সোমবার   ১৩ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৯ ১৪৩১   ০৫ জ্বিলকদ ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৩৯১

রাফেজা ইমরোজের নির্বাচিত কবিতা

প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০  

এক 


নিষ্প্রান নারী মূর্তি
একটি নারী
বিষন্ন মূখ
একটি নারী
হাসি দিয়ে 
লুকিয়ে রাখে দুখ ।

একটি নারী
অশ্রু সজল চেয়ে থাকা
একটি নারী
সাজানো ঘরের কোনে
শুকনো ফুল রাখা ।

একটি নারী
অপেক্ষার প্রহর গোনা,
আসবে কি সোনালী দিন
অভিমানী স্বপ্নীল 
মধুময় ক্ষন
একটি নারী
ভাবনার রঙে 
শুধূ স্বপ্নের জালবোনা ।

একটি নারী
মেলে রাখে অপলক দৃষ্টি,
আহা কি অপরুপ 
সুন্দর মহোময় পৃথিবী
একটি নারী
অবাক হয়ে ভাবে ,
বিধাতার কি অপরুপ সৃষ্টি ।

একটি নারী
চোখেমুখে ঝড়ে 
শুধু হাসি,
আড়ালে তার
বিষন্ন অতীত.. 
যন্রনায় দগ্ধ 
বর্তমান...
অন্তরমাঝে 
কষ্ট পোষে বারমাসি ।
 
একটি নারীর জীবন
বিচিত্র সব 
রঙে অঙ্কিত..
শত ব্যথা যন্রনা 
হৃদয়ে করে ধারণ
সকলের বাসনা পূরনে 
হয় অভিযাত্রী
একটি নারী
এক জীবনে হল 
হাজার খেয়ালের
নিষ্প্রান নারি মূর্তি ।।

একটি নারী
নিরবে পুড়ে যায়
আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত দেহ,
জীবনের সমস্ত 
অপৃর্ণ স্বপ্ন সাধনার
গল্প কাহিনী 
রয়ে গেল অধরা
জানলো না কেহ ।

একটি নারী
বিষন্ন অতীতকে 
সঙ্গী করে
বাঁচিয়ে রাখে 
সংসারের সুখ ,
বেঁচে থাকা কঠিন তবু
বেঁচে থাকতে হয়,
সবার মাঝে 
নিজেকে সাজিয়ে
সূখি সুন্দর মুখ ।

একটি নারীই পারে
এমন অপরুপ ভাবে
সকল স্বপ্ন-সুখ 
বিসর্জন দিয়ে
ধরে রাখতে 
সংসারের চাবি ।

বুকের ভিতর দুঃখ পুষে 
হাসি মুখে কথা বলা
একটি নারীই পারে
খেলতে এমন নিষ্ঠুর 
অভিনব খেলা ।

ঘর আছে ছাউনি নেই
তবু আনন্দের 
গান গাওয়া,
নিরব পায়ে 
কষ্টের সিঁড়ী বেয়ে
অনুভবে সুখটাকে 
খুঁজে নেওয়া ।।


দুই  


দেহের সুবসনাহার
হয় যদি
সুন্দরতম সুনিপুণ
মার্যিতময়
সুরুচিকর আলপনায়
অঙ্কিত 
কারুকার্য মন্ডিত
শালিনতার বন্ধন...

মনের অঙ্গের
নিপুণ আবরন
হয় যদি
সদা কল্যাণকর 
করুণার সুচিত্ত
সুমধুর মধুরতা মন্ডিত
নম্রতা, কোমলতা
সহিষ্ণুতা 
ক্ষমা গুনের মহৎ মৃদুতা...

তবে
অন্তরের সৌন্দর্যে
প্রকৃতির বিরূপতায়ও
সৌভিক সৌমনস্য ছোঁয়ার
আলতো পরশ
মেঘাবৃত ছায়াপথে
নয়নানন্দ মাধূর্য্য
বিকশিত করে চারপাশ...

অধর ফোটায়
নিস্পাপ, অহংকার মুক্ত
ভুবন ভোলানো
প্রশান্তিময় নির্মল হাসির
কারুকার্যহীন 
নয়নাভিরাম ক্যানভাস....

