বুধবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ২ ১৪৩২   ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho

কোনো পদক্ষেপেই কাজ হচ্ছে না, কে থামাবে ‘বাংলার টেসলা’?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫  

রাজধানীর রাস্তায় এখন নতুন আতঙ্কের নাম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। গলি, স্কুলগেট, ফ্লাইওভার বা মূল সড়ক— কোথাও নেই তাদের দাপট। সিগন্যাল মানে না, উল্টো পথে ছুটে চলে; যেন ট্রাফিক আইন কেবল কাগজে লেখা গল্প। প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। অথচ পুলিশ, সিটি কর্পোরেশন বা মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগেও থামছে না এদের দৌরাত্ম্য।

দুর্ঘটনায় ভয়ের নগরজীবন

‘বাংলার টেসলা’ খ্যাত এই রিকশায় উঠলেই যাত্রীদের ভর করে অনিরাপত্তা। হঠাৎ ব্রেক, অপ্রত্যাশিত মোড় কিংবা অতিরিক্ত গতিতে দুলে ওঠা— প্রতিটি মুহূর্তে ঝুঁকির ভীতি। ঢাকার মিরপুর থেকে মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান থেকে বাড্ডা— যাত্রীরা বলছেন, চালকেরা বেশিরভাগই নতুন, ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে অজ্ঞ, এমনকি প্রশিক্ষণও নেই। ফলে তাদের হাতে যাত্রা মানেই দোয়া-কালাম পড়তে পড়তে গন্তব্যে পৌঁছানো।

সরকারের নতুন পদক্ষেপ

এই অনিয়ম ঠেকাতে সরকার সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও চালকদের লাইসেন্স, ফিটনেস সনদ ও বিমার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ চালু হচ্ছে। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার এবং স্কুল জোনে ১৫ কিলোমিটারের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বুয়েটের নকশায় অনুমোদিত নতুন ই-রিকশা ছাড়া অন্যগুলো ধাপে ধাপে ফেজ আউট করা হবে।

নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ

প্রতিটি ই-রিকশার জন্য থাকবে ইউনিক রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও নম্বর প্লেট। এক এনআইডিতে নিবন্ধন করা যাবে কেবল একটি রিকশা। প্রতি দুই বছর অন্তর ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। চালকদের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ থাকতে হবে। লাইসেন্স নবায়নের সময় ট্রাফিক আইন ও সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে পুনঃপ্রশিক্ষণও নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিভঙ্গি

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান মনে করেন, রিকশা বন্ধ করে দেওয়াই সমাধান নয়। বরং এটির আকৃতি ও কাঠামো উন্নত করা, মানসম্মত যন্ত্রাংশ ব্যবহার এবং সঠিক প্রশিক্ষণই দুর্ঘটনা কমাতে পারে। তিনি বলেন, “রিকশাকে যুগোপযোগী বাহনে রূপান্তর করা ছাড়া মুক্তি নেই।”

বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

ঢাকায় বর্তমানে অনুমানিক ১২ লাখ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। সড়কের প্রায় ২০ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ এগুলো। সিটি কর্পোরেশনের নানা উদ্যোগ— যেমন কিউআর কোড, ভিন্ন রঙের রিকশা, নির্দিষ্ট জোন— কোনোটি বাস্তবায়ন হয়নি।

সরকার বলছে, ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সের আওতায় এনে ২ লাখ চালককে বৈধ কাঠামোয় আনা হবে। কিন্তু নগরবাসীর প্রশ্ন রয়ে গেছে— এত পরিকল্পনা ও নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও অনিয়ন্ত্রিত ‘বাংলার টেসলা’কে আদৌ থামানো যাবে তো?

এই বিভাগের আরো খবর