মঙ্গলবার   ০৪ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ২০ ১৪৩২   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৫

আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতির ভাতিজার পদায়ন - সমালোচনার ঝড়

গোবিপ্রবি প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০২৫  

 

 

 

 

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও জন্মনিবন্ধনে জন্মতারিখ ভিন্ন থাকলেও গত ছয় বছর ধরে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন হোসাইন চৌধুরী । নিয়ম অনুযায়ী পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য মিল না থাকলে নিয়োগ ও বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও, এতদিন বিষয়টি অগোচরে থেকে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের থেকে জানা গেছে, গত আওয়ামী আমলে বিভিন্ন উপায়ে অনিয়ম করে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছিল। সনদ,বয়স,অনুমোদন, অভিজ্ঞতা নিয়ে ছলচাতুরী করে নিয়োগ প্রদানের অভিযোগে নিয়মিত গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকে। হোসাইন চৌধুরীর নিয়োগের সময়ে জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সভাপতি এমদাদুল হকের ভাতিজা মাহামুদুর রহমান ওরফে উজ্জ্বল চৌধুরী ছিলেন কর্মচারী নেতা। সম্পর্কে উজ্জ্বল চৌধুরীর বোন জামাই হন হোসাইন চৌধুরী। এদিকে পদোন্নতির বিষয়ক যাচাই-বাছাই কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরীর ভাতিজা উজ্জ্বল চৌধুরী।  শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রশাসন শাখায় দায়িত্ব পালন করছেন এই কর্মকর্তা। জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতার নিকট আত্মীয় থেকে আওয়ামীপন্থী এই কর্মচারী নেতা থেকে কর্মকর্তা হওয়া উজ্জ্বল চৌধুরী সরকারের পট পরিবর্তনের পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখার একটিতে পদায়ন ও পরিচালনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরাও।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি দূর্জয় শুভ বলেন, 

অবৈধ নিয়োগ গুলো বের করা হোক, আশাকরি এদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। কারো সাথে অন্যায় বা জুলুম না হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে আমাদের।  জুলাই গাদ্দারদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ জায়গায় আনা এটা জুলাইয়ের আদর্শের সাথে বেঈমানী।

এ বিষয়ে জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বিলুপ্ত হওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গোবিপ্রবি শাখার আহ্বায়ক বেলাল হোসেন আরিয়ান বলেন, দেশে স্বৈরাচার পতনের পর নতুন আশার সঞ্চার হলেও, দুঃখজনকভাবে গোবিপ্রবির কিছু দায়িত্বশীলের আচরণে এখনো পুরনো স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। দায়িত্ব ও ক্ষমতা যেন ন্যায্যতার পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠছে। এটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক যা কখনো কাম্য নয়।

এদিকে, উজ্জ্বল চৌধুরীর বোন জামাই হোসাইনের জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনের কাগজপত্র যাচাই করে ভিন্ন তথ্যের প্রমাণ মিলেছে। জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী উক্ত কর্মচারীর জন্ম সন ১৯৮৮ সালের জুনের ১ তারিখ সাল হলেও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম সাল ১৯৮১ সালের মার্চের ১ তারিখ। সালের পাশাপাশি তারিখেও ভিন্নতা দেখা গেছে। ফলে চাকুরি গ্রহণ ও মেয়াদে অনৈতিক সুবিধা পাচ্ছেন এই কর্মচারী। জন্ম তারিখে ভিন্নতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত কর্মচারী। প্রতিবেদককে তিনি বলেন,"চাকুরির সময় জন্মনিবন্ধন দিয়ে আমি চাকুরিতে জয়েন করি। জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করি নি। তারিখে ভুল আছে জাতীয় পরিচয়পত্রে।"

কত বছর ধরে চাকুরি করছেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি ৬ বছর ধরে চাকুরিতে যুক্ত আছেন বলেও জানান। 

এত বছরেও কেন সংশোধন করেন নি নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধভাবে চাকুরি করছেন ও সুবিধা নিচ্ছেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন দেড় বছর আগে সংশোধনের জন্য গিয়েছিলাম। আবেদনের কোন প্রক্রিয়ায় আছে কিংবা আদৌ আবেদন করেছিলেন কিনা জিজ্ঞাসা করলে তার সদুত্তর দিতে পারেন নি। এ সময় উজ্জ্বল চৌধুরী তার স্ত্রীর ভাই বলেও স্বীকার করেন। এ বিষয়ে উজ্জ্বল চৌধুরী আত্মীয়তার বিষয় স্বীকার করে বলেন,প্রশাসন থেকে চাকুরির বিষয়ে কথা বলতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না। চাকুরি কিভাবে হয়েছে তা প্রশাসন জানে।

এ বিষয়ে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আজিজুর রহমান শান্ত বলেন, জুলাই আন্দোলন পরবর্তীতে নতুন প্রশাসনের কাছে আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল যা বাস্তবায়ন হয় নি। জুলাই বিরোধী ও আওয়ামী রেজিমে অনিয়ম করা অনেক শিক্ষক কর্মকর্তা পদোন্নতি পাচ্ছেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন যা আমাদের হতাশ করে। জুলাই আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে প্রদান করা শিক্ষার্থী থেকে অনেক শিক্ষক কর্মকর্তারই এখন পদায়ন হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়, যা আমাদের হতবাক করে।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. এনামুজ্জামান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি।

এই বিভাগের আরো খবর