শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৬ ১৪৩২   ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৬৯

ঝুঁকিপূর্ণ মাদ্রাসায় চলছে পাঠদান

প্রকাশিত: ১ এপ্রিল ২০১৯  

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পূর্বাঞ্চল আবাদপুকুর। এক সময় এই অঞ্চলটি ছিলো দুর্গম ও চরম অবহেলিত। এই অঞ্চলের গরীব ও ঝরে পড়া সন্তানদের ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয় আবাদপুকুর দাখিল মাদ্রাসা।

এরপর মাদ্রাসাটি কেবল ২০১১ সালে শুধুমাত্র একাডেমিক স্বীকৃতি পায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাদ্রাসাটিতে উন্নয়নের কোন ছোঁয়াই লাগেনি।

জানা যায়, মাদ্রাসাটিতে কক্ষ সংকটের কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে গাদাগাদি করে পাঠগ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও কোন নিরাপত্তা প্রাচীর না থাকায় মাদ্রাসার সব কিছুই থাকে নিরাপত্তাহীনতায়।

একাধিকবার চুরি হয়ে গেছে পানি তোলার মেশিন। গাছের নীচে পুরাতন কক্ষের প্রাচীর কোথাও ভেঙ্গে গেছে আবার টিনের ছাউনির কোথাও টিন উড়ে ফাঁকা হয়ে গেছে আর দীর্ঘদিনের পুরাতন টিনগুলোতে রয়েছে অসংখ্য ফুটো।

যার কারণে বর্ষা মৌসুমে টিনের ছাউনির কক্ষগুলোতে পাঠদান করানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। টিনের ফুটো দিয়ে কক্ষগুলোতে বৃষ্টির পানি পড়ে জমা হয় হাটু পানি। বর্ষা মৌসুমের অধিকাংশ সময় বারান্দায় কিংবা গাছের নিচে অথবা মাদ্রাসাটি ছুটি দিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ।

পরিত্যক্ত এই ভবনগুলো যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকমহল। পর্যাপ্ত শ্রেণি কক্ষ না থাকার কারণে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত কক্ষেই পাঠদান করাতে বাধ্য হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বার বার অবগত করেও কোন কাজ হয়নি বলে জানান শিক্ষক ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি।

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুল বারী জানান, সরকারের নীতিমালা অনুসারে দেশের প্রতিটি উপজেলায় ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান থাকার কথা রয়েছে ১৮টি করে অথচ আমাদের উপজেলায় রয়েছে মাত্র ৬টি দাখিল মাদ্রাসা।

তারপরও আমাদের এই ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো মিলেনি সরকারি অনুদান। বেহাল দশায় পড়ে আছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

এই মাদ্রাসায় বর্তমান যা রয়েছে তা সবই দাতা ব্যক্তিদের অনুদানে সৃষ্টি। আমরা ইসলামী বিভাগের ১ম শ্রেণি হতে দাখিল (এসএসসি) পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছি। এলাকার অসহায়, গরীব ও খেটে-খাওয়া পরিবারের প্রায় তিন শতাধিক ছেলে-মেয়েরা ইসলাম শিক্ষা গ্রহণ করছে।

মাদ্রাসাটি অনেকটা স্বেচ্ছাশ্রম ভিত্তিক ইসলাম শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়ে আসছে এই অঞ্চলের সন্তানদের মাঝে। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ফলাফলে শতভাগ পাশ এবং মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেয়ে আসছে।

তিনি আরো বলেন, এই বিদ্যাপিঠ নানা সমস্যায় জর্জড়িত। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে কক্ষ সংকট। কক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত কক্ষে ও কক্ষের বারান্দায় গাদাগাদি করে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

এছাড়া প্রধান শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষকদের জন্য নেই আলাদা কক্ষ। প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদ্রাসার ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে পাঠগ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও ঝড়ের মৌসুমে চরম নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয়। মাদ্রাসার এহেন অবস্থা দেখে অনেক পরিবারই তার সন্তানকে মাদ্রাসায় আসতে দেয় না। আমরা শিক্ষকরা রয়েছি চরম বিপাকে।

মাদ্রাসার শিক্ষার্থী খাদেমুল ইসলাম, নাজমিন আক্তারসহ অনেকেই জানায়, এই মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা গরীব, অসহায় ও খেটে খাওয়া পরিবারের সন্তান। অনেক টাকা খরচ করে নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর মতো সামর্থ আমাদের পরিবারের নেই। তাই আমরা এই মাদ্রাসায় ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করছি।

আমরা কক্ষের অভাবে পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ন কক্ষেই গাদাগাদি করে পাঠ গ্রহণ করছি। এছাড়াও মাদ্রাসার নিরাপত্তা প্রাচীর নেই, মেয়েদের জন্য নেই কমন ও ওয়াশ রুম, আধুনিক মানসম্মত বহুতল ভবন, নেই শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব ও গ্রন্থাগার।

যার কারণে আমরা গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই যুগোপযুগি ইসলামী শিক্ষার অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে পাঠ গ্রহণ করতে পারছি না।

মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও দাতা সদস্য রুহুল আমীন বলেন, আমার মায়ের ইচ্ছে পূরণের লক্ষ্যেই প্রায় ৯৮ শতাংশ জমির উপর এই অঞ্চলের ঝড়ে পড়া গরীব, অসহায়, খেটে খাওয়া পরিবারের সন্তানদের মাঝে ইসলাম শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে আধুনিকতার কোন ছোঁয়াই এখন পর্যন্ত মাদ্রাসাটিতে লাগেনি।

অনেকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর বিভিন্ন সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ফল পাওয়া যায়নি। যদি এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙ্গে সম্প্রসারণ করে আধুনিক মানের ভবন নির্মাণ করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে একটি সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে শিক্ষার্থীরা ইসলাম শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।

ফলে এলাকার মানুষ সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠানোর প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কমে যাবে। এছাড়াও মাদ্রাসাটিতে যাবার একমাত্র মাটির রাস্তাটিতে বর্ষা মৌসুমে হাটু কাঁদার সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় যেতে চায় না। অনেক অফিসের অভিযোগ দিয়েও রাস্তাটিতে এখনো ইট বিছাতে পারিনি।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন বর্তমানে ওই মাদ্রাসাটির খুবই করুণ অবস্থা। আমি মাদ্রাসাটি সম্পর্কে সবকিছুই জানি। উপজেলা প্রশাসন ইচ্ছা করলে মাদ্রাসাটিতে যে কোন উপায়ে সহায়তা করতে পারেন। আমি ঊর্ধ্বতন সকল বিভাগকে মাদ্রাসাটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত করেছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আল মামুন বলেন, ওই মাদ্রাসার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জেনেছি। সমস্যা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানাবো। আশা রাখি এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কিছু করার সুযোগ থাকলে তা আলোচনা করে প্রদান করার চেষ্টা করবো।

এই বিভাগের আরো খবর