বুধবার   ২৯ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ১৪ ১৪৩২   ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৬

ভাইরাল বাজি ‘কার্বাইড গান’ কেড়ে নিচ্ছে শিশুদের দৃষ্টি

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৫  

দীপাবলির উৎসবের নেশায় এবার ভারতে হট্টগতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে প্লাস্টিক পাইপে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ভরে তৈরি ‘কার্বাইড গান’ নামে এক ধরনের ঘরে তৈরি বাজি। প্রচলিত আতশবাজির চেয়ে সস্তা এবং ভিন্ন আউটপুট, আলোকঝলক ও বিস্ফোরণে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হলেও এর ফল ভয়াবহ, এর ব্যবহারে ভারতজুড়ে  শতাধিক মানুষ আহত এবং বহু কিশোর-কিশোরীর দৃষ্টি নষ্ট হচ্ছে।

 


ঘরে তৈরি এই বন্দুকে সাধারণ প্লাস্টিকের পাইপে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ভরা হয়; ফাটার সময় তা বিস্ফোরণের মতো শব্দ ও ঝলকানি উৎপন্ন করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বাজি সময়মতো বিস্ফোরিত হয়না,  দেরিতে কিংবা অনিয়মিতভাবে বিস্ফোরিত হওয়ায় ধর্য্য হারিয়ে দেখতে পাইপে মাথা ঢুকালে মুহূর্তে মারাত্মক বিস্ফোরণ ঘটে। এতে সরাসরি শক ও রাসায়নিক আঘাত কণার আকারে চোখে ঢুকে কর্নিয়া ও অন্যান্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে।


মধ্যপ্রদেশের ভোপালে এ ধরনের বিস্ফোরণে একশরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন; তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ জনের চোখে অপারেশন করা হয়েছে। বিহারের পাটনায় চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ওই রাজ্যেও কমপক্ষে ১৭০ জন আহত, এর মধ্যে প্রায় ৪০ জনের চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে—তবে অনেক কেস অনুলিপি-নিরিক্ষিত থাকায় প্রকৃত সংখ্যা বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

 

চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতগুলো তিন রকম দেখা যাচ্ছে, হালকা অগ্ন্যুৎপাদনমূলক জ্বালা, মধ্যমানের কর্নিয়ার ক্ষত এবং মারাত্মক আঘাতে কর্নিয়া ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অস্থায়ী বা স্থায়ী অন্ধত্ব। যথাসময়ে অপারেশন করলে অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব, কিন্তু তা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়সাপেক্ষ। ভারতের অনেক  চিকিৎসক এধরনের রাসায়নিক ও শক-আঘাতের স্তরের কেস আগে কখনও দেখেননি।

 

কার্বাইড কেন সহজলভ্য?


ক্যালসিয়াম কার্বাইড কৃষিক্ষেত্রে ফল পাকানোর জন্য বা পোকা তাড়ানোর কাজে নিয়মিত ব্যবহার করা হয়; ফলে এটি নিয়ন্ত্রিত অবস্থায়ও সহজে পাওয়া যায়। কিছুকাল আগে পর্যন্ত অনেকেই ‘কার্বাইড গান’ নামটি জানতও না, কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘরে তৈরি বাজির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর উত্তর ভারতের বাজারে এর চাহিদা ও বিক্রয় অনেক বেড়ে গিয়েছে। ভিডিওগুলিতে অল্পবয়সীরা নিজে বানিয়ে বিস্ফোরণের  দৃশ্য দেখায়; অনেকেই  তা ‘এক্সপেরিমেন্ট’ বা ‘ডিআইওয়াই প্রোজেক্ট’ বলে ট্যাগ করে।

 

 

বানানো ও কেনার খরচ তুলনামূলকভাবে খুব কম হওয়ায় কিশোরদের কাছে এটা আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। প্রচারভিত্তিক ভিডিওতে শব্দ ও আলোর প্রভাব দেখিয়ে এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কৌতূহলবর্ধক হিসাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

প্রতিক্রিয়া ও আইনগত পদক্ষেপ


মধ্যপ্রদেশসহ কয়েকটি রাজ্য ইতোমধ্যেই এই ধরনের ঘরে তৈরি বিস্ফোরক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং কয়েকজন বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্ষু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে নিষেধাজ্ঞা, ক্যালসিয়াম কার্বাইডের বিক্রয়-নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানাচ্ছেন। অল ইন্ডিয়া অপথালমোলজিকাল সোসাইটি বলছে, এটি ‘জাতীয় স্তরের সমস্যা’ হিসেবে দেখা উচিত এবং নির্মাতাদের ধরতে অভিযান চালাতে হবে।

 


দৈহিক আঘাত এবং দৃষ্টিশক্তি হারানোর ফল এতটাই গুরুতর যে উৎসব-উদযাপনের কৌতূহলই জীবনজুড়ে ক্ষতি ডেকে আনছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিও ও সস্তা হাতিয়ারের ফাঁদ থেকে বাঁচতে পরিবারের কাছে বিশেষ সতর্কতা ও সরকারি পর্যায়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণই একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বলে চিকিৎসকদের অভিমত।

এই বিভাগের আরো খবর