শনিবার   ২২ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩২   ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho

ঢাকার কাছে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে: বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

তরুন কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৫  

সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সকালে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকাবাসীর মনে বড় ধরনের আতঙ্ক তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূকম্পনকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। বরং এটি ভবিষ্যতের বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বা ‘ফোরশক’ হতে পারে। ঢাকার এত কাছে এ মাত্রার কম্পন-এ পর্যন্ত এর নজির নেই।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম্পনের স্থায়িত্ব যদি আরও কয়েক সেকেন্ড বেশি হতো, তাহলে রাজধানীতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারত। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব ও মাত্রা বিবেচনায় এটি বড় বিপদের আগাম সতর্কতা। তাঁরা জরুরি মহড়া, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছেন।

 

রাজধানীতে ২১ লাখ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ

 

রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর এলাকায় ২১ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি ভবন রয়েছে, যেগুলোর একটি বড় অংশ নির্মিত হয়েছে নকশা অনুমোদন ছাড়াই বা নিয়ম-কানুন মানা ছাড়াই। এসব ভবনের অনেকগুলোই দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যেগুলো বড় ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতি বা ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭ মাত্রা বা তার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প ঢাকার আশপাশে আঘাত হানলে ভয়াবহ মৃত্যু ও ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। পূর্বে করা জাইকা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির যৌথ জরিপে ধারণা করা হয়েছে-এ ধরনের ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে প্রায় ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে, আর দেড় লাখের বেশি ভবন গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

 

ঢাকা বসে আছে তিন দিকের সক্রিয় ফল্টলাইনের ওপর

 

ভূতত্ত্ববিদদের ব্যাখ্যা মতে

 

  • উত্তরে রয়েছে ইউরেশিয়ান প্লেট,

  • দক্ষিণে ইন্ডিয়ান প্লেট ঢুকে যাচ্ছে উত্তরপূর্বে,

  • পূর্বে মিয়ানমার সাবপ্লেট সরে যাচ্ছে অন্য এক দিকে।

 

এই তিনদিকে চাপ সৃষ্টি হওয়ায় বাংলাদেশ বিশেষ করে ঢাকা ভূমিকম্প ঝুঁকির মুখে। দেশের মাটি মূলত নরম পলিমাটি হওয়ায় শক্তিশালী কম্পনে মাটি তরলীকৃত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা ভবন ধসের কারণ হতে পারে।

 

ধ্বংসের চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে

 

রাজউকের ২০২৪ সালের সমীক্ষায় বলা হয়েছে

  • মধুপুর ফল্টে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের ৪০%–৬৫% ভবন ধসে পড়তে পারে।

  • রাতে ভূমিকম্প হলে মৃত্যুর সংখ্যা ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত হতে পারে।

  • প্রধান সড়কের ৫০% এবং সেতুর প্রায় ৯৬% ধসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

 

এ ছাড়া বৈদ্যুতিক অবকাঠামো, পানি–বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহন ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ অচল হয়ে যাবে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

 

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

 

বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, “গতকালের ভূমিকম্পটিকে ‘ফোরশক’ বলা যায়। বড় ভূমিকম্পগুলো সাধারণত ১৫০ বছর পরপর ফিরে আসে। ১৯৩০ সালের পর এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্প হয়নি। তাই ঝুঁকি বাড়ছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “ঢাকা শহরের সব ভবন অবিলম্বে পরীক্ষা করা উচিত। ভবন কোড অনুযায়ী কোনগুলো টিকে থাকতে পারবে আর কোনগুলো ঝুঁকির মধ্যে আছে—তা দ্রুত জানানো জরুরি।”

 

অন্যদিকে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার বলেন, “আজকের ভূমিকম্প আমাদের সতর্ক করছে। যে প্লেট আটকে ছিল, সেটি সরে যেতে শুরু করেছে। এর অর্থ সামনে আরও বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে।”

 

ঢাকায় খোলা জায়গার ঘাটতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে

 

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ঢাকার সবচেয়ে বড় দুর্বলতার একটি হলো খোলা জায়গা ও নিরাপদ আশ্রয়স্থলের অভাব।
বেশিরভাগ এলাকায় পর্যাপ্ত মাঠ, পার্ক বা খোলা জায়গা নেই। ফলে বড় ভূমিকম্প হলে মানুষ কোথায় আশ্রয় নেবে—তা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে।

 

এই বিভাগের আরো খবর