বুধবার   ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১৭ ১৪৩২   ১১ রজব ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৮

খালেদা জিয়ার বিদায়ে শোকে স্তব্ধ বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫  

মঙ্গলবার সকাল ৬টা। সূর্যের আলো ফোটার আগেই দেশের আকাশটা হঠাৎই যেন অস্বাভাবিকভাবে ভারি হয়ে ওঠে। ঘন কুয়াশা আর হিম বাতাসেও এক ধরনের স্তব্ধতা, অজানা শূন্যতার হাহাকারে ভরা। ঠিক সেই সময়ে পৃথিবীকে চিরবিদায় জানালেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ খবর বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো দেশ। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার চোখ আজ অশ্রুতে সিক্ত।

 

 

মঙ্গলবার দিনভর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের পথে নামে শোকাতুর মানুষের ঢল। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কান্নার শব্দে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ। হাসপাতালের প্রধান ফটক পরিণত হয় আবেগ ও শোকের এক প্রান্তরে। ভেতরে বিএনপির শীর্ষ নেতারা অবস্থান করলেও বাইরে হাজারো মানুষ প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় করেন।

 

নিরাপত্তার কড়াকড়ি ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে শত শত মাইল দূর থেকে ছুটে এসেছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের অনেককেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করতে দেখা যায়।

 

 নারায়ণগঞ্জ থেকে ১৩ বছরের নাতিকে নিয়ে ছুটে এসেছেন এভারকেয়ারের সামনে। টেলিভিশনে মৃত্যুর খবর শুনে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভেতরে ঢুকতে না দিলে ব্যারিকেডের পাশেই বসে অঝোরে কাঁদছিলেন তিনি। চোখ মুছে বললেন, “খালেদা জিয়াকে মায়ের মতোই ভালোবাসি। খবর পেয়ে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে আসছি।”

 

 বগুড়ার সোনতলা থেকে আসা এই বৃদ্ধ ভোরে ফজরের নামাজ শেষে হাঁটতে বেরিয়ে ফেসবুকে মৃত্যুর খবর পান। পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়েই বাসে করে সরাসরি ঢাকায় চলে আসেন। তাঁর ভাষ্য, “মনকে বুঝাতে পারিনি, তাই দ্রুত চলে এসেছি।”

 

 চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা এই শিক্ষার্থী বলেন, “প্রিয় নেত্রীকে তো আর দেখা হবে না। আর তো তাঁর ডাকে কর্মসূচিতে আসা হবে না।”

 

 

 

শুধু হাসপাতাল নয়, বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও ছিল নেতাকর্মীদের কান্নার রোল। অনেককেই বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যেতে দেখা যায়। সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতেও শোকের মাতম চলছে। নেতাকর্মীরা বলছেন, তাঁরা আজ শুধু একজন রাজনীতিককে নয়, বরং একজন অভিভাবক ও নির্ভরতার শেষ আশ্রয়কে হারিয়েছেন।

 

 

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার দেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। আজ বুধবার জানাজার দিন দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে সাধারণ ছুটি। অন্যদিকে বিএনপি ঘোষণা করেছে ৭ দিনের শোক কর্মসূচি। নেট দুনিয়াতেও আজ কেবলই শোকগাথা; সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনরা তাঁর আপসহীন নেতৃত্বের স্মৃতিচারণ করছেন।

 

 

আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শেরে বাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে স্বামী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।

 

এই বিভাগের আরো খবর