তখন
সদা সহাস্যমুখে
কঠিন ক্লান্তির ঝড় থামিয়ে
মনে মনে বলতে পারি
"নিজেকে যতটা না "ভালোবাসি"
"পৃথিবী"
তোমাকে
তোমার বুকে বেঁচে থাকা
প্রতিটি মানুষ
প্রতিটি পশুপাখি 
প্রতিটি ধূলিকণাকে
তার থেকেও
অনেক অনেক
বেশী
আমি 
"ভালোবাসি"
.......রাফেজা ইমরোজ


তিন 

যেন
অফুরন্ত অলস বেলা
দিচ্ছে উঁকি..
একেলা একেলা ঘাস ফড়িং এর
দূরান্তপনার 
জলছবি আঁকিবুকি....

নেই কোথাও কেউ নেই
আহা শূণ্যতার কি অবাক
বিহ্বলতা... 
কেড়ে নিতে চায়
বহুকালব্যাপী গচ্ছিত 
হিয়ার চঞ্চল সরবতা...

মন বলে
কিছু মানুষ
আজীবনকাল পোষে
অপ্রিয় নিঃসঙ্গতা একাকী..
যদিও পৃথিবীর বুকে 
দিবারাত্রি জ্বলে 
অগনিত জ্যোৎস্না স্নাত
মনোহরা জোনাকি...

 

চার 

ধূলি মলিন পানসে
হয়ে যাবে সব,
ধ্রুপদী সুন্দরতায়
আমাদের বিনির্মিত
সকল সুন্দরটুকু
কিছুকাল থেকে যদি যায়
এই ধরাতলে
সে স্বপ্ন ও আশায়
বারে বারে সংস্কার করি
আমি আমার এ নতুনের পথে
রঙিন খেলাঘর....।।।।।

রাফেজা ইমরোজ
জন্ম সেত একবারই হয় 
আমি যেন জন্ম নেই মুহূর্ত মুহূর্ত 
আমার প্রতিটি ভুল সংশোধনে..

মৃত্যু সেত একবারই আসে 
আমার মৃত্যু যেন হয় 
বিনয়ে, নম্রে, সত্য সুন্দরের 
সৌন্দর্য বিলিয়ে 
যাপিত জীবনের সকল 
বেহিসেবি লোভ সংবরণ করে ..!
শুভ সকাল


 
পাঁচ 

নিরুৎসব
নিভৃত ক্ষণ
মন গহীনে 
অবহেলার রোশনি ঢেলে
সে চলে যায় মৃদু পায়,

আমিও পিছু পিছু তার চলি
আনমনে অব্যক্ত কথার
ব্যাথার অঞ্জলি ঢালি
বলি তারে,
হে পথিক
অবহেলায় প্রেমের দুর্ভিক্ষ
হয়ত বাঁধে বাসা
দেহের আশেপাশে,
তবুও যেনো
দীর্ঘশ্বাস থেমে থেমে
বাঁচায় বিপন্ন জীবন 
প্রবল প্রেম পিয়াসে..!!!!

রাফেজা ইমরোজ

ছয় 

তুমি
যখন অপক্ষারত আমার খোঁপায়
চুপটি করে পিছন থেকে
ঘাসফুলের মালা জড়িয়ে দেবে
তখন বিষন্নতা পালাবে
দূর কোন মেঠো পথের সবুজ গাঁয় ।

তুমি
যখন উপহার দেয়ার ছলে
হাতটি ধরে আমার
নিবিড় স্পর্শে তোমার হাতে লুকিয়ে নেবে
তখন কষ্টের উঠোন খানি
হলুদ গালিচায় ভরে যাবে ।

তুমি
যখন ছোট্র ধূলিকনার খোঁজে
আঁখির কোণ
আলতো করে ছুঁয়ে যাবে
তখন কান্নার ঝরনাধারা
হলুদ নিসর্গে ভ্রমনে হবে উধাও ।

তুমি
যখন ডাকবে আমায়
স্বপ্নময়ী মাধবী ''বনলতা''
তখন অদ্ভুত সুন্দর হাসিতে
দিগন্ত জোড়া সরিষা ক্ষেতের
ভাঁজে ভাঁজে লজ্জায় লুকাবে
আমার মুখের মলিনতা ! 

