ব্রেকিং:
জাকসু নির্বাচনের মঞ্চেই নিভে গেল তরুণ শিক্ষিকার আলো শুক্রবার দুপুরের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা সম্ভব: জাকসু নির্বাচন কমিশন

শনিবার   ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫   ভাদ্র ২৯ ১৪৩২   ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৯

ইলিশ ছোঁয়া সহজ, কেনা কঠিন: নদীতে ইলিশ নেই, দাম বেড়ে আকাশছোঁয়া

তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫  

আমরা নদীতে মাছ পাই না। বাচ্চারা মাছের ঝোল চায়, কিন্তু ঘরে ইলিশ আনা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা ইলিশ ধরছি ঠিকই, কিন্তু খেতে পারছি না। আমাদের অভিমান কি কারো কানে পৌঁছে? –শফিক গাজী, জেলে

ভোর হতে না হতেই জেগে ওঠে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। দিগন্ত ছুঁইছুঁই নীল সমুদ্র থেকে ভোরের আলো ফুঁড়ে বন্দরে ভেড়ে আসে ইলিশবাহী ট্রলার। একের পর এক ট্রলার বন্দরে নোঙর ফেলতেই পুরো আঙিনা কেঁপে ওঠে।

বাজার মুখর, ইলিশের অভাব
মাছ বিক্রির হাঁকডাকে মুখর হয় বন্দর। কানে ভেসে আসে, “ইলিশ, ইলিশ! টাটকা ইলিশ। নদীর ইলিশ। সাগরের ইলিশ। সুন্দরবনের মটকা চিংড়ি।” সাগরের লোনা হাওয়া, রোদে চকচক মাছের আঁশ, দাম হাঁকাহাঁকিতে সমুদ্রঘেঁষা জীবন প্রতিদিনই নতুন রং ছড়ায়।

কিন্তু ঝলমলে ইলিশের আড়ালেই আছে অভাবের চিত্র। সাগর থেকে ট্রলারে আসা ইলিশ আকারে ছোট। নদীতে জাল ফেলেও বড় ইলিশ নেই। অথচ সীমান্ত পেরিয়ে যাবে এক হাজার ২০০ টন ইলিশ। ওপারে ভারতে উৎসবের উল্লাস, আর এপারে জেলেদের ঘরে চড়ছে অভিমানের ঢেউ।

খালি জাল, চড়া দাম
ভোলা, বরিশাল, কলাপাড়া, পাথরঘাটা, তালতলীর জেলেরা জানিয়েছেন, নদীতে বড় ইলিশ নেই। জেলেরা দিনরাত সাগরে গেলেও ছোট ইলিশ নিয়ে ফিরছেন। বাজারে ছোট ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া। আড়তে এক কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকায়। বড় হলে তিন হাজার টাকার বেশি। খুচরা বাজারে ৬০০ গ্রামের ইলিশও দেড় হাজার টাকা কেজি দরে। ৪০০ গ্রামের ইলিশ মিলছে না হাজার টাকার নিচে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এই মৌসুমে ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ৯০০ থেকে ২,২০০ টাকা। গত বছর একই সময়ে দাম ছিল ৮০০–১,৬০০ টাকা। এক দশক আগে ভরা মৌসুমে আধা কেজি থেকে এক কেজি ইলিশের গড় দাম ছিল ৫০০ টাকা। অভিযোগ আছে, সাগরের ইলিশ নদীর বলে বিক্রি হচ্ছে।

ওপারে উল্লাস, এপারে অভিমান
ভারতে সম্প্রতি ঘোষণা এসেছে, রপ্তানি হবে এক হাজার ২০০ টন ইলিশ। দুর্গাপূজা ঘনিয়ে আসায় কলকাতার বাজারে আনন্দের ঢেউ। আড়ত থেকে গলিপথ—সর্বত্র একই কথা, পূজায় আসছে বাংলাদেশি ইলিশ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে চলছে রুপালি উৎসবের খবর।

এপারে ভিন্ন দৃশ্য। পায়রা নদীতীরের মাঝবয়সী জেলে শফিক গাজী বলেন, “আমরা নদীতে মাছ পাই না। বাচ্চারা মাছের ঝোল চায়, কিন্তু ঘরে ইলিশ আনা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা ইলিশ ধরছি ঠিকই, কিন্তু খেতে পারছি না। আমাদের অভিমান কি কারো কানে পৌঁছে?”

জমজমাট আলীপুরের ইলিশ মোকাম
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আলীপুর মৎস্যবন্দরে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রতিদিন ভিড় করে কয়েকশ ট্রলার। সাধারণ সময়ে প্রতিদিন ওঠে ৫০–১০০ টন মাছ। ইলিশ মৌসুমে বাজার হয়ে ওঠে জমজমাট।

আড়তদার সেলিম মিয়া বলেন, “আমাদের এখানে ওঠা মাছ যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, আবার রপ্তানি হয় মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও।”

বন্দরের শ্রমিক রফিক মৃধা বলেন, “দিনে দেড় হাজার টাকা রোজগার হয়। ঝড় হলে কাজও নাই, খাওয়াও নাই। পেশাটি একেবারে জুয়া—কখনো মাছভরা ট্রলার, কখনো খালি হাতে ফেরা।”

পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান বলেন, “রপ্তানি বৈদেশিক মুদ্রা আনে, দুই বাংলার সম্পর্ক উষ্ণ হয়। ইলিশ শুধু মাছ নয়, দুই বাংলার আবেগের প্রতীক। কিন্তু দেশের বাজারে অভাব থাকলে বাইরের চাহিদা মেটানো কতটা সুবিচার?”

এই বিভাগের আরো খবর