মঙ্গলবার   ০৭ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ২২ ১৪৩২   ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১১

বাংলাদেশসহ ১০ দেশে ফান্ডসচেইন ব্যবহার করছে বিশ্বব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০২৫  

তহবিল ব্যবহারে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ, ফিলিপাইনসহ ১০টি দেশে ব্লকচেইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ফান্ডসচেইন ব্যবহার করছে বিশ্বব্যাংক। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক তাদের ব্লগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এই তথ্য প্রকাশ করে।

ফান্ডসচেইন পদ্ধতিটি এরই মধ্যে ১০টি দেশের ১৩টি প্রকল্পে পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যা শিল্পখাতে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রায় ২৫০টি প্রকল্পে বিস্তৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে রেজিলিয়েন্স এনট্রেপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড লাইভলিহুড ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টে এ ফান্ডসচেইন ব্যবহার করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটি ৩ হাজার ২০০টি গ্রামে নারী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ শুরু করতে, গর্ভাবস্থা-সংক্রান্ত ব্যয় মেটাতে, স্যানিটেশন উন্নত করতে এবং সম্প্রদায়কে বৃহত্তর সহায়তা দিতে সহায়তা করে।

২০২১ সালে ৬০ কোটি ডলারের এ প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে এরই মধ্যে এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে।

২০২৫ সালের ৫ মার্চ বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের দুটি প্রকল্পে ফান্ডসচেইনের পরীক্ষামূলক উদ্বোধনের ঘোষণা দেয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা ৩৫০টি গ্রামে ফান্ডসচেইন পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করছি। একই সঙ্গে আমাদের প্রকল্পের ৩ হাজার ২০০টি গ্রামেই ল্যাপটপ সরবরাহ করা হয়েছে এবং নারী নেত্রীদের এটি ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যখন ফান্ডসচেইন এলএমএসের সঙ্গে যুক্ত হবে, তারা সরাসরি এটি ব্যবহার করতে পারবে। প্রতিটি গ্রাম, সংগঠন এই প্রক্রিয়ার অংশ হবে এবং স্বচ্ছভাবে তহবিল ট্র্যাক করতে পারবে।’

মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘ফান্ডসচেইন আমাদের ফাইন্যান্স টিমের জন্যও উপকার বয়ে আনছে। কারণ এটি লেনদেন রেকর্ড সহজ করে এবং প্রকল্প-সংক্রান্ত সব তথ্য ডিজিটালাইজ করছে, যা এমন একটি প্রকল্পে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেখানে বহু সরবরাহকারী ও উপকারভোগী রয়েছে।’


বিশ্বব্যাংক যখন কোনো প্রকল্পের জন্য তহবিল ছাড় করে, তখন সেই তহবিল কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা ট্র্যাক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন রকম আর্থিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া ব্যবহার করে, যেগুলো একে অপরের সঙ্গে মানানসই নয় এবং খুব কম ক্ষেত্রেই তথ্য আদান-প্রদান করে বলে জানিয়েছে এই বৈশ্বিক ঋণদাতা। এ সমস্যাগুলো সমাধানে বিশ্বব্যাংক ফান্ডসচেইন চালু করেছে।

ফান্ডসচেইন বিশ্বব্যাংককে তহবিল ব্যবহারে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং কার্যক্রম আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করছে। এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিবর্তন অযোগ্য ডিজিটাল রেকর্ড, প্রকল্প তহবিলের সম্পূর্ণ পথ অনুসরণযোগ্যতা, প্রকল্প অংশীদারদের তাৎক্ষণিক লেনদেন রেকর্ডে প্রবেশাধিকার এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার।

এ নিজস্ব প্রযুক্তিভিত্তিক প্ল্যাটফর্মটি ব্লকচেইন ব্যবহার করে প্রতিটি ডলার একটি নিরাপদ, অপরিবর্তনযোগ্য ডিজিটাল লেজারে ট্র্যাক করে, যা সব প্রকল্প অংশীদার দ্বারা দেখা যায়। হালনাগাদ লেনদেন রেকর্ডে বিস্তৃত প্রবেশাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে ফান্ডসচেইন দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।


প্রকল্প তদারকিতে ব্লকচেইন ব্যবহার করা প্রথম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাংক ভবিষ্যৎ প্রস্তুত আর্থিক ব্যবস্থাপনায় পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে।


বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ফান্ডসচেইন ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্প তহবিল ট্র্যাক করার এ উদ্যোগটি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের কার্যক্রম আরও দক্ষ এবং সংগঠিত করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ, যাতে আরও ভালোভাবে ক্লায়েন্ট ও সম্প্রদায়কে সেবা দেওয়া যায়।

মেট্রো ম্যানিলা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট লোভেলা টোলেনটিনো-মোরাদা বলেন, ফান্ডসচেইন আর্থিক প্রতিবেদন ও স্বচ্ছ ট্র্যাকিংয়ের জন্য একটি ‘ওয়ান-স্টপ শপ’। এটি দ্রুত পেমেন্ট, চুক্তি ও খরচ দেখায় এবং সরবরাহকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে জানায় কখন পেমেন্ট প্রস্তুত। ফলে দলগুলো সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর করতে পারে।


ফান্ডসচেইনের প্রারম্ভিক গ্রহণকারীদের মধ্যে ছিল ফিলিপাইন, যেখানে এটি মেট্রো ম্যানিলা ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টে চালু করা হয়। এটি ৫০০ মিলিয়ন ডলারের উদ্যোগ এবং বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক দ্বারা অর্থায়িত। এ প্রকল্পের লক্ষ্য হলো ম্যানিলাকে বন্যার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা এবং পানির অবকাঠামো উন্নত করা।

এই বিভাগের আরো খবর