বৃহস্পতিবার   ১১ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩২   ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৩

মাহফুজ ও আসিফ: স্বল্প মেয়াদে তাদের অবদান ও প্রভাব কেমন ছিল?

নাজমুল হুদা

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫  

আজ হঠাৎ করেই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ পদত্যাগ করায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে বড় ধরনের আলোচনা শুরু হয়েছে। এই দুজন উপদেষ্টা সরকার গঠনে এবং নীতি নির্ধারণে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছিলেন। তাঁদের পদত্যাগ অপ্রত্যাশিত হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে—তাঁরা সরকারে থেকে কেমন করলেন? তাঁদের বিদায়ে নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় কী প্রভাব পড়তে পারে?

 

বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের উচ্চপর্যায়ে তাঁদের দেড় বছরেরও বেশি সময়ের কার্যকাল ছিল মিশ্র সাফল্য ও বিতর্কিত সিদ্ধান্তের সমন্বয়।

 

 

দুই উপদেষ্টাই সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নীতি এবং সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন। তাঁদের কার্যকালকে তিনটি প্রধান ভাগে বিশ্লেষণ করা যায়:

 

১. অর্থনৈতিক নীতি ও সংস্কার (আসিফ মাহমুদ)

 

অর্থনৈতিক নীতির ক্ষেত্রে আসিফ মাহমুদের প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। তিনি দেশের অর্থনীতিকে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য একাধিক কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রেখেছিলেন।

 

সফলতা (Pros)

ব্যর্থতা/সমালোচনা (Cons)
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যেও অর্থনীতির মৌলিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সহায়তা। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ: জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সফলতা দেখাতে পারেননি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা (IMF, World Bank) থেকে ঋণ প্রাপ্তি সহজ করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বেসরকারি বিনিয়োগ: বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়ানোর জন্য কার্যকর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীরগতি।
ডিজিটাল সংস্কার: অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় কিছু ডিজিটাল সংস্কারের সূচনা। শেয়ার বাজার: শেয়ার বাজারে আস্থা ফেরানো এবং বাজারকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।

অনেকেই মনে করেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর সিদ্ধান্তগুলো দীর্ঘমেয়াদী সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল, কিন্তু দ্রুত ফল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় জনমনে কিছুটা অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল।

 

২. প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও সুশাসন (মাহফুজ আলম)

মাহফুজ আলম মূলত প্রশাসনিক সংস্কার এবং সুশাসন নিশ্চিত করার দায়িত্বে ছিলেন। তবে এই ক্ষেত্রে তিনি আমলাতন্ত্রের প্রবল বাধার মুখে পড়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

 

 

সফলতা (Pros) ব্যর্থতা/সমালোচনা (Cons)
জবাবদিহিতা বৃদ্ধি: সরকারি দপ্তরে জবাবদিহিতা বাড়াতে কিছু নিয়ম চালু করার উদ্যোগ। আমলাতান্ত্রিক বাধা: ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতো বিশ্লেষকদের মন্তব্যের মতোই, আমলাতন্ত্রের প্রবল বাধার কারণে বড় ধরনের কোনো প্রশাসনিক সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থতা।
দুর্নীতি দমন প্রচেষ্টা: দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও শক্তিশালী করতে নীতিগত সুপারিশ। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ: ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ বা স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দৃশ্যমান ছিল না।
তথ্য প্রকাশ: সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জনগণের সামনে আনার ক্ষেত্রে কিছুটা স্বচ্ছতা দেখানোর প্রচেষ্টা। আইনি সংস্কার: নির্বাচনকালীন বা জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার সাধনে বিলম্ব।

তাঁর এই পদত্যাগ প্রশাসনিক সংস্কারের ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের ইচ্ছাই শেষ কথা কিনা, সেই প্রশ্নটিকে আরও জোরালো করেছে।

 

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই দুই উপদেষ্টার বিদায়ে সরকার পরিচালনার কৌশলগত ক্ষেত্রে কিছু শূন্যতা তৈরি হতে পারে:

  1. আস্থার সংকট: আকস্মিক পদত্যাগ জোট শরিক এবং জনমনে এক ধরনের আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে।

  2. নীতির ধারাবাহিকতা: অর্থনীতি এবং প্রশাসনিক সংস্কারের ক্ষেত্রে তাঁদের শুরু করা প্রক্রিয়াগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এখন নতুন চ্যালেঞ্জ।

  3. নির্বাচনী কৌশল: নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে সরকারের কৌশলগত পরামর্শদাতা হারানোটা বিএনপি এবং শরিক দলগুলোর চাপ মোকাবিলার ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে।

সব মিলিয়ে, বিদায়ী দুই উপদেষ্টা সরকারে থাকা অবস্থায় হয়তো সব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি, তবে তাঁরা কঠিন সময়ে সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের এই পদত্যাগ প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির দ্বন্দ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই বিভাগের আরো খবর