ব্রেকিং:
‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় ফজরের ঠিক পরে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন—ফজরের পর ইন্তেকাল করেছেন বেগম খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর বেঁচে নেই...

মঙ্গলবার   ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১৬ ১৪৩২   ১০ রজব ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৫০১

মান্দায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র না দেয়ার অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৩  

নওগাঁর মান্দায় হাফিজা খাতুন ওরফে সুমি নামে এক শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র না পাওয়ায় চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। অপহরণ মামলার আসামী করায় চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী তার প্রবেশপত্র আটকে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হাফিজা খাতুন উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের চককানু গ্রামের কৃষক মো. আব্বাস আলীর মেয়ে।
শিক্ষার্থী হাফিজা খাতুন জানায়, তার বিদ্যালয়ের সব এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ এবং কোচিং করানোর কথা বলে রশিদ কোন রকম ছাড়াই কারো কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা,আবার কারো-কারো কাছ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা করে নেন প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী । অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মত সেও ফরম ফিলাপ এবং কোচিংয়ের জন্য প্রধান শিক্ষককে সাড়ে তিন হাজার টাকা দেয়। অথচ,পরীক্ষার আগে প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ মোতাবেক ছুটির দিনে ওই বিদ্যালয়ে কোচিং করতে গিয়ে সে গত ৮ ই মার্চ অপহরণের শিকার হন। বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানার পরেও কোন ব্যাবস্থা না নেওয়ায় গত ৯ই মার্চ ভিকটিমের বাবা মো. আব্দুল হামিদ মান্দা থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি করেন। এরপর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে গত ১০ মার্চ পূনরায় মান্দা থানায় একটি মামলা দায়ের করতে যান। কিন্তু থানা পুলিশ তাদের মামলাটি গ্রহণ না করায় ভিকটিমের বাবা মো. আব্দুল হামিদ বাধ্য হয়ে গত ১২ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল দমন-০২, নওগাঁতে মান্দা উপজেলার ঁেততুলিয়া ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে আলমগীর হোসেন (২২), কুসুম্বা ইউনিয়নের বিলকরিল্যা গ্রামের বাবু’র ছেলে টুটুল হোসেন (২১) ও আনোয়ারের ছেলে রানা (২২), শ্যামপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে আনোয়ার হোসেন (২৬), কুসুম্বা ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ি গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান (৩০) ও বাবু (২২) এবং একই গ্রামের ইসমাইল মন্ডলের ছেলে ইদ্রিস আলীসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১০৪ মিস/২০২৩ নারী ও শিশু। ঘটনার কয়েকদিন পর  থানা পুলিশ অপহৃত স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করতে পারলেও এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের এমন নিরব ভূমিকায় স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ওই মামলায় প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলীকে ৭নং আসামী করায় সব পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দিয়ে দিলেও হাফিজা খাতুন ওরফে সুমিকে প্রবেশপত্র দেননি প্রধান শিক্ষক।
হাফিজা খাতুন আরও জানায়, পরীক্ষার আগের দিন সকালে তার মা স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রবেশপত্র চাইলে তাকে বলা হয় যে, আপনি যে কাজ করেছেন; সেটি কি ঠিক করেছেন? আমার টাকা পয়সা বেশি আছে জন্য আপনি আমাকে মামলার আসামী করেছেন। আমাকে ওই মামলার আসামী করায় পুলিশ আমাকে দুই/তিনদিন বাড়িতে এসে তাড়িয়েছে। আমার অনেক টাকা লস হয়েছে। আপনি বাড়ি চলে যান। আপনার মেয়ের প্রবেশপত্র দেয়া যাবে না। আর দিলেও ও পাস করতে পারবে না। আর ও যদি পরীক্ষা দেয়, তাহলে এই স্কুলের কোন ছেলে মেয়েই পরীক্ষা দিবে না। এরই একপর্যায়ে তার মা প্রধান শিক্ষকের হাত-পা ধরে অনুরোধ করার পরেও তাকে প্রবেশপত্র দেননি। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য মোবারক আলীর বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানানোর পরেও কোন ব্যাবস্থা নেননি তিনি। এখন পর্যন্ত প্রবেশপত্র হাতে না পাওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি সে।
এ ব্যাপারে হাফিজা খাতুন জানায়, ‘ আমরা চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয় (এমপিওভূক্ত প্রতিষ্ঠান) এর  শিক্ষার্থী। অত্র বিদ্যালয়ে আমরা ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত নিয়মিতভাবে লেখাপড়া করেছি। করোনাকালীন সময়ে জিএসসি পরীক্ষায় আমরা সকলে অটোপাস করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে কোন সনদপত্র দেয়া হয়নি। এবারে ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায়  অত্র বিদ্যালয় থেকে প্রায় ১১৭ জন পরীক্ষার্থী ছিলাম। ওই স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমাদের ১৩ জন শিক্ষার্থীদের কাউকে উপবৃত্তির টাকাও দেয়া হয়নি। শুধু আমিই না,আমার মত আরো ১৩ জন পরীক্ষার্থীকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অন্য স্কুলে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। চকচম্পক ছোট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আমাদের ১৩ জন ছাত্রীর নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে সেসব বিষয়ে আমরা কেউ জানতাম না। আমাদের ১৩/১৪ জনের মধ্যে  ৫ জন (মরিয়ম,উর্মিলা,সীমা,হিরা এবং সাহরিয়া) বিজ্ঞান বিভাগের  এবং ৮ জন (হাফিজা আক্তার ওরফে সুমি, ইসরাত জাহান ইভা,সুমি-২, তাসমিন,রাজিয়া সুলতানা রিয়া, রাজ্জুমা এবং নাহিদা)মানবিক বিভাগের ছাত্রী। পরীক্ষার আগেরদিন প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিতে গিয়ে তার বান্ধবীরা জানতে পারে যে, তাদেরকে কাঁশোপাড়া ইউনিয়নে ডাক্তারের মোড়ের পূর্বে চকউলী এলাকার চকচম্পক ছোট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে (মান্দার আত্রাই নদী পাড় হয়ে) গোটগাড়ি শহীদ মামুন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের ১১২ নং রুমে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। চকচম্পক ছোট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ওই ১৩ জন ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন এবং ফরম ফিলাফ করে দিয়েছে।  