বুধবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১০ ১৪৩২   ০৪ রজব ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২০

যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে গাজার বড়দিন: ‘কিছুই আর আগের মতো নেই’

তরুণকণ্ঠ অনলাইন

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫  

গাজার ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরা টানা তৃতীয় বছরের মতো এবারও বড়দিনে কোনো উদ্‌যাপন করছে না। ইসরায়েলের বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ও মানবিক সহায়তায় কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে উৎসবের পরিবেশ পুরোপুরি নিভে গেছে।

 

৩১ বছর বয়সী গাজার খ্রিস্টান যুবক ইউসুফ তারাজি জানান, গণহত্যার শোকের মধ্যে এ বছর বড়দিনের প্রতীক সেই বিশাল ক্রিসমাস ট্রি–ও আর জ্বলে উঠবে না।

 

তিনি বলেন, “গাজায় যে পরিস্থিতি চলছে, তার কারণে চার্চগুলো তাদের সীমানার বাইরে সব আয়োজন স্থগিত করেছে। আমরা শুধু চার্চের ভেতরে প্রার্থনার মাধ্যমে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন পালন করছি। কিন্তু আমাদের আনন্দ অসম্পূর্ণ।”

 

যুদ্ধের আগে গাজায় চার্চ প্রাঙ্গণে আয়োজন হতো বড়দিনের সমাবেশ, সড়কে লাগানো হতো রঙিন আলোকসজ্জা। মুসলমানরাও প্রতিবছর বড়দিনের উৎসবে অংশ নিতেন। কিন্তু এবার তার কিছুই নেই।

 

‘উদ্‌যাপন সম্ভব না, আমরা খ্রিস্টান-মুসলমান সবাই শোকে ডুবে আছি’

ল্যাটিন প্যাট্রিয়ার্কেটের অপারেশনস ডিরেক্টর জর্জ অ্যান্টন জানান, যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বড়দিন পালন করা সম্ভব নয়।  “আমরা আমাদের ঘর সাজাতাম, রাস্তা সাজাতাম। এখন ঘর নেই, রাস্তা নেই। কিছুই বাকি নেই,” বলেন তিনি।

অ্যান্টন জানান, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ৫৩ জন খ্রিস্টান নিহত হয়েছেন। কেউ সরাসরি হামলায়, কেউ চিকিৎসা না পেয়ে। তিন ঐতিহাসিক চার্চ- সেন্ট পারফিরিয়াস চার্চ, হলি ফ্যামিলি চার্চ ও গাজা ব্যাপটিস্ট চার্চ গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

গাজার খ্রিস্টান জনসংখ্যা দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন

ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ৪০০–র বেশি খ্রিস্টান গাজা ছেড়েছেন। এখন গাজায় বাকি আছে মাত্র ২২০টি খ্রিস্টান পরিবারের ৫৮০ জন।

অ্যান্টন বলেন, “আমরা যে আছি, থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু মানবিক সংকট আরও খারাপ হলে অনেকেই চিকিৎসা ও নিরাপত্তার জন্য বেরিয়ে যেতে বাধ্য হবে।”

 

গাজায় প্রায় ৭০ শতাংশ খ্রিস্টান গ্রিক অর্থোডক্স, বাকিরা ল্যাটিন ক্যাথলিক। অ্যান্টনের ভাষায়, “এই যুদ্ধ সবার, মুসলমান ও খ্রিস্টান সবার জীবনে একইভাবে আঘাত করেছে। গাজায় যা ঘটে, তা আমাদের ওপরই ঘটে।”

 

২০ অক্টোবর ২০২৩-এ ইসরায়েলি হামলায় সেন্ট পারফিরিয়াস চার্চ কমপ্লেক্সে আশ্রয় নেওয়া অন্তত ১৬ জন মারা যান। এ বছর ১৭ জুলাই গাজার একমাত্র ক্যাথলিক চার্চে হামলায় দুই নারী নিহত হন ও কয়েকজন আহত হন।

 

অ্যান্টন যোগ করেন, “আমরা এখনো শোক, হতাশা এবং অস্থিতিশীলতার মধ্যে বেঁচে আছি। যেন কিছুই হয়নি, এভাবে বড়দিন উদ্‌যাপন করা সম্ভব নয়।”

এই বিভাগের আরো খবর