শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪   শ্রাবণ ১২ ১৪৩১   ২০ মুহররম ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৬৬

ডাকাতির নাটক সাজিয়ে ব্যবসায়ীকে হত্যাঃ ১৪ জন গ্রেপ্তার

মোঃ মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪  

আধিপত্য বিস্তার, চিংড়ি ঘের দখল ও অন্তঃকোন্দলের জেরে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে হত্যা। এরপর হত্যাকে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে প্রচার করে বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন হত্যার সঙ্গে জড়িতরাই।  কক্সবাজারের চকরিয়া সাহারবিল এলাকায় মোহাম্মদ হোসেন নামে এক চিংড়ি ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারীসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব।

র‍্যাব জানায়, গত ৯ জানুয়ারি রাতে চকরিয়ার রামপুরা চিংড়ি ঘের এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীর গুলিতে মোহাম্মদ হোসেন নিহত হন। এ ঘটনায় ভিকটিমের ছেলে বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩ এর একটি দল।

গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী শহিদুল ইসলাম লিটন (৪৫), আবু জাফর (৫০), মো. সোহেল (৩৭), আজগর আলী (৪৫), আবুল হোসেন পাখী (৩৫), নাজমুল হোসাইন রকি (২৭), আবদুর রহিম (৪৮), জয়নাল আবেদীন (৫৫), শাহিন (২৩), মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিন (৪৪), প্রদীপ কুমার শীল (৪৮), মো. রিদুয়ান (৩১), আবদুল হক (৫৫) ও মো. কাইছার (৩৫)।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অবস্থিত র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, চকরিয়ায় ‘রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির’ সভাপতি হিসেবে গ্রেপ্তার আবু জাফর এবং সেক্রেটারি হিসেবে শহিদুল ইসলাম লিটন দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গুলিতে নিহত মোহাম্মদ হোসেন সমিতির সদস্য হিসেবে ৭ বছর ধরে চিংড়ি ঘের এলাকার ৪৮ একর জমির মধ্যে খামার তৈরি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। পাশাপাশি চিংড়ি ঘের পাহারার দায়িত্বেও নিয়োজিত ছিলেন। সমিতিটিতে প্রায় ৬০০-৭০০ জন সদস্য রয়েছে। সমিতির মালিকানাধীন সাহারবিলের রামপুর মৌজায় ৫ হাজার ১১২ একরের বিশাল একটি চিংড়ি ঘের রয়েছে। এর মধ্যে কিছু চিংড়ি ঘের সমিতির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। নিয়ন্ত্রণে না থাকা চিংড়িঘের দখলে নিতে গত ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে লিটনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে থাকে এবং ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে কয়েকশ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেপ্তার আবু জাফর ও লিটন সোহেল, আজগর আলী, আবুল হোসেন পাখী, নাজমুল হোসাইন রকি ও আবদুর রহিমকে গুলিবর্ষণের দায়িত্ব দেয়।  ৯ জানুয়ারি সকালে লিটনের নির্দেশে ফোন করে কৌশলে ভিকটিম মোহাম্মদ হোসেনকে চিংড়ি ঘের এলাকায় ডেকে নিয়ে আসা হয়৷ একপর্যায়ে সেখান থেকে ভুক্তভোগী হোসেন দুপুরের পর বাড়ি ফিরতে চাইলে লিটন ও তার সহযোগীরা রাতে মিটিং আছে জানিয়ে তাকে ফাঁকা জায়গার একটি ঘরে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায়। ৯ জানুয়ারি রাতে মোহাম্মদ হোসেনকে পাশের লবণ চাষের খালি জমিতে নিয়ে বাকি সহযোগীদের মাধ্যমে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে একনলা বন্দুক দিয়ে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। 

তিনি আরও বলেন, ভিকটিমকে হত্যার পর গ্রেপ্তাররা ঘটনাটি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালায় ও হত্যাকারীদের বিচারের জন্য আন্দোলন করতে থাকে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আধিপত্য বিস্তার, চিংড়ি ঘের দখল ও আন্তঃকোন্দলের কারণে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে এবং জড়িতদের নাম প্রকাশিত হলে অভিযুক্তরা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র‍্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে।  

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলাম লিটন চিংড়ি ঘেরে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য এলাকায় ৩০-৩৫ জনের একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দল গঠন করে। তারা অবৈধভাবে জমি দখল, হুমকি, মারামারি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তার বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় দস্যুতা, মারামারি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, অপহরণসহ ৭টির বেশি মামলা রয়েছে। আর সোহেল, আজগর আলী, আবুল হোসেন পাখী, নাজমুল হোসাইন রকি ও আবদুর রহিম অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে লিটনের নির্দেশে মোহাম্মদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে। সোহেলের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় হত্যা, অপহরণ, নারী নির্যাতন, মারামারিসহ ৭টির বেশি মামলা রয়েছে। আবুল হোসেনের নামে চকরিয়া থানায় হত্যা, মারামারিসহ ৪টি ও রহিমের নামে একটি মারামারির মামলা রয়েছে। এছাড়া, গ্রেপ্তার অন্য অভিযুক্তরা আবু জাফর ও লিটনের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল। তাদের বিরুদ্ধেও কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর