বৃহস্পতিবার   ২৩ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ৮ ১৪৩২   ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৮

দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে নির্বাচন নিয়ে স্পষ্টতা জরুরি

সুমন ইসলাম

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৫  

‘দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে এখন সবচেয়ে জরুরি নির্বাচন নিয়ে স্পষ্টতা ও আস্থা ফেরানো। সরকারকে দ্রুত জানাতে হবে ঠিক কবে নির্বাচন হবে এবং সেটি যেন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, জ্বালানি খাতের স্থিতিশীলতা, সরকার, ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক পুনর্গঠিত না হলে বিনিয়োগ সচল করা সম্ভব নয়।’

 

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইব্রাহীম হুসাইন অভি।

 

সরকার নানান পদক্ষেপ ও নীতিগত সহায়তার কথা বললেও দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ এখনো স্থবির। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আইনের শাসনের দুর্বলতা, জ্বালানি অনিরাপত্তা মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনাগ্রহ ও শঙ্কা

 

বর্তমানে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি কেমন এবং কেন বিনিয়োগ বাড়ছে না?


এখন আসলে কেউ বুঝতে পারছে না আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু এখন সেটা অনিশ্চিত। জাতীয় নির্বাচন কবে হবে—কেউ বলছে ফেব্রুয়ারিতে, আবার কেউ বলছে নাও হতে পারে। এই অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

 

তার ওপর ব্যবসার খরচ বাড়ছে, জ্বালানি নিরাপত্তা দুর্বল, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়নি। ফলে ব্যবসায়িক পরিবেশটা অস্থির। যতক্ষণ না রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল সরকার আসে, ততক্ষণ বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে চাইবেন না।

 

বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান কমবে, দারিদ্র্য বাড়বে। স্বল্পমেয়াদে সরকারের উচিত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা—শুধু বিনিয়োগকারীদের নয়, সাধারণ মানুষেরও। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আস্থা ফিরিয়ে আনা

 

কেন বিনিয়োগ এগোচ্ছে না বাংলাদেশে?


সরকার নানা পদক্ষেপ ও নীতিগত সহায়তার কথা বললেও দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ এখনো স্থবির। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আইনের শাসনের দুর্বলতা, জ্বালানি অনিরাপত্তা মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনাগ্রহ ও শঙ্কা।

 

 

বর্তমানে কেউই বুঝতে পারছেন না দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে ভোটের কথা শোনা গেলেও নিশ্চিত কিছু নয়। সরকারের সিদ্ধান্তগুলো ব্যবসাবান্ধব নয়, খরচ বাড়ছে, এনার্জি সংকট ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে—নির্বাচন হলে এক রকম সংকট, না হলে আরেক রকম অনিশ্চয়তা।

 

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার বাইরে, ব্যাংকগুলো কি বিনিয়োগে অর্থায়ন করতে পারছে?


ব্যাংকগুলোর অবস্থাও খুব ভালো নয়। অনেক ব্যাংকের তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি কিছু ভালো ব্যাংকও বলেছে, বিনিয়োগে অর্থায়নে তারা সমস্যায় পড়ছে। শুধু অর্থের অভাব নয়, বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন—তাদের টাকাটা নিরাপদ থাকবে তো? যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়, তাহলে তারা কি ফেরত পাবেন? আবার নীতিমালা একেক সময় একেকভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, ফলে তারা দ্বিধায় আছেন।

 

বিনিয়োগের এ অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে কর্মসংস্থান হবে না ও দারিদ্র্যের হার বাড়তে পারে। এ অবস্থায় স্বল্পমেয়াদি কোনো সমাধান আছে কি?

 

একদম ঠিক বলেছেন। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান কমবে, দারিদ্র্য বাড়বে। স্বল্পমেয়াদে সরকারের উচিত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা—শুধু বিনিয়োগকারীদের নয়, সাধারণ মানুষেরও। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আস্থা ফিরিয়ে আনা। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এখন সরকারের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। আমলারা নিষ্ক্রিয়, আদালতের অনুমোদন ছাড়াও অনেক কাজ আটকে আছে। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না।

 


প্রথমেই প্রয়োজন স্পষ্টতা। সরকারকে নির্দিষ্ট করে জানাতে হবে কবে নির্বাচন হবে এবং সেটা যেন শান্তিপূর্ণভাবে হয়, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জ্বালানি খাতে স্থিতিশীলতা এবং সরকার, ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের মধ্যে বিশ্বাস পুনর্গঠন করা জরুরি। এসব নিশ্চয়তা না পেলে বিনিয়োগ কখনোই সচল হবে না—যত নীতি বা প্রকল্পই ঘোষণা করা হোক না কেন।

 

বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় সাধারণ মানুষ ও বিনিয়োগকারীরা কেন নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন?


মানুষের জীবন ও বিনিয়োগ—দুদিকেই এখন নিরাপত্তার অভাব স্পষ্ট। সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দূরত্ব বেড়েছে, আমলারা নিষ্ক্রিয়, আর বিচারব্যবস্থা থেকেও প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র মেলে না। ফলে কেউ জানে না কাকে ভরসা করবে।

যেন কেউ সাঁতার না জেনে গভীর জলে নেমেছে—রেসকিউ করার লোক থাকলেও নিশ্চয়তা নেই। এই অনিশ্চিত পরিবেশে কেউই আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে না যে সরকার সত্যিই তাদের সুরক্ষা দিতে পারবে।
 

 

এই বিভাগের আরো খবর