বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ২ ১৪৩২   ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৬

৫৪তম বিজয় দিবস

অর্থনৈতিক অগ্রগতি হলেও ‘রাজনৈতিক মুক্তি’ মেলেনি

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫  

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবসের ৫৪তম বার্ষিকী। সীমাহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশ আজ ৫৪ বছর পূর্ণ করল। তবে দেশের এই দীর্ঘ যাত্রায় সামষ্টিক অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও, বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য—রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি—এখনো মেলেনি। শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায়ও দেশের মানুষকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আবারও জীবন দিতে হয়েছে।

 

 

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, গত পাঁচ দশকে সামাজিক সূচক (শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, গড় আয়ু) এবং কৃষিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পথে।

অর্জনসমূহ:

  • ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম।

  • তৈরি পোশাকে দ্বিতীয়।

  • চাল, মাছ ও সবজিতে তৃতীয় অবস্থানে।

 

কিন্তু অর্থনীতির মেরুদণ্ড দুর্বল করে দিয়েছে সীমাহীন বৈষম্য ও দুর্নীতি। দেশের মোট সম্পদের প্রায় ৫২ শতাংশ উচ্চ শ্রেণির মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত।  দুর্নীতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। এই দুর্নীতির অর্থ বিদেশে পাচার করে দেশকে পঙ্গু করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, "যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, এখনো সেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি মেলেনি। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে আর্থিক খাত লুট করে শেষ করে দেওয়া হয়েছে।" তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে রাজস্ব আয়ের পুরোটা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় চলে যায় এবং উন্নয়ন বাজেট পুরোপুরি ঋণনির্ভর।

 

 

রাজনৈতিক মুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, মানুষের ভোটের অধিকার, বাকস্বাধীনতা, সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। ড. বদিউল আলম মজুমদার (সুজন সম্পাদক) বলেন, "যে অঙ্গীকারের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়েছিলেন—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা—সেটি থেকে আজ আমরা যোজন যোজন দূরে। আমরা যেন আজ এক পথ হারানো জাতি।" ব্যর্থতার দায়: রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতাকে সম্পদ বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।জিয়াউর রহমানের ভূমিকা: অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিনের সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, জিয়ার নেতৃত্বে বিদ্রোহ না হলে দেশ স্বাধীন হতো না।  অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছরে দেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি ছিল না; বৃহৎ প্রতিবেশীর ওপর নির্ভরশীলতা দেশকে দুর্বল করেছে।

 

 

তবে এই ব্যর্থতার মধ্যেও আশার আলো দেখাচ্ছে দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী। দেশের মোট জনশক্তির দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ। তাদের এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সুদূরপ্রসারী সংস্কার জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জুলাই অভ্যুত্থানের পর জনগণ সেই সম্ভাবনার দিকেই তাকিয়ে আছে।

 

বিজয়ের এই ৫৪তম বার্ষিকীতে মূল চ্যালেঞ্জ হলো—দুর্নীতি রোধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অর্থ পাচার বন্ধ করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে ঐক্য ও সহনশীলতা প্রতিষ্ঠা করা।

এই বিভাগের আরো খবর