বুধবার   ২৯ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ১৪ ১৪৩২   ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৮

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন কতটা প্রস্তুত প্রশাসন

সুমন ইসলাম

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৫  

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। হাতে রয়েছে তিন মাসের কিছু বেশি সময়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের আয়োজন করলেও ভোটগ্রহণে মূল ভূমিকা পালন করে প্রশাসন। প্রশ্ন উঠছে—বর্তমান প্রশাসন কি আদৌ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত?

 

প্রশাসনের গঠন ও অবস্থান বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৫ মাসে প্রশাসন পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। নেতৃত্বে থাকা অনেকে এখনো নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারেননি। ফলে প্রশাসনের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

 

তবে সাবেক আমলা ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশাসনের সামনে এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এজন্য যোগ্য, সাহসী ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। একই সঙ্গে কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের নিশ্চিত করতে হবে—নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করলে ভবিষ্যতে শাস্তির মুখে পড়তে হবে না।

 

একজন সাবেক সচিব বলেন, “ভোট কেমন হবে, তা নির্ভর করছে ডিসি ও ইউএনও পদে কাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তার ওপর। তাদের কমিটমেন্ট, নিরপেক্ষতা এবং নৈতিক দৃঢ়তা নিশ্চিত করতে হবে।”

 

গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনের কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আসে। অনেক কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক অবসরে যান বা ওএসডি হন, ফলে প্রশাসনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। নতুন করে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে চুক্তিভিত্তিক, ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা আসেনি।

 

একজন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ বলেন, “প্রশাসনের মনোবল এখনো নড়বড়ে। তাদের মনে ভয় আছে—সরকার বদল হলে তারা বিপদে পড়বেন। এই ভয় না কাটলে ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়।”

 

অন্য এক সাবেক সচিব বলেন, “১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রশাসনের ওপর মানুষের আস্থা ছিল। সেই আস্থা এখন অনুপস্থিত। বর্তমান সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে হলে কঠোর বার্তা দিতে হবে যে, নিরপেক্ষ কর্মকর্তারাই পদায়িত হবেন।”

 

প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন জনপ্রশাসন সচিব এহছানুল হক দায়িত্ব নিয়েই বলেন, “নির্বাচনকালীন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা দেওয়া আমার দায়িত্ব—এই দায়িত্ব আমি নিলাম।”

 

রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন। বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াত সবাই প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের দাবি—দলীয় অনুগত কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে।

 

অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই নির্বাচন-পূর্ব বদলি ও পদায়নের বিষয়টি তদারকি করবেন। সম্প্রতি বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেছেন, “নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যাবতীয় রদবদল আমার তত্ত্বাবধানে হবে। জেলা প্রশাসক পদে যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ দেওয়া হবে। শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য যা প্রয়োজন, তা আমরা করব।”

 

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, “এখনো সময় আছে। যদি যোগ্য ও চৌকস কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং মাঠ প্রশাসনকে উৎসাহিত করা যায়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তবে সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে—নতুন ডিসি-ইউএনওদেরও এলাকা বুঝতে সময় লাগবে।”

 

বিশেষজ্ঞদের সার্বিক মত—বর্তমান প্রশাসন এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়, তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, যোগ্য পদায়ন ও মনোবল পুনর্গঠনের মাধ্যমে এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা জাগিয়ে রাখা সম্ভব।
 

 

এই বিভাগের আরো খবর