মঙ্গলবার   ০৪ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ২০ ১৪৩২   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৭

মার্কিন রাডারে নাইজেরিয়া, সামরিক হামলার হুমকি

রাফিউল ইসলাম তালুকদার

প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০২৫  

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও নতুন এক দেশকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন, এবার মার্কিন রাডারে পশ্চিম আফ্রিকার নাইজেরিয়া। ট্রাম্পের দাবি, সেখানে “বড় সংখ্যায় খ্রিস্টানদের হত্যা করা হচ্ছে” এবং নাইজেরিয়ার সরকার “ইসলামি সন্ত্রাসীদের” ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে।   

 

তিনি সতর্ক করেছেন, যদি এই হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে, তবে যুক্তরাষ্ট্র নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালাতে পারে।

 

ওয়াশিংটন সম্প্রতি নাইজেরিয়াকে আবারও “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যে তালিকায় রয়েছে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত রাষ্ট্রগুলো। এই তালিকায় চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশও আছে। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র নাইজেরিয়ায় “প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।”

 

তবে নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজা থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে সতর্কভাবে। প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু বলেন, খ্রিস্টান নিপীড়নের দাবি বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। তার মতে, নাইজেরিয়ায় ধর্মীয় সহনশীলতা ও স্বাধীনতা জাতীয় পরিচয়ের অংশ। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের মন্তব্যকে আক্ষরিক অর্থে না নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে দেখা উচিত। এক মুখপাত্র বলেন, “ট্রাম্প প্রায়ই কোনো বিষয়কে কঠোরভাবে টুইট করে আলোচনার টেবিলে টেনে আনেন। আমরা জানি, তিনি নাইজেরিয়াকে খারাপভাবে ভাবেন না।”


 

নাইজেরিয়া আফ্রিকার সর্বাধিক জনবহুল দেশ, জনসংখ্যা প্রায় ২২ কোটি। দেশটি প্রায় ২০০টির বেশি জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত; উত্তরাঞ্চল প্রধানত মুসলিম, দক্ষিণাংশ প্রধানত খ্রিস্টান অধ্যুষিত। গত ১৫ বছর ধরে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা-এর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠী উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সহিংসতার পেছনে মূল কারণ ধর্ম নয়, বরং দারিদ্র্য, ভূমি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। অনেক সংঘর্ষই উপজাতীয়, আঞ্চলিক এবং সামাজিক বৈষম্য থেকে জন্ম নেয়। তাই ট্রাম্পের বক্তব্য স্থানীয়ভাবে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

 

নাইজেরিয়ার গণমাধ্যমে ট্রাম্পের মন্তব্যকে “অতি সরলীকৃত ও উস্কানিমূলক” বলা হয়েছে। অনেকের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অজুহাত তৈরি করতে পারে। আবার কেউ কেউ বলছেন, মার্কিন সহায়তা নিরাপত্তা জোরদারে সহায়ক হতে পারে।

 

বিশ্লেষকদের ধারণা, ট্রাম্পের এই অবস্থান তার দেশের ইভানজেলিকাল সমর্থকগোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করার কৌশল, যারা বহুদিন ধরে বিদেশে “খ্রিস্টান নিপীড়ন” বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা দাবি করে আসছে। এটি ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেও “শক্তিশালী নেতা” হিসেবে ট্রাম্পের ইমেজকে জোরদার করে এবং আফ্রিকায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতিক্রিয়াও বটে।


 

এর আগে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার “শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের গণহত্যা” প্রসঙ্গেও অনুরূপ দাবি করেছিলেন, যা পরবর্তীতে দেশটি প্রত্যাখ্যান করে। নাইজেরিয়া সেই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ লক্ষ্য।

 

প্রশ্ন উঠছে, এটি কি সত্যিই খ্রিস্টানদের সুরক্ষা, নাকি আবারও মার্কিন আধিপত্যের আরেকটি প্রকাশ?

এই বিভাগের আরো খবর