রোববার   ১৯ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ৪ ১৪৩২   ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৩

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আদেশের প্রস্তুতি, আইনি বৈধতা নির্ধারণে গণভোট

তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২৫  

রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত **জুলাই জাতীয় সনদ** বাস্তবায়নে **আদেশ জারির উদ্যোগ** নিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে নিজেদের **চূড়ান্ত সুপারিশ** সরকারকে দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সনদ বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে একটি **সরকারি আদেশ জারি** করা হবে, যার ভিত্তিতেই **গণভোটের আয়োজন** করা হবে। আদেশেই গণভোটের ধরন ও পদ্ধতি নির্ধারণ থাকবে, এবং সেটিই হবে জুলাই সনদের **আইনি ভিত্তি**।

 

শনিবার কমিশনের বৈঠকে আদেশের কাঠামো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আদেশের নাম এখনো ঠিক হয়নি। বিএনপি ‘সাংবিধানিক আদেশ’ নামে আপত্তি জানিয়েছে, তাই বিকল্পভাবে ‘সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ নামটি বিবেচনায় রয়েছে।

 

বৈঠকে উপস্থিত আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা **আসিফ নজরুল** জানান, কমিশন পরে প্রধান উপদেষ্টা **ড. মুহাম্মদ ইউনূসের** সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে তিনি বলেন, জুলাই সনদে ঘোষিত সংস্কার কার্যকর ও টেকসই করতে আদেশ জারির বিকল্প নেই। আলোচনায় আরও বলা হয়, সনদের বাস্তবায়ন এমন হতে হবে যাতে ভবিষ্যতে **ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ

হস্তান্তর** নিশ্চিত হয় এবং **সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া জটিল** করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করা যায়।

 

কমিশনের সহসভাপতি **অধ্যাপক আলী রীয়াজ** জানিয়েছেন, রোববার বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে বৈঠকে আদেশের খসড়া ও গণভোটের কাঠামো চূড়ান্ত করা হবে। বিশেষজ্ঞরা এর আগে পরামর্শ দিয়েছিলেন—প্রথমে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করতে। যেহেতু বর্তমান সংসদের **সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা নেই**, তাই তারা পরামর্শ দিয়েছেন, গণভোটের মাধ্যমে **পরবর্তী সংসদকে কন্সটিটুয়েন্ট ক্ষমতা** দেওয়া হবে, যাতে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করতে পারে।

 

কমিশনের মেয়াদ ৩১ অক্টোবর শেষ হচ্ছে। তার আগেই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

**বিভিন্ন দলের অবস্থান**
জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বিএনপি চাইছে **নির্বাচনের দিন গণভোটের আয়োজন**, যাতে বিদ্যমান আইনের আওতায় তা সম্পন্ন করা যায়। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ ১২টি দল বলছে, সনদের **আইনি বৈধতা নিশ্চিত করতে হবে আদেশ জারির মাধ্যমে**। তাদের প্রস্তাব, নভেম্বরের মধ্যে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়ে সনদের সব ৮৪টি সংস্কার অনুমোদিত হলে তা পরবর্তী সংসদে কার্যকর হবে।

 

কমিশন সদস্যরা মনে করছেন, বর্তমান আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে আদেশ জারি ছাড়া বাস্তবায়নের অন্য পথ নেই। কারণ ১৯৯১ সালের গণভোট আইন কেবল রাষ্ট্রপতি অনুমোদন যাচাইয়ের জন্য তৈরি হয়েছিল, যা এই প্রক্রিয়ায় টেকসই হবে না।

 

সূত্র বলছে, সংবিধানের বিদ্যমান কাঠামোয় সাংবিধানিক আদেশ জারির ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির নেই। তাই কমিশন প্রস্তাব করছে, জুলাই সনদের ভিত্তিতে গঠিত সরকার নিজস্ব **অন্তর্বর্তী কর্তৃত্বে আদেশ জারি করবে**, যার বৈধতা পরবর্তীতে গণভোটে অনুমোদন পাবে।

 

**ভিন্নমত ও গণভোটের প্রশ্ন**
জুলাই সনদে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের **নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত)** রয়েছে। শুরুতে দুটি পৃথক ব্যালটের প্রস্তাব থাকলেও এখন একটি প্রশ্নেই গণভোটের সিদ্ধান্ত হতে পারে। আদেশে উল্লেখ থাকবে, ভিন্নমতের বিষয়গুলো আগামী সংসদ কীভাবে বিবেচনা করবে এবং পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে কিনা।

 

বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এক সদস্য বলেন, “গণভোটে পাওয়া **জনরায়ের আইনি ভিত্তি** রাজনৈতিক দলের ভিন্নমতের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে থাকবে।”

 

ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী **মনির হায়দার** জানান, “সনদ বাস্তবায়নে আদেশ জারি নিয়েই এখন আলোচনার মূল ফোকাস। কীভাবে ও কী নামে তা করা হবে—সেটি শিগগিরই নির্ধারণ হবে।”
 

 

এই বিভাগের আরো খবর