শুক্রবার   ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫   ভাদ্র ২০ ১৪৩২   ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৪

ডাকসু ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক কাঠামোয়, এখন অনেকটা কর্তৃপক্ষনির্ভর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫  

জাতীয় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ডাকসুর ভিপি ছিলেন।

সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচন নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জেসমিন পাপড়ি।

মাহমুদুর রহমান মান্না: ডাকসু মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হলেও এর প্রভাব সারাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে পড়ে। যদিও এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি ইউনিয়ন, তবে দেশের ছাত্রসমাজ একে একটি গাইডলাইন হিসেবে দেখে। এ নির্বাচন ছাত্রদের রাজনৈতিক চর্চা, নেতৃত্ব গঠনের বড় প্ল্যাটফর্ম।


সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই বদলায়। আগে ডাকসু ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে। এখন সেটা অনেকটা কর্তৃপক্ষনির্ভর হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিরাজনীতিকরণ করার প্রবণতা দেখা যায়

মাহমুদুর রহমান মান্না: এবারের নির্বাচনে তেমন কোনো উৎসাহ বা ‘হাইপ’ তৈরি হয়েছে বলে মনে হয় না। আমাদের সময়, বা তার আগের সময়ও—যখন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, রাশেদ খান মেনন, আ স ম আব্দুর রব নির্বাচন করেছেন তখন ডাকসু নির্বাচন ছিল অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ও আলোচিত।


এখন তো স্বতন্ত্র, নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় গুপ্ত রেখে নির্বাচন করছে। এখন আর আগের মতো সেই হাইপ দেখছি না। তবে অনেক বছর পর ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে এটাই ইতিবাচক দিক। ডাকসু সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। সেই হিসেবে ফোকাস যা পাওয়ার কথা, সেই ফোকাসটা পাচ্ছে।


মাহমুদুর রহমান মান্না: আমি দুবার ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছি। প্রতিবারই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ওবায়দুল কাদের।


আমার প্রথম নির্বাচনে আমার দল (জাসদ ছাত্রলীগ) পাশে ছিল, দ্বিতীয়বার ছিল না। কিন্তু তারপরও ডাকসু নির্বাচন তখন রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

যদিও ২০২৪ সালের আন্দোলনে ছাত্রদের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ছিল, তবে সামগ্রিকভাবে এখন আর ছাত্ররা আগের মতো আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে নেই

তখনকার ডাকসু নির্বাচন শুধু ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ ছিল না, দেশজুড়ে একটা আলোচনা, উৎসাহ তৈরি হতো। অথচ এখনকার ডাকসু নির্বাচন নিয়ে দেশের কোথাও তেমন কোনো উচ্ছ্বাস বা আলোড়ন দেখা যাচ্ছে না।

তখন সারাদেশের ছাত্রসমাজ এ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দেখাতো। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্রনেতারা এসে অংশ নিতেন। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলতেন, এমনকি অভিভাবকরাও এতে যুক্ত থাকতেন। ছেলেমেয়েদের কাকে ভোট দেওয়া উচিত সে পরামর্শ দিতেন।


তখন বটতলা কিংবা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রসভা হতো, মিছিল হতো। প্রচারণা হতো রুমে রুমে, ক্লাসে ক্লাসে। নারীদের অংশগ্রহণও ছিল উল্লেখযোগ্য। এখন তো মিছিল-মিটিং নেই বললেই চলে।


মাহমুদুর রহমান মান্না: দেখুন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই বদলায়। আগে ডাকসু ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে। এখন সেটা অনেকটা কর্তৃপক্ষনির্ভর হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিরাজনীতিকরণ করার প্রবণতা দেখা যায়।


তবে এখনকার ছাত্রছাত্রীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞাননির্ভর। পুরো বিশ্বের জ্ঞান তাদের হাতের মুঠোয়। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে তারা গোছানো ও সচেতনভাবে কথা বলতে পারে। সাংস্কৃতিক দিক থেকেও তারা উন্নত।

যদিও তখনকার দিনে ডাকসু নির্বাচন ছিল রাজনৈতিকভাবে অনেক জমজমাট। কারণ, ডাকসু মূলত একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এটি বিখ্যাত হয়েছে—স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, শিক্ষা আন্দোলন, এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ নানা ঐতিহাসিক ঘটনার নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে। এ দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, তার প্রায় সবকটিতেই ডাকসুর নেতারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

কিন্তু এখন সেই ভূমিকা আর দেখা যাচ্ছে না। ২০২৪ সালের আন্দোলনে ছাত্রদের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ছিল, তবে সামগ্রিকভাবে এখন আর ছাত্ররা আগের মতো আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে নেই।

ডাকসু একা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত পরিবর্তন আনতে পারবে না। এটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের সম্মিলিত দায়িত্ব

জাগো নিউজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গুণগত মান অনেকটাই নিম্নমুখী—এ কথা প্রায়শই শোনা যায়। আপনার কী মনে হয়, এ অবস্থার পরিবর্তনে ডাকসুর মতো একটি প্রতিষ্ঠান কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?

মাহমুদুর রহমান মান্না: ডাকসু একা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত পরিবর্তন আনতে পারবে না। এটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের সম্মিলিত দায়িত্ব। কয়েক বছর ধরে আমরা দেখেছি—দলীয়করণ, অতিমাত্রায় পাস করানো, গবেষণায় বরাদ্দ কমে যাওয়া, শিক্ষক নিয়োগে পক্ষপাতিত্ব—এসব শিক্ষার মান ধ্বংস করেছে। এছাড়া হলে ‘গেস্টরুম কালচার’ এবং বুলিং সংস্কৃতি শিক্ষার পরিবেশকে আরও খারাপ করেছে।

এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে ডাকসুসহ সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।


মাহমুদুর রহমান মান্না: গত ১৫ বছর ছাত্রলীগ ডাকসুর রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। কিন্তু তারা কী পরিবর্তন আনতে পেরেছে? বাস্তবতা বলছে—তেমন কোনো গুণগত উন্নয়ন হয়নি। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

ছাত্রশিবির ২০২৪ সালের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, তাই তারা আলোচনায় এসেছে। তবে কারা নেতৃত্বে আসবে, সেটা শিক্ষার্থীদের বিচক্ষণতার ওপর নির্ভর করে। তারা যেন চিন্তা-ভাবনা করে, দেশের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণ বিবেচনায় ভোট দেয়।

এই বিভাগের আরো খবর