শুক্রবার   ১০ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ২৪ ১৪৩২   ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৭

‌‘আটকের সময় মনে হচ্ছিল হয়তো আর ফিরবো না’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২৫  

‘আমাদের জাহাজ থামিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমরা ভীত হইনি। গাজার শিশুদের মুখ মনে রেখেই আমরা টিকে ছিলাম। আটকের সময় মনে হচ্ছিল আমরা হয়তো আর ফিরতে পারব না। কিন্তু মালয়েশিয়ার মানুষের দোয়া আমাদের শক্তি জুগিয়েছে।’

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মিশনে অংশ নেওয়া মালয়েশিয়ার নাগরিক গায়িকা হেলিজা হেলমির বোন হাজওয়ানি আফিকাহ দেশে ফিরে আবেগাপ্লুত হয়ে সংবাদকর্মীদের এসব কথা বলেন।


গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মিশনে অংশ নেওয়া মালয়েশিয়ার ২৩ জন মানবাধিকার কর্মী মঙ্গলবার রাতে দেশে ফিরেছেন। স্থানীয় সময় রাত ১০টায় তাদের ফ্লাইট কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (কেএলআইএ) টার্মিনাল ১-এ অবতরণ করে।


সিন্তা গাজা মালয়েশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও অভিযাত্রী মুহাম্মদ নাদির আল-নুরি কামারুজ্জামান ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তাদের নিরাপদে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ফ্লোটিলা দলের সদস্যরা বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুকিত জলিলের আক্সিয়াটা এরেনায় এক সংহতি সমাবেশে অংশ নেবেন।

আমার সঙ্গী ও আমি গাজার দুই বছরের গণহত্যার ভয়াবহ বার্তা ও ম্যান্ডেট জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চাই, বলেন নাদির।


তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, চলতি বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে—যেখানে হাজারো ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

সুমুদ নুসান্তারা কমান্ড সেন্টার এক বিবৃতিতে, প্রত্যাবর্তনকারী কর্মীদের স্বাগত জানাতে সমর্থক ও সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধিদের কেএলআইএ-তে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিল।


এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভূমধ্যসাগরে ফ্লোটিলা জাহাজ আটক করে ইসরায়েলি সেনারা এবং তাতে থাকা ২৩ জন মালয়েশীয় নাগরিককে আটক করে।

রোবার তারা মুক্তি পান এবং রামন বিমানবন্দর থেকে তুরস্কের উদ্দেশে রওনা দেন। মালয়েশিয়ার সময় রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তারা ইস্তাম্বুলে পৌঁছান এবং সেখান থেকে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কয়েকজন অংশগ্রহণকারী। গায়িকা হেলিজা হেলমি বলেন, এটা শুধু একটি যাত্রা নয়, এটা মানবতার ডাক। গাজার শিশুদের মুখ মনে রেখেই আমরা টিকে ছিলাম।

তার বোন নুর হাজওয়ানি আফিকাহ বলেন, আমাদের জাহাজ থামিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমরা ভীত হইনি। গাজার শিশুদের মুখ মনে রেখেই আমরা টিকে ছিলাম। আটকের সময় মনে হচ্ছিল আমরা হয়তো আর ফিরতে পারব না। কিন্তু মালয়েশিয়ার মানুষের দোয়া আমাদের শক্তি দিয়েছে।

মানবাধিকারকর্মী দানিশ নজরান মুরাদ জানান, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আমাদের একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে আমরা জানতাম, এই মিশন কেবল ফিলিস্তিন নয়, মানবিক ন্যায়বিচারের জন্য।


ইনফ্লুয়েন্সার নুরুল হিদায়াহ মোহাম্মদ আমিন বলেন, আমরা প্রতিজ্ঞা করছি, গাজার কণ্ঠকে নীরব হতে দেব না। এখন থেকে মালয়েশিয়ায় প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে গাজাবাসীর দুর্দশা তুলে ধরব।

ধর্মপ্রচারক পিইউ রহমাত বলেন, এই অভিজ্ঞতা আমাদের আত্মাকে নাড়া দিয়েছে। আমরা দেখেছি, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনি জনগণ কত দৃঢ়। তাদের থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।


ফ্লোটিলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন হেলিজা হেলমি ও নুর হাজওয়ানি আফিকাহ, ফারাহ লি, দানিশ নজরান মুরাদ, গায়িকা জিজি কিরানা, মুসা নুয়াইরি, ইলিয়া বালকিস, সুল আইদিল, হাইকাল আব্দুল্লাহ, মুআজ যায়নাল ও জুলফাধলি খাইরুদ্দিন।
এছাড়াও ছিলেন রুশদি রামলি, রাজালি আওয়াং, নুরুল হিদায়াহ মোহাম্মদ আমিন, পিইউ রহমাত, নরহেলমি আব ঘানি, মোহাম্মদ আসমাউই মুখতার, নোরাজমান ইসহাক, জাইনাল রশিদ, উস্তাজ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মুহাম্মদ হারিজ আদজরামি, মুহদ হাইকাল লুকমান জুলকেফলি ও তৌফিক মোহাম্মদ রাজিফ।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মিশনটি মূলত গাজায় মানবিক সাহায্য ও আন্তর্জাতিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে গঠিত। ইসরায়েলি নৌবাহিনীর হাতে আটক হওয়া এবং পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তাদের মুক্তি পাওয়া মালয়েশিয়ার মানবিক কূটনীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এই বিভাগের আরো খবর