শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৫ ১৪৩২   ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৪৭

চৌদ্দগ্রামে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে করপাটি হাজী মনির উদ্দীন আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ্ আলমের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। দুর্নীতির টাকা বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে ফেরৎ দিতে এবং অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে সচেতন অভিভাবক ও এলাকাবাসীর ব্যানারে গত শনিবার (৩১ আগস্ট) উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের করপাটি মুক্তিযোদ্ধা বাজারে এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক শাহ্ আলমের পদত্যাগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর আগেচৌদ্দগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তদন্তে করপাটি হাজী মনির উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ্ আলমের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের ২ লাখ ৩৮ হাজার ৭’শ ২৬ টাকা আত্মসাত হয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন শিক্ষা অফিসার মো. আজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া। দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ মোতাবেক করপাটি হাজী মনির উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য কাজী মহিউদ্দিন মুকুল কর্তৃক অভিযোগ দাখিলের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক শাহ আলমের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত ও বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে ১১ ডিসেম্বর সরেজমিন গিয়ে তদন্ত করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া।

গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বরাবরে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,  বিদ্যালয়ের ক্যাশ বই অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারী থেকে চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত আয় দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬’শ ৩ টাকা এবং ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৫ লাখ ১৯ হাজার ৯ টাকা। ব্যয়ের ভাউচার সমূহ পরীক্ষা করে দেখা যায়, ১৪ লাখ ১২ হাজার টাকার হিসেব পাওয়া যায়। অতিরিক্ত ১ লাখ ৭ হাজার ৯ টাকার কোন হিসেব নেই। ব্যাংক স্টেটমেন্ট অনুযায়ী দেখা যায়, বিদ্যালয়ের আয়ের সব অর্থ নগদে খরচ করা হয় এবং কোন টাকা ব্যাংকে জমা করা হয়নি। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের পরিপন্থি। এছাড়া বিদ্যালয়ে ২০১৫ ও ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ৭৩ জন। তাদের থেকে বিনা রশিদে শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে মোট ২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা আদায় শেষে বোর্ড ফি বাবদ ৮৭ হাজার ২’শ ৮৩ টাকা প্রেরণ করে।

অতিরিক্ত ১ লাখ ৩১ হাজার ৭’শ ১৭ টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করা হয়নি এবং কোন ভাউচার পাওয়া যায়নি। তদন্তকালে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৭’শ ২৬ টাকা প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কর্তৃক আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অপরদিকে রেজুলেশন বইয়ের ৪৩ ও ৪৪নং পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠা নাম্বার ঘষামাঝা করে পৃষ্ঠা নাম্বার পরিবর্তন করা হয়েছে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারী কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে সম্প্রতি লাইব্রেরিয়ান ও নৈশ প্রহরী নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ্ আলম। বিষয়টি জানতে পেরে গত রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অবৈধ পন্থায় নিয়োগের কারণ জানতে চেয়ে প্রতিবাদ করায় বিদ্যুৎসাহী সদস্য কাজী মহিউদ্দিন মুকুলের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের দিয়ে জোরপূর্বক মানববন্ধন করানো হয়। পরদিন সোমবার প্রধান শিক্ষক শাহ আলম বিভিন্নস্থানে তদবির করার জন্য বিদ্যালয় বন্ধ রাখারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে বুধবার দুপুরে প্রধান শিক্ষক শাহ আলমের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জেনে কল কেটে দেন। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক কর্তৃক অর্থ আত্মসাতের তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনও’ বরাবরে দাখিল করা হয়েছে। তাছাড়া লাইব্রেরিয়ান, নৈশ প্রহরী নিয়োগ ও বিদ্যালয় বন্ধ রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই’।

এই বিভাগের আরো খবর