বুধবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ২ ১৪৩২   ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৫

নীরব মহামারি: ব্যাটারিচালিত রিকশায় পঙ্গুত্বের করুণ কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫  

দেশজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনা যেন এক মহামারির আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায় উঠে আসছে মৃত্যুর খবর, আর হাসপাতালে দেখা যায় আহতদের করুণ আর্তনাদ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পাঁচ হাজার ৪৮০ জন এবং চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দুই হাজার ৯৪৩ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

 

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই দুর্ঘটনার একটি বড় অংশই ঘটছে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার কারণে। তিন চাকার এই যানগুলো শহর থেকে গ্রাম, অলিগলি থেকে মহাসড়ক— সবখানেই ছড়িয়ে পড়েছে এবং তাদের বেপরোয়া গতির কারণে ঘটছে ভয়াবহ সব দুর্ঘটনা।

পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় যেসব রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়, তাদের একটি বড় অংশই আসেন ‘স্পটডেথ’ থেকে বেঁচে আসা অবস্থায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথায় গুরুতর আঘাত, ওপেন ফ্র্যাকচার এবং আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে। প্রতিদিন হাসপাতালের ওয়ার্ডে নতুন নতুন আহত রোগী ভর্তি হচ্ছেন, আর তাদের পরিবারের সদস্যদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে।

 

 

dhakapost

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪১২ জন রোগী। এর মধ্যে ২৭১ জনই ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন এবং ১৪১ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে এই বিপজ্জনক যানগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বারবার সতর্ক করা হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তাদের মতে, এখনই সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমার বদলে বাড়তেই থাকবে, আর প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষকে অকালে প্রাণ হারাতে হবে। জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশার চলাচল সীমিত করা, নিবন্ধন ও মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

সম্প্রতি রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের দিকেও হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে প্রচণ্ড ভিড়। কেউ স্ট্রেচারে, কেউ হুইলচেয়ারে, আবার কেউ স্বজনের কাঁধে ভর দিয়ে আসছেন। স্বজনেরা দৌড়াচ্ছেন এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে; ওষুধ কিনছেন, ডাক্তার ডাকছেন। করিডর থেকে আসছে মারাত্মক আহত রোগীদের আর্তচিৎকার। চিকিৎসক ও নার্সরা নিরলসভাবে চিকিৎসা দিলেও রোগীর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

dhakapost

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪১২ জন রোগী। এর মধ্যে ২৭১ জনই ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন এবং ১৪১ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।

জরুরি বিভাগে ভিড়, শয্যায় দীর্ঘশ্বাস

নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে আসা ২৩ বছর বয়সী রিমন হোসেন জানান, তিনি অটোরিকশায় যাচ্ছিলেন। হঠাৎ উল্টোদিক থেকে একটি প্রাইভেটকার এসে ধাক্কা দিলে অটোরিকশাটি উল্টে যায় এবং তিনি নিচে চাপা পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি দেখেন তার পা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে এবং আশেপাশের মানুষের চিৎকারে চারিদিক ভারী হয়ে আছে। তার এক পায়ের হাড় ভেঙে গেছে এবং ডাক্তাররা জানিয়েছেন, সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।

তার মন্তব্য, “ওপরওয়ালা রক্ষা করেছেন। নইলে আজ হয়তো আমি বেঁচে থাকতাম না। এখনো মাথার মধ্যে সেই শব্দ বাজছে— ধাক্কার আওয়াজ, মানুষের চিৎকার। মনে হয় আমি একেবারেই অন্য জগতে চলে গিয়েছিলাম। এখনো ঘোর কাটেনি।”

সাভারের পোশাকশ্রমিক আরিফ হোসেন ক্যাজুয়ালটি- ১ নম্বর ওয়ার্ডের শয্যায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ডান পাঁজরে ব্যান্ডেজ বাঁধা, পাশে বসা স্ত্রী বারবার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আরিফ বলেন, “আমি একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করি। সংসারে মা-বাবা, স্ত্রী আর দুই সন্তান। সামান্য বেতনে কষ্ট করে সংসার চালাই। ছুটিতে গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানেই সন্ধ্যায় এক ব্যাটারিচালিত রিকশা বেপরোয়া গতিতে এসে ধাক্কা দেয়। পায়ে আঘাত পাই। হাসপাতালে আনার পর থেকে তিন দিন হয়ে গেল, এখনো অপারেশন হয়নি। প্রতিদিন ডাক্তারদের খুঁজছি, কিন্তু শুধু অপেক্ষা করতে হচ্ছে।”

পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় যেসব রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়, তাদের একটি বড় অংশই আসেন ‘স্পটডেথ’ থেকে বেঁচে আসা অবস্থায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথায় গুরুতর আঘাত, ওপেন ফ্র্যাকচার এবং আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে। প্রতিদিন হাসপাতালের ওয়ার্ডে নতুন নতুন আহত রোগী ভর্তি হচ্ছেন, আর তাদের পরিবারের সদস্যদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে

“এই ক’দিনেই ১০ হাজার টাকা ধার করেছি। কাজের বাইরে আমি যদি মাসের পর মাস বিছানায় পড়ে থাকি, সংসার চলবে কীভাবে? ছোট দুইটা বাচ্চা স্কুলে পড়ে। তাদের খাওয়াব কী, পড়াশোনা চালাব কীভাবে— চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি। ডাক্তার বলছেন, পুরোপুরি সুস্থ হতে হয়তো অনেক সময় লাগবে। তাহলে আমি আবার কাজে ফিরতে পারব তো? নাকি একেবারেই কাজ করার মতো অবস্থায় থাকব না?”

dhakapost

চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে পরিবার

পঙ্গু হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা প্রতিদিনই ব্যাটারিচালিত রিকশার দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি করছি। তাদের অনেকেই স্পট ডেথ হয়ে যায়, আর যারা বেঁচে আসেন তাদের অধিকাংশের মাথায় আঘাত বা ওপেন ফ্র্যাকচার হয়। ওপেন ফ্র্যাকচার মানে শুধু হাড় ভাঙা নয়; হাড় বাইরে বেরিয়ে এসেছে, রক্তক্ষরণ থামছে না। এমন দৃশ্য প্রতিদিনই আমাদের সামনে ঘটছে।”

“কিছুদিন আগে মাত্র ২২ বছরের এক তরুণ এসেছিল। রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছিল। এখন সে বেঁচে আছে ঠিকই, কিন্তু আর কথা বলতে পারছে না। নিজের বাবা-মাকেও চিনতে পারছে না। আরেকজন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ, হাত-পা ভেঙে আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের স্ত্রী-সন্তানেরা হাসপাতালের বারান্দায় বসে কাঁদছেন, কীভাবে চিকিৎসার খরচ চালাবেন সেই দুশ্চিন্তায়!”

 

ডা. জহিরুল বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর সময় এর চালকেরা একধরনের কৃত্রিম শক্তি পান। তারা ভাবেন এটা শুধু সাইকেল নয়, আবার পুরোপুরি মোটরগাড়িও নয়। কিন্তু এর গতি আছে। তাই অন্য গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে চান। কিন্তু তিন চাকার বাহনটি গতি সহ্য করতে পারে না। ব্রেক চাপলেই উল্টে যায়। তখনই ঘটে বড় দুর্ঘটনা। আমাদের ওয়ার্ডগুলোতে তাকালেই বোঝা যায়— একদিকে আহত রোগীর আর্তনাদ, অন্যদিকে পরিবারের মানুষের কান্না আর দুশ্চিন্তা। চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।”

ব্যাটারিচালিত রিকশায় এক বছরে ৮৭০ দুর্ঘটনা, নিহত ৮৭৫

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সারাদেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কারণে ৮৭০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত হয়েছেন ৮৭৫ জন, আহত হয়েছেন এক হাজার ৭৭৯ জন। শুধু পঙ্গু হাসপাতালেই ওই বছর গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন তিন হাজার ৯১ জন পুরুষ ও এক হাজার ৮৪ জন নারী।

dhakapost

চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে আরও ৩৭১টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত হয়েছেন ৩৭৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৭০৯ জন।

এই ক’দিনেই ১০ হাজার টাকা ধার করেছি। কাজের বাইরে আমি যদি মাসের পর মাস বিছানায় পড়ে থাকি, সংসার চলবে কীভাবে? ছোট দুইটা বাচ্চা স্কুলে পড়ে। তাদের খাওয়াব কী, পড়াশোনা চালাব কীভাবে— চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি। ডাক্তার বলছেন, পুরোপুরি সুস্থ হতে হয়তো অনেক সময় লাগবে। তাহলে আমি আবার কাজে ফিরতে পারব তো? নাকি একেবারেই কাজ করার মতো অবস্থায় থাকব নাআহত সাভারের পোশাকশ্রমিক আরিফ হোসেন

সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৬০ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এসব যানবাহনের কারণে প্রতিদিন প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গড়ে তিন থেকে পাঁচজন, প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে ১৫ থেকে ১৭ জন এবং প্রতিটি বিভাগীয় হাসপাতালে গড়ে ২০ জন আহত রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “অটোরিকশা ছোট বাহন হওয়ায় দুর্ঘটনায় এক-দুইজনের বেশি নিহত বা আহত হন না। এজন্য গণমাধ্যমে এগুলো তেমন গুরুত্ব পায় না। অথচ এই দুর্ঘটনাগুলো দেশের প্রতিটি পরিবারে গভীর ক্ষত তৈরি করছে। সারাদেশে যত ঘটনা ঘটে, তার মাত্র ১০ শতাংশ সংবাদে আসে। ফলে আসল চিত্র আড়ালেই থেকে যায়।”

“দেশের সরকারি-বেসরকারি চার হাজার হাসপাতালে প্রতি বছর গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হন। যারা ভর্তি হন না, তাদের সংখ্যা আলাদা। তাদের কোনো রেকর্ড থাকে না। অথচ এরা একইভাবে ভুক্তভোগী।”

দুর্ঘটনা না কমলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালক ডা. আবুল কেনান বলেন, ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশাজনিত দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। একসময় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনার রোগী আসত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে। এখন সংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে রিকশা ও অটোরিকশা দুর্ঘটনা। এমনকি মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য দুর্ঘটনার রোগীরাও জানাচ্ছেন, এসব দুর্ঘটনার পেছনে অনেক সময় দায়ী থাকছে ব্যাটারিচালিত রিকশা।

dhakapost

প্রতিদিন কতজন রোগী দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে আসছেন— এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হয় না। কারণ, ইমারজেন্সি মুহূর্তে রোগীরা ব্যথায় কাতরান, তখন তাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য নেওয়ার সুযোগ থাকে না। আমরা শুধু নাম-পরিচয় লিখে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করি। তবে, জরুরি বিভাগে ডিউটি করা চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি রোগী আসছেন ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশাজনিত দুর্ঘটনায়।”

রাজধানীর মূল সড়কে কোনোভাবেই রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচলের অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু বর্তমানে এগুলো প্রায় বাধাহীনভাবেই চলছে। এ অবস্থার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। প্রয়োজনে অনুমোদন দিতে হলে চালকদের প্রশিক্ষণ এবং গাড়ির লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি আনফিট রিকশা ও অটোরিকশা সড়কে একেবারেই যেন চলাচল করতে না পারে, সেই বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবেডা. আবুল কেনান, পরিচালক, নিটোর

“সড়ক দুর্ঘটনা এত বেড়ে গেছে যে, আমরা অনেক সময় রোগীদের জায়গা দিতে পারি না। চিকিৎসক ও নার্সরা দিন-রাত নিরবচ্ছিন্ন চাপের মধ্যে কাজ করছেন। কিন্তু দুর্ঘটনা যদি কমানো না যায় তাহলে এভাবে রাত-দিন পরিশ্রম করেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।”

 

করণীয় প্রসঙ্গে পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক বলেন, “রাজধানীর মূল সড়কে কোনোভাবেই রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচলের অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু বর্তমানে এগুলো প্রায় বাধাহীনভাবেই চলছে। এ অবস্থার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। প্রয়োজনে অনুমোদন দিতে হলে চালকদের প্রশিক্ষণ এবং গাড়ির লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি আনফিট রিকশা ও অটোরিকশা সড়কে একেবারেই যেন চলাচল করতে না পারে, সেই বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে ছয় হাজার ২৮৪ জন, ২০২২ সালে সাত হাজার ৭২৩ জন, ২০২৩ সালে ছয় হাজার ৫২৪ জন এবং ২০২৪ সালে সাত হাজার ২৯৪ জন প্রাণ হারান। শুধু ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই নিহত হন তিন হাজার ৬৬২ জন। অন্যদিকে, সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে সংখ্যাগুলো তুলনামূলকভাবে কম। তাদের হিসাবে ২০২৩ সালে পাঁচ হাজার ২৪ জন, ২০২৪ সালে পাঁচ হাজার ৪৮০ জন এবং চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দুই হাজার ৯৪৩ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যে তথ্য দিয়েছে তা আরও ভয়াবহ। তাদের হিসাব অনুযায়ী, শুধু ২০২১ সালেই বাংলাদেশে ৩১ হাজার ৫৭৮ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। যা স্থানীয় পরিসংখ্যানের তুলনায় বহুগুণ বেশি। তথ্যের এমন অমিল ইঙ্গিত দেয় যে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুতর ঘাটতি রয়েছে। এটি আইন প্রয়োগ ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সঠিক তথ্য-উপাত্তের অভাব নীতিনির্ধারণ ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ কারণেই নতুন সড়ক আইন প্রণয়নের আলোচনায় ‘তথ্য ব্যবস্থাপনা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরো খবর