বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৪ ১৪৩২   ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৬

গণঅভ্যুত্থানের ১৫ মাসেও বদলায়নি চিত্র: কারা হেফাজতে ১১২ জনের মৃত্

নাজমুল হুদা

প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫  

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে বড় পরিবর্তন এলেও কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দিদের মৃত্যুর মিছিলে কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত সরকারের আমলে যেভাবে কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটত, বর্তমান সময়েও সেই সংখ্যা প্রায় একই। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যমতে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী গত ১৫ মাসে কারা হেফাজতে ১১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

 

নিহতদের স্বজনরা বারবার ‘চিকিৎসায় অবহেলা’র অভিযোগ তুললেও কারা কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতাল প্রশাসন তা অস্বীকার করে আসছে।

 

 

সম্প্রতি আলোচিত হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর আহমেদ ২৯ নভেম্বর রাতে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সাড়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তানভীর দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তাঁর ভাই শামীম আল মামুনের অভিযোগ, "অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে ফেলে রাখা হয়েছিল, ঠিকমতো খাবারও দেয়া হয়নি। এমনকি হাই সিকিউরিটিতে রেখে শারীরিক অত্যাচারও করা হয়েছে।"

 

একই অভিযোগ বনানী ১৯ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা লীগের সভাপতি মনোয়ারা মজলিশের পরিবারের। গত ২৬ নভেম্বর ঢামেকে মারা যান তিনি। তাঁর স্বামী মজলিস মিয়ার দাবি, দুইদিন হাসপাতালে থাকলেও তাঁর স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়নি।

 

 

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী:

  • বিগত ১৫ মাসে মৃত্যু: ১১২ জন।

  • ২০২৫ সালের ১১ মাসে: ৯৫ জন (যা গত বছরের চেয়েও বেশি)।

  • ২০২৪ সালের ১২ মাসে: ৬৫ জন।

  • গত ৫ বছরে মোট মৃত্যু: ৪১২ জন।

 

 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, "কারাগার থেকে আসা রোগীদের অবহেলার সুযোগ নেই। তবে অনেকে ডিভিশন সুবিধা না পেয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেন। অনেকে সুস্থ হওয়ার পরও হাসপাতালে থাকতে চান, যা সম্ভব হয় না।"

 

অন্যদিকে, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন স্বীকার করেছেন কিছু সীমাবদ্ধতার কথা। তিনি জানান, কারাগারে ৪১ জন আবাসিক ডাক্তারের পদের বিপরীতে মাত্র ২ জন কর্মরত আছেন। পর্যাপ্ত আইসিইউ সুবিধাও নেই। তিনি বলেন, "ইমারজেন্সি হলে সরাসরি ডাক্তার পাই না, নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠাতে হয়। এতে কিছুটা দেরি হতে পারে।"

 

 

মানবাধিকার সংগঠন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, "অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট পুরোপুরি ভায়োলেট করা হচ্ছে। গত সরকারের যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম, নতুন সরকার আসার পরও সেই পরিবর্তনের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না।"

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বন্দিদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে কারাগারের চিকিৎসা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং নিয়মিত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা জরুরি।

এই বিভাগের আরো খবর