বুধবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১০ ১৪৩২   ০৪ রজব ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৩

২০২৪: ‘গ্রেটার ইসরায়েল’, ইরান হামলা ও আঞ্চলিক অস্থিরতার বছর

রাফিউল ইসলাম তালুকদার

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫  

গত এক বছরকে আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও অস্থির সময়য়ের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। গাজা থেকে ইরান একের পর এক  সামরিক উত্তেজনা আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য বদলে দিয়েছে, তুলে এনেছে গভীর নিরাপত্তা শঙ্কা এবং দেখিয়ে দিয়েছে মার্কিন ও ইসরায়েলি প্রভাবের স্পষ্ট সীমাবদ্ধতা।

 

অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে।
একই সঙ্গে সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনেও ইরানপন্থী গোষ্ঠীর ওপর ইসরায়েলি আক্রমণ বেড়েছে, যা অঞ্চলজুড়ে আরও বড় সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়েছে।

 

সর্বাধিক আলোচিত ঘটনা ছিল গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির অন্যতম কেন্দ্র কাতারে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলা। এ হামলা হামাস নেতাদের টার্গেট করে বলে দাবি করা হলেও হামলায় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় ইসরায়েল, আর কাতার এটিকে নিজেদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে।

 

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নতুন করে প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছেন “গ্রেটার ইসরায়েল” ধারণার প্রতি, যেখানে পশ্চিম তীর, গাজা, লেবানন, জর্ডানসহ সিরিয়া, মিসর, ইরাক ও সৌদি আরবের অংশ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়। এই সম্প্রসারণবাদী মনোভাব আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে।

 

২০২৫ সালের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এসব হামলাকে “সীমিত ও প্রতিরোধমূলক” বলে উল্লেখ করলেও ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া অনেককে হতবাক করে। ইরান থেকে নিক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি ইসরায়েলি শহরে আঘাত হানে।

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরে স্বীকার করেন, “ইসরায়েল খুব বড় আঘাত পেয়েছে… অনেক ভবন ধ্বংস হয়েছে।”

 

জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি পরিকল্পনার অধীনে গাজাকে ফিলিস্তিনি প্রশাসন থেকে সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয়। যা অনেকের মতে দখলকৃত জনগোষ্ঠীর ওপর বাইরের শাসন চাপানোর বিপজ্জনক নজির।

 

বর্তমান পরিস্থিতি ২০০৭ সালে মার্কিন জেনারেল ওয়েসলি ক্লার্কের সেই আলোচিত বক্তব্যকে নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে। যেখানে তিনি দাবি করেছিলেন, ২০০১ সালে পেন্টাগন পাঁচ বছরের মধ্যে  ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং সর্বশেষ ইরানকে লক্ষ্যবস্তু করার পরিকল্পনা করেছিল।

 

২০২৫ সালের ইরান হামলাকে ট্রাম্প প্রশাসন “ঐতিহাসিক সাফল্য” বলে উল্লেখ করলেও বিশ্লেষকদের মতে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গভীর দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত ক্ষতি ডেকে এনেছে।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন এমন শক্তিগুলোর কাতারে যোগ দিল, যারা ইতিহাসে সরাসরি ইরানি ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে, যাদের মধ্যে আছে জেনগিস খান ও সাদ্দাম হোসেন। এই স্মৃতি ইরানের জাতীয়তাবাদে স্থায়ী দাগ রেখে যাবে এবং ইরানের ভবিষ্যৎ আঞ্চলিক অবস্থানকে দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাবিত করবে।

 

বর্তমান মার্কিন নীতি অপরিবর্তিত থাকলে ২০২৬ সালেও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় অব্যাহত থাকার ঝুঁকি প্রবল। এতে যুক্তরাষ্ট্র এমন এক অঞ্চলে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়বে, যেখান থেকে প্রতিটি প্রশাসনই দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।

এই বিভাগের আরো খবর