শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৫ ১৪৩২   ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪০৭

চাকরি  ও ভিসার নামে প্রতারণা: প্রতারক চক্রের ছয় সদস্য গ্রেফতার

আশরাফুল আলম সি্দ্দিকী

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০১৯  

বিদেশে চাকুরি ও ভিসা প্রতারণার দায়ে প্রতারক চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪। গ্রেফতাররা হলোÑ মোঃ লিটন (৩৫), সঞ্চিতা আক্তার ওরফে সানজিদা ওরফে দীপা (২৪), মেহেরুল্লাহ হোসেন (৫০), বিপাশা আক্তার (২৪), শফিক (৩৪) ও তোতা মিয়া মাল (৪৮)।  এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিপিইউ, জাল ভিসা, জাল ম্যানপাওয়ার কার্ড, জাল এয়ার টিকেট ও মানি রিসিপ্ট উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সাধারণ মানুষকে বিদেশে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে। তার চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের পরিচয় ও মোবাইল নম্বর সংযুক্ত না করে কর্মচারীদের মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে অফিসে আনতো। পরে ভুয়া ও বানোয়াট নানা কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিত। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ০১ আগষ্ট ২০১৯ তারিখ ১৮.৩০ ঘটিকায় র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ভূয়া ভিসা প্রস্তুতকারী প্রতারকচক্রের ০৬ সদস্য যথাক্রমে (১) মোঃ লিটন (৩৫), জেলা-বরগুনা, (২) সঞ্চিতা আক্তার সানজিদা  দীপা (২৪), জেলা-পটুয়াখালী, (৩) মেহেরুল্লা হোসেন (৫০), জেলা- মেহেরপুর, (৪) মোসাঃ বিপাশা আক্তার (২৪), জেলা- কুমিল্লা, (৫) মোঃ শফিক (৩৪), জেলা- শেরপুর, (৬) তোতা মিয়া মাল (৪৮), জেলা- মাদারীপুরদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং তাদের নিকট হতে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিপিইউ, জাল ভিসা, জাল ম্যানপাওয়ার কার্ড, জাল এয়ার টিকেট, মানি রিসিপ্ট প্রভৃতি উদ্ধার করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রতারণার কথা স্বীকার করে এবং প্রতারণার কলাকৌশল, তাদের সংগঠন ও প্রতারণা চক্রের নানাবিধ চমকপ্রদ তথ্য দেয় যা নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ

বিবেক বর্জিত এই প্রতারক চক্রের প্রতিটি সদস্য নৈতিকতা ও মানবিকতার পৃষ্ঠে পদাঘাত করে দেশের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে। দেশের সাধারন মানুষকে বিদেশে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের বিপুল পরিমান টাকা। এই চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অফিস ভাড়া করে জাঁকজমকপূর্ন চোখ ধাঁধাঁনো ডেকোরেশন করে যা গ্রাহককে সহজেই আকৃষ্ট করে। চক্রটি বিভিন্ন সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রথমে অফিসের বিভিন্ন পদের লোক নিয়োগ করে থাকে। তাদের কাছেও নিজেদের প্রকৃত নাম পরিচয় গোপন করে রাখে। 

প্রতারক চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে অফিস তৈরি করার পর বিদেশে চাকুরী ও ভিসা প্রসেসের কথা বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। বিজ্ঞাপনে তারা নিজেদের কোন মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে না। বিজ্ঞাপনে তাদের নিয়োগকৃত কোন একজন কর্মচারীর নাম্বার দিয়ে থাকে। ঐ কর্মচারীর কাজ হয় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যারা চাকুরী ও ভিসা প্রসেসের জন্য যোগাযোগ করবে তাদের নাম ও মোবাইল নাম্বার রেজিষ্টারে লিখে রাখা এবং তাদেরকে অফিসে আসার জন্য আমন্ত্রন জানানো। যারা যারা বিদেশে চাকুরীর আশায় তাদের অফিসে আসে, নিয়োগকৃত কর্মচারীদের কাজ হচ্ছে তাদেরকে অফিসের পরিচালকের সাথে দেখা করানো। পরিচালক বিদেশে চাকুরী প্রত্যাশীদের চাকুরীসহ বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে আশ্বস্ত করে এবং জানায়, নির্ধারিত টাকার অর্ধেক ভিসা পাবার আগে দিতে হবে এবং বাকি অর্ধেক ভিসা হাতে পাবার পর দিতে হবে। পরবর্তীতে প্রতারক চক্রটি একটি নির্দিষ্ট তারিখে ভিসা, ম্যানপাওয়ার কার্ড ও এয়ার টিকেট হস্তান্তর করে। চাকুরী প্রত্যাশীরা যখন বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এয়াপোর্টে যায় তখন জানতে পারে তাদের ভিসা, ম্যানপাওয়ার কার্ড ও এয়ার টিকেট জাল। এয়ারপোর্ট থেকে তারা সবাই যখন ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে তখন জানতে পারে তারা এবং অফিসের কর্মচারীরা প্রতারক চক্রের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে। প্রতারকচক্রের মূল হোতা লিটন ওরফে সোহান আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে অফিসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতো। যার কারণে তাকে কেউ কখনো দেখেনি। তারা দীর্ঘদিন থেকে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। 

প্রতারক চক্রটি ২০১৩ সাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে (এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এন্ড টুর, ব্যাঙ্গল টুরস এন্ড ট্রাভেলস, আলিফ টুরস এন্ড ট্রাভেলস, আরেফিন ট্রাভেলস, সানিম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আশিক ট্রাভেলস, বেঙ্গল ট্রাভেল্স, এমএম ট্রাভেল্স, বাপ্পিমনি এন্টারপ্রাইজ এবং হাবিব ইন্টারন্যাশনাল) ট্রাভেল এজেন্সি খুলে সাধারণ মানুষদের  সাথে প্রতারণা করে আসছিল এবং হাতিয়ে নিচ্ছিল কয়েক কোটি টাকা। এভাবেই দিনের পর দিন প্রতারিত হয়ে আসছে শত শত সহজ সরল সাধারণ মানুষ। 
 

এই বিভাগের আরো খবর