যখন তুমি আমায় বলবে
নীলপরী নীলাঞ্জনা
তখন তোমার বুকের সবুজ মাঠে
শুরু করবো অমর প্রেমের কাব্য বোনা ।

 সাত 

অতি সহনশীল
অতি আবেগী
অতিরিক্ত নিঃস্বার্থ
সরল ভালোবাসায় পরিপূর্ণ 
মানুষগুলো
মানুষের দ্বারাই
সমাজের 
প্রতিটি ক্ষেত্রে নিদারুণ ভাবে
অবমূল্যায়িত হয়
অতিমাত্রায়য়..;

সহনশীল মানুষের
আত্মতৃপ্তির স্বস্তি মিললেও
প্রতিমুহূর্ত 
মানসিক ক্ষতর শাস্তি 
বহন করে 
সময়ের সাথে,
মানুষের সাথে পরাজয় মেনে
জীবনের সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়..।

শত সহস্র ব্যথাভার নিয়েও
সহনশীল মানুষ
সরল ভালোবাসা পৃথিবীর মাঝে
বিলিয়ে যায়....!

 

আট 


প্রভু
আমার ভাগ্যবিধাতা
অদৃশ্য তোমার বিশ্বাসে
অযুত ক্লান্তিতে
ডেকে ডেকে প্রশান্তির জলধারায়
শীতল হয় উদভ্রান্ত, উদাসীন
হৃদয়ের সকল কূল....

দৃশ্যে যে মানবের বাস
শত সহস্র ক্লান্তিতে 
ডেকে ডেকে জলপ্রপাত 
হলেও আঁখি
শান্ত হয়না প্রান-মন
ক্লান্ত প্রান আরো ক্লান্ত হয়
নিষ্ঠুরতার ছোবলে....

প্রভু
আমার ভাগ্যবিধাতা
অদৃশ্য তোমাকে বিশ্বাস করে
ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন নিয়েও
মনের ধহনোপারে 
স্বপ্ন সাজায় কতজন বারেবারে
নিঃশব্দে নির্জনে 
সদা প্রার্থনায় ,মোনাজাতে...

দৃশ্যে থাকা মানুষকে 
বিশ্বাস করে
ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের
প্রচন্ড উওাপে সর্বাঙ্গ 
পুড়ে মরে স্বপ্ন ভাঙার 
দূঃসহ বেদনায়...

ব্যর্থ সকল আকুতি
মানবের কঠিন আচরনে
স্বপ্ন ধুলিতে লুটায় 
কত নিস্পাপ দুঃখ পোষা মনের।

প্রভু
আমার ভাগ্যবিধাতা
তোমার সৃষ্টি 
কোমল মাটিতে গড়া 
প্রতিটি মানব মনে
সৃষ্টি করি দাও
দয়া-মায়া-স্নেহ-ভালোবাসার
পবিত্র ফুলরেণু,
অনাচার-অত্যাচার 
মুক্ত পৃথিবী দাও...
দুর করি অবিশ্বাস-সন্দেহ।

প্রভু 
আমার ভাগ্যবিধাতা
তোমার ক্ষমতা অপার
অন্ধমনের জানালা ভেদ করি
বুঝিয়ে দাও সকলেরে
অদৃশ্য বাতাসের ঈশারায় ।


নয় 

কিছু সম্পর্ক বিনিময়হীন
সম্পর্কে গভীরতা এতটাই
নির্দ্বিধায়
যে কোন পরিস্থিতিতে
প্রিয় মানুষটির জন্য
নিজেকে
বিসর্জন দেয়া যায়
পরাজয় মেনে নেয়া যায়
সম্পর্কের সম্মানার্থে..।

কিছু সম্পর্ক
কিছু বন্ধন
আত্নার বন্ধনে নিবন্ধিত, 
ভুল বুঝে ভুলে থাকার
অবকাশ নেই,
আমৃত্যু বন্ধন অটুট 
রাখতে
ভুল- ত্রুটি
পরম মমতায় বুকে আগলে রেখেই
পাশাপাশি
পথ চলতে হয়...!!
স্বচ্ছ, সুন্দর, পবিত্র একটি সম্পর্ক

বাঁচার জন্য,ভালো থাকার জন্য
খুব প্রয়োজন...!!


দশ 

কেউ তো একজন থাকতে হয়
মন খারাপের মলিন দুপুর
যার ছোঁয়াতে এক নিমিষে
বিলীন হয় ;
সে হও না কেন তুমি।।? 

এই বিভাগের আরো খবর