রোববার   ০৫ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ২০ ১৪৩২   ১২ রবিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১২

ইসরায়েলে গ্রেটা থুনবার্গসহ ফ্লোটিলা কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০২৫  

ইসরায়েলে গ্রেটা থুনবার্গসহ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক কর্মীদের ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন বিদেশি কর্মী। বন্দি শিবিরে গ্রেটাকে চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া, জোর করে ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খাওয়ানো, এমনকি শরীরে ইসরায়েলি পতাকা জড়িয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (৪ অক্টোবর) ফ্লোটিলার ১৩৭ কর্মীকে ইস্তাম্বুলে ফেরত পাঠায় ইসরায়েল। এদের মধ্যে ৩৬ জন তুরস্কের নাগরিক। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, মালয়েশিয়া, কুয়েত, সুইজারল্যান্ড, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা ছিলেন।

তুরস্কের সাংবাদিক এরসিন চেলিক স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, তিনি নিজ চোখে দেখেছেন, থুনবার্গকে ইসরায়েলি সেনারা মাটিতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং জোর করে ইসরায়েলের পতাকায় চুমু খাওয়াচ্ছে।


মালয়েশীয় অধিকারকর্মী হাজওয়ানি হেলমি ও মার্কিন নাগরিক উইন্ডফিল্ড বিবারও একই অভিযোগ করেছেন। তাদের ভাষ্য, থুনবার্গকে ঠেলে সরানো হয় এবং পতাকা হাতে ঘোরানো হয়।

‘এটি ছিল ভয়াবহ। আমাদের পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে,’ বলেন হেলমি। তিনি দাবি করেন, আটক কর্মীদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত করা হয়। বিবার অভিযোগ করেন, থুনবার্গকে ‘ভয়াবহভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল’ এবং ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের প্রবেশের সময় তাকে প্রচারণার হাতিয়ার বানানো হয়।

ইতালির সাংবাদিক লরেঞ্জো আগোস্তিনো বলেন, মাত্র ২২ বছরের এক সাহসী নারী গ্রেটা থুনবার্গকে অপমানজনকভাবে ইসরায়েলের পতাকায় মুড়িয়ে ট্রফির মতো প্রদর্শন করা হয়েছে।

তুরস্কের টিভি উপস্থাপক ইকবাল গুরপিনার আরও বলেন, আমাদের কুকুরের মতো আচরণ করা হয়েছিল। তিনদিন না খাইয়ে রাখা হয়, পানি দেয়নি—টয়লেটের পানি খেতে হয়েছে। ভয়াবহ গরমে আমাদের ঝলসে দেওয়া হচ্ছিল।

তুরস্কের আরেক কর্মী আয়সিন কানতোগ্লু জানান, তারা আটক কেন্দ্রে রক্তাক্ত দেওয়াল ও আগের বন্দিদের লেখা বার্তা দেখেছেন। ‘মায়েদের নাম ও সন্তানদের নাম খোদাই করা ছিল দেওয়ালে। আমরা আসলে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার সামান্য অভিজ্ঞতা পেয়েছি,’ তিনি বলেন।

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জানিয়েছেন, ২৬ ইতালীয়কে বহিষ্কার করা হয়েছে, তবে এখনো ১৫ জনকে ইসরায়েলি হেফাজতে রয়েছেন। ইতালির সংসদ সদস্য আর্তুরো স্কোত্তো বলেন, ‘আইনসম্মত কাজ করছিল ফ্লোটিলায় থাকা মানুষজন; অবৈধ কাজ করেছে তারা, যারা গাজায় সাহায্য পৌঁছাতে বাধা দিয়েছে।’
 

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠন আদালাহ জানায়, আটক কর্মীদের হাত জিপ-টাই দিয়ে বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়, ওষুধ দেওয়া হয়নি এবং আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগে বাধা দেওয়া হয়েছে।

তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, আটক ব্যক্তিদের পানি, খাবার, টয়লেট এবং আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

গত ১-২ অক্টোবর সুমুদ ফ্লোটিলার প্রায় ৪০টি নৌকা আটক করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী, যাতে ৪৫০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিলেন। এই হামলার পর ইসরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। সমালোচকদের মতে, ফ্লোটিলা আটক অভিযান প্রমাণ করেছে গাজার ওপর দীর্ঘদিনের অবরোধ সম্পূর্ণ অবৈধ।

 আগস্টের শেষ দিকে যাত্রা শুরু করা এই ফ্লোটিলা ছিল গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে ও ফিলিস্তিনিদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা।

এই বিভাগের আরো খবর