অথচ, ওই ১৩ জন ছাত্রীর কাছ থেকেও ফরম ফিলাপের জন্য সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। আর বাঁকি ১০৪ জন এই স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবে মান্দার প্রসাদপুরে “ মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিবে। এই খবর জানার পর তাদের ১৩ জনের মধ্যে মিতু নামে একজন কেন্দ্র দূরে হওয়ার অভিমানে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। উর্মিলা নামে আরেক বান্ধবী ৯ মাসের অন্তঃস্বত্তা হওয়া স্বত্ত্বেও অনেক কষ্ট করে (মান্দার আত্রাই নদী পাড় হয়ে) প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে গোটগাড়ি শহীদ মামুন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। অনেক ভোগান্তি সহ্য করার পরেও সবাই পরীক্ষা দিচ্ছে। অথচ, অপহরণ মামলার আসামী করায় আমার এডমিট কার্ড আটকিয়ে রেখে আমাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হলো না।  যা চরম অন্যায় । এর আগেও একইভাবে প্রধান শিক্ষক অনেক শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আমি তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
হাফিজার মা তহমিনা খাতুন বলেন, ‘ অপহরণ মামলার আসামী করায় আমার মেয়ের এডমিট কার্ড আটকিয়ে রেখে তাকে পরীক্ষা দিতে দিলো না।  ওর জীবনডাই শেষ। এক বছরের জন্য ও পিছিয়ে গেল। এই ক্ষতি কে পোষাবে আমাদের। আমি সরকারের কাছে ওই শিক্ষকের বিচার চাই।’
হাফিজার ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘ আমরা গরীব মানুষ। আমরা কোন ঝামেলায় জড়াতে চাই না। অপহরণ মামলায় প্রধান শিক্ষককে ৭ নং আসামী করার জন্যই আমার বোনের সাথে এমনটি করা হয়েছে। আমার বোনের সাথে যেটা করা হয়েছে, সেটি চরম অন্যায়। আমরা এর বিচার চাই।
হাফিজার দুলাভাই মো. আবু হাসান মাহবুর রহমান ওরফে রিপন বলেন, সে পরীক্ষা না দিতে পারায় তার ভবিষ্যৎটা অন্ধকার হয়ে গেল। হাফিজাকে অপহরণের ঘটনায় আমাকে ১ নং স্বাক্ষী করায় প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে সম্প্রতি আমার উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। আমি সরকারের কাছে প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলীর সুষ্ঠ বিচার চাই এবং তার প্রত্যাহার দাবি করছি।’
মানবিক বিভাগের ইসরাত জাহান ইভা, তাসমিন ও  বিজ্ঞান বিভাগের উর্মিলা এবং হিরাসহ অন্যান্য পরীক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরীক্ষার আগেরদিন প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিতে গিয়ে আমরা জানতে পারি যে, আমাদেরকে কাঁশোপাড়া ইউনিয়নে ডাক্তারের মোড়ের পূর্বে চকউলী এলাকার চকচম্পক ছোট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে (মান্দার আত্রাই নদী পাড় হয়ে) গোটগাড়ি শহীদ মামুন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের ১১২ নং রুমে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। বিষয়টি জানার আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদেরকে জানানো হয় যে, এটা ভুল হয়ে গেছে। এখনতো আর ঠিক করার সময় নেই। তন্মধ্যে,মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে এতো পরীক্ষার্থীর জায়গা হবে না। এই ১৩ জনকে (মান্দার আত্রাই নদী পাড় হয়ে) গোটগাড়ি শহীদ মামুন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে আর অন্যান্যরা প্রসাদপুর “ মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিবে। “এতে কোন সমস্য নেই! যেই স্কুল থেকেই পরীক্ষা দিই না কেনো, সার্টিফিকেটের মান একই হবে । এসব মিথ্যে বাহানা দিয়ে আমাদের সাথে যেটা করা হয়েছে,সেটা নেহায়েত অন্যায়। এর আগেও আমাদের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী অনেক শিক্ষার্থীর সাথে এমনটি করেছেন। শুধু তাই না, উনি সরকারি ছুটির দিনে (শুক্রবার, শনিবার) স্কুলে ক্লাশ করতে ও প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন। এছাড়াও ক্লাশে অনুপস্থিত থাকলে, স্কুল ড্রেস না পড়লে বাপ- মা তুলে গালিগালাজ ও মারপিটসহ জরিমানা আদায় করা এবং রমজান মাসে ছুটির সময় টাকার বিনিময়ে কোচিং করিয়ে থাকেন। উনার বিরুদ্ধে অনিয়মের শেষ নেই। কিন্তু উনি প্রভাবশালী হওয়ায় উনার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
চকচম্পক ছোট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান থেকে এবারে ২৪ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তবে, হাফিজা আক্তার ওরফে সুমি নামের কোন শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র না পাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।’
চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রবিবারে প্রতিষ্ঠানে আসেন। সাক্ষাতে কথা হবে।
মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ আলম সেখ বলেন,‘বিষয়টি অবগত নয়। তবে, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রসাশনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ব্যাপারে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, ‘বিষয়টি অবগত নয়। তবে,অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এই বিভাগের আরো খবর