বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৪ ১৪৩২   ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৭৮৮

আমরা অবহেলিত বিপনণ যোদ্ধা ও বিক্রয়কর্মী

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০  

শ্রমিক, কৃষক, দিনমজুর,কামার-কুমার এককথায় সর্বস্তরের মানুষের ত্যাগ আর অংশগ্রহনে মহান মুক্তিযুদ্বের মধ্যদিয়ে অর্জিত আমাদের এই বাংলাদেশ-আমাদের এই লাল সবুজের পতাকা। জাতির পিতার স্বপ্নে গড়া এই বাংলাদেশে হাজার শ্রেনী-পেশার মানুষ প্রতিদিন তাদের জীবিকার জন্য ছুটে চলছে।এই ছুটে চলার মাঝে বর্তমান বিশ্ব মহামারী (কোভিড-১৯)সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশকেও সংকটে ফেলেছে। এই মহামারী বাংলাদেশের অনেক শ্রেনী পেশার মানুষকে অর্থনৈতিক ভাবে মারাত্নক সংকটে ফেলে দিয়েছে।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বংগবন্দ্বু কন্যা শেখ হাসিনা অনেক পেশার মানুষের জন্য (বিশেষ করে সেবা খাত সমূহ) বিশেষ প্রনোদনা দিয়েছেন।অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাত হলো বিক্রয়  ও বিপনন খাত!  এ খাতে  বাংলাদেশে প্রায়  ২৫ লক্ষ দক্ষ লোক  কাজ করে। 

 বর্তমান বিশ্ব ও বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিতে  শুধু বিক্রয়কর্মী নয়, সকল কর্মজীবি ও শ্রমজীবি মানুষের অবস্থা অনেক অবহেলিত। বিপনণ ও বিক্রয়  যোদ্ধারা  সবচেয়ে বেশী অবহেলিত অবস্হায়  আছে। বাংলাদেশে  যে সব সেবাখাত আছে তার মধ্যে সরকারীভাবে গত কয়েক  মাসে ( ব্যাংক সেবাখাত, পুলিশ সেবাখাত, ডাক্তার সেবাখাত নিসন্দেহে) অনেক খাতের কর্মীরা  সাহায্য সহযোগিতা  পেয়েছেন। কিন্তু আরো বড় একটি সেবাখাত আছে পর্দার অন্তরালে সেটা সম্পর্কে আমরা জানি না!!! 

আগেই বলেছি  বর্তমানে বাংলাদেশে  প্রায় ২৫ লক্ষ  বিক্রয় ও বিপনণকর্মী আছে। এই ২৫ লক্ষ  বিক্রয় ও বিপনণ কর্মীর কাজ হলো প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিটি হাট বাজার,  দোকানে দোকানে ঘুরে মানুষের জন্য  প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য, ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী  পৌঁছে দেয়া।  বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে, শীতে কাঁপতে কাঁপতে ও করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে এবং কোন রকম নিরাপত্তা ছাড়াই মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত  পরিবারের ছেলেরা এই কাজ করে থাকেন।  এই বিক্রয়কর্মীরা দেশের অর্থনীতির চাকাকে  সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন । অথচ তাদের প্রতি সরকারের কোন নজর নেই। বর্তমান মহামারীতে অনেক কোম্পানী বন্দ্ব হয়ে গেছে।এতে করে অনেক বিক্রয়কর্মী বেকার হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি  অর্থনৈতিক  মন্দাভাবের কারনেও  অনেক প্রতিষ্ঠান  তাদের কর্মীদের বেতন ভাতাও নিয়মিত দিতে পারছেন না। অথবা আংশিক বেতন দিতে পারছেন। এই অবস্হায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিক্রয় ও বিপনন যোদ্বারা সবচেয়ে বেশী মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

 এর বাইরে দুর্ঘটনায় মৃত্যু, মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় পংগু হওয়া  এবং কঠিন ও জটিল রোগে আক্রান্ত হলে চিকিত্সার অভাব!  সব মিলিয়ে এই পেশার লোকজন এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে জীবন পার করছে। এরপর  বড় সমস্যা হলো চাকুরীশেষে অনেক কোম্পানির কর্মীরা শুন্য হাতে বাড়ি ফিরে। ফলে বৃদ্ব বয়সে তারা পৃথিবীর সবচেযে অবহেলিত জীবিত প্রানীতে পরিনত হয়। 

গত এপ্রিল-মে মাসে  "আমরা বিপনন যোদ্বার " পক্ষ থেকে ৯ দপা দাবী মাননীয় সরকারের কাছে জানিয়েছি। এরমধ্যে অন্যতম দাবী হলো - চাকুরীর স্হায়ীত্ব এবং সরকারের সহযোগীতায় সব কোম্পানি গুলোর এক ও  অভিন্ন  নীতিমালা প্রনয়ন, 
সব কোম্পানিতে বিক্রয় ও বিপনন কর্মীদের জন্য জীবন বীমার ব্যাবস্হা  বাধ্যতামুলক ভাবে নিশ্চিত  করা,  প্রভিনেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুয়িটির ব্যাবস্হা নিশ্চিত করা,প্রতি মাসে চিকিৎসা ভাতা প্রদান এবং লক্ষ্য মাত্রার অজুহাতে চাকুরীচ্যুত না করা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের নিকট  আমাদের দাবী এই ২৫ লক্খ বিপনন যোদ্বার দিকে একবার চোখতুলে তাকান।এই ২৫ লক্ষ পরিবারকে কষ্টকর ও মানবতার জীবন থেকে মুক্তি দিন।

জাতির জনকের সুযোগ্য  কন্যা,  মানবতার নেত্রী , জননেত্রী শেখ হাসিনাই পারেন এই বিপনন যোদ্বাদের পাশে দাঁড়িয়ে, তাদের দিকে একটু করুনার দৃষ্টিতে তাকাতে। স্বাধীনতার এত বছরে কোন সরকারই যা পারেনি তা একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেই সম্ভব। কারন তিনি বংগরত্ন,বংগনেত্রী। সর্বোপরি তিনি জাতির জনকের কন্যা। 

প্লিজ আমাদের তথা ১৭ কোটি মানুষের অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,  আমাদের দিকে একবার তাকান।   রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই অবহেলিত বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, শোষিত, নির্যাতিত, নিস্পেষিত, পদদলিত, ভাগ্যাহত  বিপনন ও বিক্রয় পেশার  এ  লোকগুলোর ভাগ্য উন্নয়ন একমাত্র আপনার সরকারের পক্খেই সম্ভব

সত্যিকারভাবে এখন পর্যন্ত যদিও  সরকারী তরফ থেকে এই পেশার লোকজনের  জন্য কোন সুযোগ-সুবিধা নাই। তবুও আমরা তাকিয়ে আছি সরকারের আন্তরিকতা   ও সহযোগিতার উপর।  

লেখকঃ সভাপতি
"আমরা বিপনন যোদ্বা

এই বিভাগের আরো খবর