শনিবার   ২২ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩২   ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho

ঢাকায় শক্তিশালী কম্পন অনুভব করলেন ১ কোটির বেশি মানুষ: ইউএসজিএস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৫  

ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চল আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপন্ন ৫.৫–৫.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পে ঢাকায় তীব্র কম্পন অনুভব করেন ১ কোটির বেশি মানুষ—এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস।

 

সংস্থাটির অনুমান অনুযায়ী, ৭ কোটির বেশি মানুষ মৃদু কম্পন এবং আরও প্রায় ৬ কোটি ৭০ লাখ মানুষ হালকা কম্পন অনুভব করেছেন। ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী ভূমিকম্পটিকে কমলা শ্রেণিতে রেখেছে ইউএসজিএস, অর্থাৎ প্রাণহানির সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য। তবে অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকি হলুদ শ্রেণিভুক্ত—বাংলাদেশের জিডিপির ১% এর কম ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা।

 

ঢাকায় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত—কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু

 

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভবনের দেয়াল, রেলিং ও অংশবিশেষ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটে। আতঙ্কে楼 থেকে লাফিয়ে বা দৌড়ে নামতে গিয়ে বহু মানুষ আহত হন।
এ ঘটনায় ঢাকায় চারজন, নরসিংদীতে পাঁচজন এবং নারায়ণগঞ্জে একজনসহ মোট ১০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ছয় শতাধিক।

 

পুরান ঢাকার কসাইটুলীতে একটি পাঁচতলা ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে তিন পথচারী মারা যান। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে।

 

কেন্দ্রের কাছাকাছি হওয়ায় কম্পন ছিল তীব্র

 

বুয়েটের ভূমিকম্প–বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, ঢাকার এত কাছাকাছি ৪ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প আগে কখনো হয়নি, তাই কম্পন অস্বাভাবিকভাবে তীব্র অনুভূত হয়েছে।

 

তিনি জানান, ২০২৩ সালে রামগঞ্জের ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকার ২০০ কিলোমিটার দূরে ঘটেছিল। এবার মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় ক্ষতি বেশি হয়েছে।

 

রাজধানীতে আতঙ্ক—খোলা জায়গার অভাব

 

ভূমিকম্পের সময় শহরের বাসা, মার্কেট, হাসপাতাল থেকে মানুষ দৌড়ে রাস্তায় বের হয়ে আসেন। অনেকে অসুস্থ শিশু–বৃদ্ধকে কোলে নিয়ে নিচে নেমে আসেন। ঢাকায় খোলা জায়গার স্বল্পতার কারণে সড়কেই আশ্রয় নিতে হয় অধিকাংশকে।

 

নিকেতনের বাসিন্দা আশরাফুল আলম বলেন,

“চেয়ার এত কাঁপছিল মনে হচ্ছিল পড়ে যাব। এই শহরে বাস করে বাঁচার কোনো নিশ্চয়তা নেই।”

 

বহু ভবন ঝুঁকিতে—বিশেষ সতর্কবার্তা

 

বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প–বিশেষজ্ঞদের মতে,

  • ৩ দশকে ঢাকায় এত ক্ষতির মতো ভূমিকম্প হয়নি

  • অনেক ভবনের দেয়ালে ফাটল, পলেস্তারা খসে পড়া, মাটি দেবে যাওয়া—সবই উদ্বেগজনক

  • বড় ধরনের ভূমিকম্প সাধারণত ১৫০ বছর পরপর ফিরে আসে, তাই আরও শক্তিশালী কম্পনের ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়া যায় না

 

রাজউকের ২০২৪ সালের সমীক্ষা বলছে, ঢাকায় ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৮ লাখের বেশি ভবন ধসে পড়তে পারে, এবং দিনে হলে ২ লাখ ২০ হাজার, রাতে হলে ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

 

নিম্নাঞ্চলে বিপদের মাত্রা বেশি

 

অধ্যাপক আকতার মাহমুদ জানান, ঢাকার পূর্বাঞ্চল—প্রগতি সরণি থেকে বালু নদ, পূর্বাচল, উত্তরার কিছু অংশ, হাজারীবাগ, শ্যামলী, ঢাকা উদ্যান, বছিলা—সবই নিম্নভূমি।
বালু ফেলে নির্মিত এসব এলাকায় বড় ভূমিকম্প হলে ঝুঁকির মাত্রা বেশি।

 

এই বিভাগের আরো খবর