সোমবার   ০৬ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ২১ ১৪৩২   ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho

স্বল্পসুদের ঋণে স্বস্তিতে পৌনে দুই লাখ নতুন কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০২৫  

খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ফসল ও শস্য উৎপাদনের জন্য ঋণ বিতরণে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। গত অর্থবছর মাত্র ৪-৫ শতাংশ সুদে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ পেয়েছেন পৌনে দুই লাখ কৃষক। স্বল্পসুদের এ ঋণে স্বস্তির শ্বাস নিয়েছেন তারা।

পাশাপাশি অন্য ব্যাংকে আমানত কমলেও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের এক হাজার ৩৮টি শাখা ও উপ-শাখার মাধ্যমে ব্যাংকটি সঞ্চয় সংগ্রহে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।


বিকেবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ হয়েছে এক হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এক লাখ ৭৮ হাজার ৩৮৬ জন নতুন কৃষক তিন হাজার ১১৬ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা পেয়েছেন।

ওই অর্থবছর মোট কৃষিঋণের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের (৮ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা) তুলনায় বেড়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ ২০২৪-২৫ অর্থবছর ছিল ৫ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের ৪ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার তুলনায় বেশি। চলতি অর্থবছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৮৯৫ কোটি টাকা।


গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এম হেলাল আহমেদ জনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সস্তা ঋণ অত্যন্ত জরুরি। কৃষি ব্যাংক এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকারের কৃষিনীতি বাস্তবায়নে অন্য ব্যাংককেও এগিয়ে আসতে হবে, নতুবা খাদ্য উৎপাদন কমে পণ্যের সরবরাহ সংকুচিত হয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, যা সাধারণ মানুষের জীবনে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। এবছর রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যার মধ্যে কৃষি ব্যাংকেই বরাদ্দ রয়েছে ৭ হাজার ৮শ কোটি টাকা।

আমাদের মাঠকর্মীরা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। এক হাজার ৩৮টি শাখার মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে আমরা আরও ভালো অবস্থানে যাবো বলে আশা করছি। খেলাপি ঋণ আদায়েও ইতিবাচক অবস্থান রয়েছে। গত তিন মাসে ১৫শ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে।- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রহিম

রেমিট্যান্স সংগ্রহেও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক চমক দেখিয়েছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকটি ১৯৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে, যা প্রায় ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ। দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহে এটি তৃতীয় স্থানে আছে। তবে সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্সে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে, যেখানে প্রথমে ইসলামি ব্যাংক এবং তৃতীয় অবস্থানে জনতা ব্যাংক।


করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ‘কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’ গঠন করা হয়। এই স্কিমের আওতায় প্রকৃত কৃষক ও খামারিদের ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। গত অর্থবছরে ছয়টি প্রণোদনা স্কিমের মাধ্যমে এক লাখ ৭৫ হাজার ১১২ জন কৃষককে মোট ৩ হাজার ৫৪ দশমিক ৯০ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ‘স্মল এন্টারপ্রাইজ খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’র মাধ্যমে গত অর্থবছর ৪ হাজার ৯৭৮ জন নারী উদ্যোক্তাকে ৫ শতাংশ সুদে ২৩৫ দশমিক ৬২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও সাশ্রয়ী সবুজ গৃহায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪শ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে ৫ শতাংশ সুদে ২৫৪ জন উদ্যোক্তাকে ১০ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক কৃষিখাতে সোলার ইরিগেশনের জন্য সুদের হার মাত্র ৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘রেমিট্যান্স সংগ্রহে কৃষি ব্যাংক আটটি সরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম এবং সব ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। অনলাইন ও ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে দ্রুত লেনদেন ও নিরাপদ ব্যবস্থাপনা প্রবাসীদের আস্থা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মাঠকর্মীরা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। এক হাজার ৩৮টি শাখার মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে আমরা আরও ভালো অবস্থানে যাবো বলে আশা করছি। খেলাপি ঋণ আদায়েও ইতিবাচক অবস্থান রয়েছে। গত তিন মাসে ১৫শ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে।’

এই বিভাগের আরো খবর