের মধ্যে ১.৩০ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা

  • কর্মসংস্থানের ৬৩% কৃষিখাতে সৃষ্টি, যেখানে আয় কম ও শহরে নতুন কাজ প্রায় স্থবির

 

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

 

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ২০২২ থেকে ২০২৫ সালকে ‘উল্টো ঘুরে যাওয়ার’ সময়কাল হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। তাঁর মতে, এ সময় দারিদ্র্য হ্রাসের পুরোনো ধারা সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে।

 

অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেন, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে দারিদ্র্য বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এসেছে, তবে বিবিএস এই বিষয়টিতে নীরব ছিল।

 

সিপিডি ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান জানান, টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের মধ্যে নতুন ভারসাম্য আনা জরুরি।

 

বিশ্বব্যাংকের চার সুপারিশ

 

১. উৎপাদনশীল খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি
২. নারী–তরুণসহ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য শোভন কাজ বাড়ানো
৩. গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য কার্যকর বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা
৪. দক্ষ ও সমতাভিত্তিক রাজস্বনীতি নিশ্চিত করা

 

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জ্যঁ পেম বলেন, “দারিদ্র্য কমাতে পুরোনো পদ্ধতি আর কাজ করবে না। নারী, যুবক এবং ঝুঁকির মুখে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতেই হবে।”

এই বিভাগের আরো খবর