রোববার   ২৪ আগস্ট ২০২৫   ভাদ্র ৮ ১৪৩২   ২৯ সফর ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৯৩

কিয়ামতের দিন নবী ও নবীর উম্মতেরা যে প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২৪  

প্রতি যুগে সব মানুষের হেদায়েতের জন্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, 

 وَ لَقَدۡ بَعَثۡنَا فِیۡ کُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَ اجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ ۚ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ هَدَی اللّٰهُ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَیۡهِ الضَّلٰلَۃُ ؕ فَسِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ فَانۡظُرُوۡا کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُکَذِّبِیۡنَ

আর অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর। অতঃপর তাদের কিছু সংখ্যককে আল্লাহ্‌ হিদায়াত দিয়েছেন আর তাদের কিছু সংখ্যকের উপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল; কাজেই তোমরা যমীনে পরিভ্রমণ কর অতঃপর দেখে নাও মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম কী হয়েছে। (সূরা নাহল, (১৬), আয়াত : ৩৬)

অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 

رَبَّنَا وَ ابۡعَثۡ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِکَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ

হে আমাদের রব! আর আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসূল পাঠান, যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তিলাওয়াত করবেন; তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (সূরা বাকারা, (২), আয়াত, ১২৯)

নবী-রাসূলগণ আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে পালন করতেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কখনো তৎকালীন যুগের খোদাদ্রোহী শাসক একত্ববাদের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে আবার কখনো নবীর উম্মতের দুষ্ট লোকেরা তাঁর আহ্বান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং তাকে গালিমন্দ করেছে। এরপরও নবী-রাসূলগণ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনে তারা ত্রুটি করেননি।

পৃথিবীতে নবীর উম্মতেরা নবীর একত্ববাদের আহ্বান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে এর জবাবদিহীতা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের নবীদেরকে জিজ্ঞেস করবেন তাঁরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কতটা পালন করেছেন একইসঙ্গে নবীর উম্মতকেও জিজ্ঞেস করা হবে তাঁরা নবীর আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল কি না?

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

 فَلَنَسۡـَٔلَنَّ الَّذِیۡنَ اُرۡسِلَ اِلَیۡهِمۡ وَ لَنَسۡـَٔلَنَّ الۡمُرۡسَلِیۡنَ

অতঃপর যাদের কাছে রাসূল পাঠানো হয়েছিল অবশ্যই তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করব এবং রাসূলগণকেও অবশ্যই আমি জিজ্ঞেস করব। (সূরা আনফাল, আয়াত : ৬)

অর্থাৎ কেয়ামতের দিন সর্বসাধারণকে জিজ্ঞেস করা হবে, আমি তোমাদের কাছে রাসূল ও গ্রন্থসমূহ (আসমানী কিতাব) প্রেরণ করেছিলাম, তোমরা তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করেছিলে? নবীদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, যেসব বার্তা ও বিধান দিয়ে আমি আপনাদেরকে প্রেরণ করেছিলাম, সেগুলো আপনারা নিজ নিজ উম্মতের কাছে পৌছিয়েছেন কি না? 

এ আয়াতে রাসূলদেরকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে এবং প্রেরিত লোকদেরকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে তা বর্ণনা করা হয়নি। তবে কোরআনের অন্য জায়গায় সেটা বর্ণিত হয়েছে। যেমন প্রথমটি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন—

‘স্মরণ করুন, যেদিন আল্লাহ রাসূলগণকে একত্র করবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন, আপনারা কি উত্তর পেয়েছিলেন? (সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত : ১০৯) আর দ্বিতীয়টি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, আর সেদিন আল্লাহ এদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা রাসূলগণকে কী জবাব দিয়েছিলে? (সূরা আল-কাসাস, আয়াত : ৬৫)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন যে, তিনি মানুষদেরকে তাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, ‘কাজেই শপথ আপনার রবের! অবশ্যই আমি তাদের সবাইকে প্রশ্ন করবই, সে বিষয়ে, যা তারা আমল করত। (সূরা আল-হিজর, আয়াত : ৯২–৯৩)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে উপস্থিত জনতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেয়ামতের দিন আমার সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে যে, আমি আল্লাহর বাণী পৌছিয়েছি কি না? তখন তোমরা উত্তরে কি বলবে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা বলব, আপনি আল্লাহর বাণী আমাদের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন এবং আল্লাহ-প্রদত্ত দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছেন। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন। (মুসলিম, হাদিস : ১২১৮)

অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা আমাকে জিজ্ঞেস করবেন, আমি তার বাণী তার বান্দাদের কাছে পৌঁছিয়েছি কি না। আমি উত্তরে বলব, পৌছিয়েছি। কাজেই এখানে তোমরা এ বিষয়ে সচেষ্ট হও যে, যারা এখন উপস্থিত রয়েছ, তারা যেন অনুপস্থিতদের কাছে আমার বাণী পৌছে দেয়। (মুসনাদে আহমাদ : ৫/৪)