সোমবার   ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১৫ ১৪৩২   ০৯ রজব ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩২৭

সাতবছর অনুপস্থিত রেলের পাম্প অপারেটর চলছে হাজিরা-বেতন-টিএবিল

জাফর আহমেদ

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৩  

বাংলাদেশ রেলওয়ে কুমিল্লা পাম্প হাউজের মোঃ সফি মিয়া (FASBA-2) দীর্ঘ ছয় সাত বছর ধরে কাজ না করেই তিনি বেতন ও টিএ বিল নিচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে চাকরি না করেই বেতন এবং টিএ বিল নিচ্ছেন রেলের ওই কর্মচারী। বেতন এবং টিএ বিল থেকে ভাগ দিচ্ছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। যে কারণে কর্তৃপক্ষের চোখ বন্ধ। কুমিল্লা স্টেশনের পাম্প হাউজে সফি মিয়ার এই দায়িত্ব পালন করছে জয়নাল নামে বয়স্ক এক বহিরাগত লোক । শফি মিয়ার নামে রেলের বরাদ্দকৃত বাসা ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। ওই ভাড়া থেকে জয়নালকে প্রতিমাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিচ্ছেন সফি মিয়া। 
সফির অবর্তমানে ডিউটি করা জয়নাল আবেদীন রেলের কর্মচারী নয়। কুমিল্লায় স্থানীয়ভাবে বসবাসের সুবাদে পাম্প অপারেটরের কাজ করছেন জয়নাল। থাকেন রেলের বাসা দখল করে। 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জয়নাল বলেন , ফোরম্যান কিশোর বাবু ও লাকসামের বিদ্যুৎ লাইন ম্যান সুফিয়ানের নির্দেশে আমি এই পাম্পের দেখাশুনা করছি আজ প্রায় ৬-৭ বছর। এই পাম্পের মুল দায়িত্ব সফি মিয়ার। সে আজ ৬-৭ বছর চাকুরী করে না, সে আসেও না। সফি তার দেশের বাড়িতে তান্ত্রিক, জাদুটোনা ব্যবসা করে। সফিকে ফোন করলে বলে আমি সামনের মাসে আসছি এই কথা বলেই মাসকে মাস পার করে দেয়।
রেলের অফিসাররা তাকে কিছুই বলে না। সফি প্রতিমাসে লাইনম্যান সুফিয়ানের কাছে টাকা পাঠায় বিকাশে। এই টাকা সুফিয়ান, ফোরম্যান, অফিসের কেরানী মিলে ভাগ করে খায়।
সদ্য যোগদানকারী খালাসী সুকুল চন্দ্র ত্রিপুরা ১১ অক্টোবর বলেন, আমি গত ১৪ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা পাম্পে জয়েন্ট করি। এখানে আসার আগে চাঁদপুরে কর্মরত ছিলাম। আমি সফি মিয়ার নাম শুনেছি কিন্তু তাকে এখন পর্যন্ত দেখিনি। তাকে আমিও চিনিনা। আমি সকালে ডিউটিতে আসি বিকেলে চলে যাই। পাম্প দেখাশুনা করেন স্থানীয় এক মুরুব্বী জয়নাল মিয়া। 
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সফি মিয়া একজন তান্ত্রিক কবিরাজ। দিনভর জাদুটনা করেই তার দিন কাটে। তিনি চাকরি না করে দেশের বাড়ি কিশোরগঞ্জে তান্ত্রীক কাজে ব্যস্ত থাকেন। এভাবে সাত বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত সফি। কিন্তু কর্মস্থলে না থাকলেও তার নামে হচ্ছে হাজিরা, বেতন ও টিএ, বিল। তার টিএ, বিলে নামের স্বাক্ষর দেন অফিসের কর্মচারীরা। এজন্য বেতন ও টি এ বিলের একটা অংশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে দিয়ে তিনি এই চাকরি টিকিয়ে রেখেছেন। কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকলেও প্রতিমাসে অন্তত ১০ দিন সফি মিয়ার নামে টিএ বিল করা হয়। প্রতিদিন ৪৯০ টাকা হারে ১০ দিনে ৪ হাজার ৯০০ টাকা প্রতি মাসে টিএ বিল হয় সফি মিয়ার নামে। 
সফি মিয়ার বেতন এবং টিএ বিলের একটা অংশ প্রতি মাসে দিতে হয় তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিশোর চন্দ্র দেব বর্মা ও লাইনম্যান সুফিয়ানুর রহমানকে। এদেরকে খুশি রাখার কারণে সফি মিয়া দীর্ঘ ছয় সাত বছর কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকলেও তার বেতন টিএ বিল সহ কর্মস্থলের সবকিছুই ঠিক আছে। সফি মিয়াকে আরও নিরাপদে রাখতে সম্প্রতি কিশোর চন্দ্র তার বড় ভাই ইলেকট্রিক খালাসী পদে কর্মরত সুকুল চন্দ্র ত্রিপুরাকে কুমিল্লা পাম্প হাউজে বদলি করেছেন। সুকুল চাঁদপুরে কর্মরত ছিল। ১৩ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর থেকে বদলি হয়ে লাকসামে আসলে ১৪ সেপ্টেম্বর তাকে কুমিল্লা পাম্প হাউজে পদায়ন করা হয়। কাগজপত্রে কুমিল্লা পাম্প হাউজে দুইজন স্টাফ থাকলেও বাস্তবে সুকুল একজন। সুকুল রেস্টে গেলে ওই বয়স্ক বহিরাগত জয়নাল সফি মিয়ার দায়িত্ব পালন করে। । লাকসামের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) কিশোর চন্দ্র দেববর্মা ১১ অক্টোবর বলেন, শফি মিয়া নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত থাকে। আবার ১২ অক্টোবর রাতে বলেন, আপনার কাছে শুনে আমি শফিকে খবর দিয়েছি এবং সে ১২ অক্টোবর এসেছে তাকে আমি শাসন করেছি। বিদ্যুৎ লাইনম্যান সুফিয়ানুর রহমান বলেন, শফি মিয়া থেকে আমরা কোন টাকা পয়সা খাইনা। শফি মিয়া বলেন, আমিতো কর্মস্থলে থাকি এবং কাজ করি।

এই বিভাগের আরো খবর